স্ত্রী-সন্তানসহ বেনজীর আহমেদকে দুদকে তলব

Posted on May 28, 2024

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তলব করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আগামী ৬ জুন তাদের স্বশরীরে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ মে) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে তলব করা হয় বলে জানা গেছে।

এর আগে সোমবার (২৭ মে) দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, বেনজীর আহমেদকে গ্রেফতার করা হবে কি না-তা তদন্ত কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তিনি আরো বলেন, প্রয়োজন মনে করলে আদালতে বেনজীর আহমেদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চাইবেন তদন্ত কর্মকর্তা।

তদন্তে যদি আরও অপরাধলব্ধ সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায় তাহলে সেগুলো জব্দে আদালতে আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি।

এর আগে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের ৮৩টি জমির দলিল ও ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও তার সিকিউরিটিজের (শেয়ার) টাকা অবরুদ্ধ করা হয়। এ আদেশ আমলে নিয়ে শিগগিরই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিম বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করবে।

গত ২৬ মে সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদে, তার স্ত্রী, ও মেয়েদের নামে থাকা আরও ১১৯টি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেয় আদালত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে— রাজধানীর গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট বাড়ি, সাভারের একটি জমি, বাকি ১১৪টি সম্পত্তি রয়েছে মাদারীপুর জেলায়।

এছাড়া বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মির্জা ও ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে শেয়ার বাজারে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট বা বিও হিসাব অবরুদ্ধ রাখতে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) আদালতের এ আদেশের পর পুলিশ ও র‍্যাবের এই সাবেক কর্মকর্তা এবং তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের অবৈধ পন্থায় অর্জিত বিপুল সম্পদ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ মার্চ একটি পত্রিকায় বেনজীরের ঘরে ‘আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, যেখানে তার অর্থ-সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বেনজীরের বিপুল সম্পদের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র। এ ছাড়া তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছের এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানে রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠা জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি।

এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর পুলিশের বহুল বিতর্কিত কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

একজন নাগরিক হিসেবে এ আবেদন করেছেন জানিয়ে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘সবাইকে আল্লাহ বাঁচাইছে, বেনজীর সাহেব বেশিদিন সময় পাননি। আর কিছুদিন সময় পেলে গোপালগঞ্জ কিনে নিতেন। পুলিশে যারা অসৎ হবেন, বেনজীর সাহেবকে আদর্শ ধরে নেবেন।’

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‍্যাব এবং র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নাম আছে। তখন তিনি আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন।