নকল ডায়াবেটিস টেস্টিং স্ট্রিপস ধ্বংসে হাইকোর্ট নির্দেশ

Posted on May 21, 2024

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : ফার্মা সলিউশন নামে বাজারে থাকা নকল ডায়াবেটিস টেস্টিং স্ট্রিপস ধ্বংসে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (২০ মে) এ সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এছাড়া ফার্মা সলিউশনের নকল ডায়াবিটিস টেস্টিং স্ট্রিপস সাতদিনের মধ্যে ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে ডায়াবেটিস পরীক্ষার নকল এসব স্টিপস প্রস্তুত ও বিক্রি বন্ধে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করা হয়েছে। নকল স্টিপস তৈরিকারক ফার্মা সলিউশন কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না-রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। ডেপুটি এটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় বাসসকে এ তথ্য জানান।

রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

রিটের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির মোড়কে থাকা নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপস (আকু চেক) ধ্বংস করতে ফার্মা সলিউশনস বাংলাদেশ লিমিটেডকে (পিএসবিএল) প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও রিট আবেদনকারী পক্ষের (ক্যাব) প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ওই স্ট্রিপগুলো (ব্যাচ নম্বর–২৬০৭৬১৫৬) ধ্বংস করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে সাতদিনের মধ্যে আদালত প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে ‘নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপ-সংক্রান্ত সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি’ শীর্ষক একটি বিজ্ঞপ্তি দেয় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এতে বলা হয়, বিভিন্ন ফার্মেসিতে নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপস পাওয়া যাচ্ছে। বাজার তদারকিতে প্রাপ্ত ফার্মা সলিউশনস বাংলাদেশ লিমিটেডের বাজারজাত করা সব ডায়াবেটিস স্ট্রিপ (আকু চেক) ব্যাচ নম্বর–২৬০৭৬১৫৬ এবং সব ধরনের নকল স্ট্রিপ, ওষুধ, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ক্রয়-বিক্রয়, প্রস্তুত, সরবরাহ ও মজুত করা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করা হয়। নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপস বিক্রি প্রতিরোধে গত ১১ ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তরে এক মতবিনিময় সভা হয়, যেখানে নকল স্ট্রিপসের প্রসঙ্গ আলোচনায় ওঠে।

নকল ওই স্ট্রিপস সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে গত ৩ মার্চ আবেদন করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এতে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে আইনি (লিগ্যাল) নোটিশ পাঠায় ক্যাব। এতে ফল না পেয়ে ১৯ মে ক্যাবের পক্ষে রিটটি করা হয়।

নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপস (আকু চেক) ফার্মা সলিউশনস বাংলাদেশ লিমিটেড (পিএসবিএল) বাজারে ছাড়ে। এই নকল স্ট্রিপস লাজ ফার্মার কাকরাইল শাখায় ধরা পড়ে। পিএসবিএলের ই-মেইল অর্ডারের পরিপ্রেক্ষিতে ‘প্রিন্ট ওয়ান’ নামের ছাপাখানা তিন হাজার ৫০০টি নকল মোড়ক প্রিন্ট করে দেয়, যা জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার অভিযানে ধরা পড়ে। নকল স্ট্রিপ সরবরাহ করার কথা পিএসবিএল স্বীকার করেছে। যদিও পিএসবিএল ৮ ফেব্রুয়ারি তার বিপণন প্রতিনিধিদের কাছ থেকে স্টেস্ট স্ট্রিপস (আকু চেক) প্রত্যাহারের চিঠি দেয়। তবে সাড়ে তিন হাজারের মধ্যে স্ট্রিপসের কতগুলো প্যাকেট বিক্রির জন্য বিতরণ করা হয়েছে, কতটি মজুত আছে ও কতটি প্রত্যাহার করা হয়েছে-এমন কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি। এমনকি জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, যে কারণে ক্যাব রিটটি করে বলে জানান আইনজীবী।

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকেও এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিটটি আনা হয়।