উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগ সহনীয় ঘর করে দেয়া হবে: প্রধানমন্ত্রী

Posted on May 30, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগ সহনীয় ঘর করে দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ সব সময় পাশে থাকবে, যা যা প্রয়োজন করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের যত বাঁধের ক্ষতি হয়েছে সেগুলো পুনর্নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে যত মানুষের ঘর ভেঙে গিয়েছে ক্ষতি হয়েছে সেগুলো সব আমি করে দেব। ক্ষতিগ্রস্ত সবার হিসাব করা হচ্ছে, আজ বিকেলে সবাইকে নিয়ে বসব।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজ মাঠে ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা আছে বলেই দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি হচ্ছে, দুর্যোগ মোকাবেলা সম্ভব হচ্ছে এবং মানুষের পাশেও দাঁড়ানো সম্ভব হচ্ছে। ক্ষমতায় আসার পর দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এই অঞ্চলের (উপকূলের) মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে জীবনযুদ্ধে লিপ্ত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবেই, সেটাকে মোকাবিলা করে মানুষের জীবনমান রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য এবং সেটাই আমরা করে যাচ্ছি।

সরকারের ওপর সবাইকে আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, দুর্যোগ কাটিয়ে সবাই যেন নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করতে পারে সেসব ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে সমসময় মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কৃষকদের ক্ষতিপূরণে সার-বীজসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই দুর্যোগে যারা সহযোগীতা করেছেন, মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, আধা সামরিক, সামরিক কর্মকর্তা, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে আমি ধন্যবাদ দেই। আমরা চাই এই অঞ্চলের মানুষ যেন দুর্যোগ থেকে মুক্তি পায়। এই অঞ্চল সবসময় দুর্যোগ প্রবন, তাই আমি আজ আপনাদের পাশে হাজির হয়েছি। আমি আসার সময় ভালো ভাবে দেখেছি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। উপকূলীয় এলাকায় আমি আপনাদের দুর্যোগ সহনীয় ঘর করে দিয়েছি এবং আরও করে দেবো। বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করেছিল, দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিল, মানুষের কল্যানেই তিঁনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন।

কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বাবু নির্মল নন্দীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দক্ষিনাঞ্চল সবসময় অবহেলিত ছিল। আমি আপনাদের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, শের-ই-বাংলা নেভাল বেইজ করে দিয়েছি। নিত্যপন্য মানুষ যাতে সহজে কিনতে পারে সেজন্য আমি ফ্যামিলি কার্ড করে দিয়েছি। দেশের মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, এবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মান করবো।

উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সম্পাদক অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল আলম ও সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রান বিতরন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান প্রতিমন্ত্রী অধ্যক্ষ মো. মহিব্বুর রহমান, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক এমপি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জাতীয় সংসদের সাবেক চীপ হুইপ আসম ফিরোজ এমপি, মোসা: শাম্মি আখতার এমপি, আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল হাফিজ মল্লিক এমপি, আওয়ামীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান প্রমূখ। এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী সদর আসনের এমপি এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত।

সমাবেশ বক্তব্যের আগে তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ নেতা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে তিনি পৌর শহরের সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজ মাঠে মঞ্চে উপস্থিত হন।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ মে রাত থেকে ২৭ মে শেষ রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এর প্রভাবে ঝড়, বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে দেশের বিভিন্ন জেলার মতো উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

পটুয়াখালী জেলায় ৩ লাখ ২৭ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রায় ২৩৫টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১ হাজার ৮৬৫টি আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে। এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষি খাতে ২৬ কোটি টাকা এবং মৎস্য খাতে ২৮ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়।

আরও পড়ুন:

ঈদের আগে-পরে ১২ দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে সিএনজি স্টেশন

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইএমওর সেক্রেটারি জেনারেলের সাক্ষাৎ

বাংলা‌দে‌শিদের জন্য ১২ ক্যাটাগরির ভিসা চালু কর‌ছে ওমান