কলকাতায় উদ্ধার মাংসের টুকরোগুলো এমপি আজীমেরই: ডিবিপ্রধান

Posted on May 30, 2024

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : কলকাতায় সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরোগুলো এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের বলে ধারণা করছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। বাংলাদেশ ও ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের বক্তব্য এবং পারিপার্শ্বিক অন্যান্য ঘটনা বিবেচনায় এমনটাই ভাবছে তারা।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ কলকাতা থেকে ফিরে সাংবাদিকদের কাছে ডিবির এ মনোভাবের কথা জানান।

ডিবিপ্রধান বলেন, আমরা কলকাতা পুলিশকে অনুরোধ করেছিলাম সুয়ারেজ লাইন ও সেপটিক ট্যাংক দেখার জন্য। সেটা করা হয় এবং সেখান থেকেই ভিকটিমের মরদেহের কিছু টুকরো উদ্ধার করা গেছে। ভারতীয় পুলিশ ফরেনসিক ও ডিএনএ পরীক্ষা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত তথ্য জানাবে। আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করি, স্বাভাবিক ফ্লাশের মাধ্যমে মাংসগুলো সেখানে যায়নি। তাই আমরা মনে করছি, মরদেহের খণ্ডাংশগুলো এমপি আনোয়রুল আজিমের।

হারুন অর রশীদ বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজিমের মরদেহ বা মরদেহের অংশ বিশেষ না পাওয়া গেলে তদন্তকারী কর্মকর্তার সুরতহাল, ভিসেরা ও মেডিকেল রিপোর্ট দিতে বেগ পেতে হয়। এগুলো না পাওয়া গেলে মামলাটি নিষ্পত্তি করাও কঠিন হয়ে যায়। আমরা সেখানে গিয়ে আমাদের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের দেওয়া তথ্য পুনরায় যাচাই বাছাই করেছি। এছাড়া কলকাতায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি যে তথ্য দিয়েছে তাও যাচাই-বাছাই করেছি। কলকাতার সিআইডিকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং তথ্য-উপাত্ত মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি।

উদ্ধার হওয়া টুকরো বাদে এমপি আনোয়ারুলের দেহের বাকি অংশ উদ্ধার করা কঠিন হয়ে যাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী তার দেহের বাকি অংশ পাওয়া যেতে পারে। আমাদের কাছে গ্রেপ্তার হওয়া একজন আসামি জানিয়েছে, সে রাতের বেলায় ঘন ঘন বাথরুমের ফ্লাশের শব্দ পেয়েছে। তখন আমাদের মনে হয়েছে মরদের টুকরোগুলো ফ্লাশ করা হয়েছে।

উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরোগুলোর ডিএনএ টেস্ট কখন হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, কলকাতা পুলিশ এটা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে হবে বলে আমাদের জানিয়েছে।

কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া বাকি আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করা গেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিয়াম নামে এক অভিযুক্ত বর্তমানে নেপালের কাঠমান্ডুতে রয়েছে। বিষয়টি নেপাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আমরাও কাঠমান্ডুতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসের সঙ্গে আনঅফিসিয়ালি যোগাযোগ রাখছি। আর এই ঘটনার মূল মদদদাতা শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তিনি সেই দেশের নাগরিক। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বলেছি। আমাদের আইজিপিও বিষয়টি ইন্টারপোলকে জানিয়েছেন। এছাড়া আমরাও আন-অফিশিয়ালি বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কাছে সহযোগিতা চাইব।

হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে কিছু জানা গেছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পেছনে তো অবশ্যই একটি মোটিভ রয়েছে। বাংলাদেশে হত্যা করলে হত্যাকারীদের সমস্যা হবে, তাই তারা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনকে বেছে নেয়। তারা এমনভাবে পরিকল্পনা করল যাতে করে তাকে হত্যার পর তার মরদেহ না পাওয়া যায়। অভিযুক্তদের চেষ্টা ছিল বাংলাদেশি এবং ভারতীয় তদন্তকারীদেরকে বিভ্রান্ত করার। তারপরও এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে আরও কোনো মোটিভ রয়েছে কি না তা আমরা তদন্ত করে দেখছি।

হত্যাকাণ্ডের মোটিভের জট খুলতে আর কতদিন সময় লাগতে পারে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মামলাটাকে আমরা শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত আছে তাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের। বাকি আসামি যারা আছেন তাদের আমরা দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের মুখোমুখি দাঁড় করাব।

উল্লেখ্য, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান সংসদ সদস্য আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজিম।

বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পরে, গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনার নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। বুধবার হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জিভা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে সংসদ সদস্য আনার খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।

হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার অভিযোগে গ্রেফতার সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাহাজি ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন দেশের আদালত। অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদকে ১২ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন ভারতের বারাসাতের আদালত।