দেশের আর্থিক খাতের প্রথম প্রতিষ্ঠান ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি বা আইপিডিসি। বেসরকারি খাতের শিল্পোন্নয়নে অর্থায়নের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পর নতুন করে রি-ব্র্যান্ডিং শুরু করতে যাচ্ছে এটি। আর্থিক খাতের অবস্থা ও আইপিডিসির বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল ইসলাম।
প্রশ্ন: আমরা জানি, আইপিডিসি নতুন করে রি-ব্র্যান্ডিং শুরু করতে যাচ্ছে। সেটি কেন?
মমিনুল ইসলাম: আইপিডিসি বাংলাদেশের আর্থিক খাতের প্রথম কোম্পানি হিসেবে ১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু করে। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বেসরকারি খাতের শিল্পোন্নয়ন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেসরকারি শিল্প খাতের উন্নয়নে আইপিডিসি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পরবর্তী সময়ে এসে আমরা দেখছি বাংলাদেশে অন্য অনেক খাতেও অর্থের বিপুল চাহিদা তৈরি হয়েছে। যেমন গৃহনির্মাণ খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, নারীর ক্ষমতায়ন, তরুণ উদ্যোক্তা শ্রেণিতে ঋণের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা বেড়েছে। এসব ক্ষেত্রেও আর্থিক খাতের ভূমিকা রাখার বিপুল সুযোগ রয়েছে। তাই গত বছর থেকে আমরা প্রবৃদ্ধি সহায়ক নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরি করেছি। সেই নতুন পরিকল্পনা নিয়েই নতুনভাবে নতুন উদ্দেশ্য সামনে রেখে এ দেশের মানুষের সামনে আইপিডিসিকে হাজির করতে চাই।
প্রশ্ন: নতুন ব্যবসায়িক পরিকল্পনাটি কেমন? কী উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে রি-ব্র্যান্ডিং শুরু করছেন?
মমিনুল ইসলাম: নতুন ব্যবসা পরিকল্পনায় সাশ্রয়ী গৃহঋণ, নারীর ক্ষমতায়ন, তরুণ ও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি শিল্প ঋণের দিকেও আমাদের নজর থাকবে। যেহেতু ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ও লক্ষ্যের দিক থেকে আইপিডিসির পরিসরকে অনেক বেশি বিস্তৃত করা হয়েছে, তাই আমরা মনে করেছি নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি ব্র্যান্ডিংয়েও নতুনত্ব আনার। প্রায় ৩৫ বছর আমরা ব্যবসা পরিচালনা করেছি। এখন যেহেতু আরও বেশি মানুষের কাছে আমরা পৌঁছানোর লক্ষ্য স্থির করেছি, তাই নতুনভাবে আইপিডিসিকে পরিচিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন: তার মানে কি আপনারা করপোরেট অর্থায়ন থেকে এখন ভোক্তা অর্থায়নের দিকে বেশি ঝুঁকছেন?
মমিনুল ইসলাম: অবশ্যই। আমরা শিল্প ঋণের পরিবর্তে এখন ভোক্তা ঋণের প্রতি বেশি নজর দিচ্ছি। এ জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গ্রাহকের কাছে সহজে ঋণ সহায়তা পৌঁছে দিতে অনেকের সঙ্গে জোটবদ্ধ হচ্ছি। গৃহঋণ বিতরণে এরই মধ্যে বিএসআরএম ও ক্রাউন সিমেন্টের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। এসব চুক্তির আওতায় কোম্পানি দুটির গ্রাহকদের কম সুদে ঋণ সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নানা সেবাও দেওয়া হবে।
প্রশ্ন: কিন্তু ভোক্তা ঋণে তো ঝুঁকি বেশি। সেই ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের জন্য ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে না তো?
মমিনুল ইসলাম: আর্থিক ব্যবসাটাই সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা। এই ঝুঁকিকে কে কত দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারছে, তার ওপরই নির্ভর করছে সাফল্য। এ মুহূর্তে আইপিডিসির খেলাপি বা মন্দ ঋণের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন প্রায় ১৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বর্তমানে বিভিন্ন খাতে আইপিডিসির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আর্থিক খাতে যতগুলো কোম্পানি রয়েছে তার মধ্যে আমাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে কম। তা সত্ত্বেও বর্তমান খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি বা প্রভিশনিংয়ের পরিমাণ ১৯১ শতাংশ। যদি ভবিষ্যতে আইপিডিসির খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণও হয়ে যায়, তাতেও আমাদের খুব বেশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না।
প্রশ্ন: কীভাবে খেলাপি ঋণের হারকে ১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনলেন?
মমিনুল ইসলাম: একসময় আইপিডিসির খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এরপর নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে আমরা নতুনভাবে সাজিয়েছি। সে কারণে নতুন বিতরণ করা ঋণে খেলাপির পরিমাণ অনেক কমে আসে। পাশাপাশি পুরোনো খেলাপি ঋণ আদায়ে কোথাও কোথাও আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। কখনো কখনো সমঝোতার মাধ্যমে ঋণ আদায় করেছি। এসব কারণে এখন আইপিডিসির ব্যালেন্সশিট বা স্থিতিপত্র অনেক পরিচ্ছন্ন ও শক্তিশালী হয়েছে। এ কারণেই মূলত আমরা নতুন করে প্রবৃদ্ধিমূলক ব্যবসায়িক কৌশল হাতে নিতে পেরেছি।
প্রশ্ন: কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় তো আমরা দেখি ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ থেকে শুরু করে বাহ্যিক নানা প্রভাব ও সংশ্লিষ্টতা থাকে। যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পরবর্তী সময়ে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়।
মমিনুল ইসলাম: আমাদের দেশে ঋণের বাজারে একধরনের অদক্ষতা রয়েছে। আর্থসামাজিক কিছু সমস্যা রয়েছে। যেগুলোকে আমরা বাজার ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। গত ১০ বছরে খেলাপি ঋণ আদায়ে আইপিডিসি বড় ধরনের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, যা আমাদের আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়েছে। নতুন যে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি, সেখানেও সব ধরনের ঝুঁকিকে বিবেচনায় নিয়ে ঝুঁকি মোকাবিলার কর্মকৌশল ঠিক করা হয়েছে।
প্রশ্ন: আপনারা সাশ্রয়ী গৃহঋণের কথা বলছেন। গ্রাহকেরা আসলে কত সুদে এ ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন?
মমিনুল ইসলাম: গৃহঋণের ক্ষেত্রে আমাদের সুদের হার সর্বনিম্ন ৯ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ শতাংশ। সর্বনিম্ন ৫ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত গৃহ খাতে ঋণ দিয়ে থাকি। গৃহঋণ নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো কারণে যাতে ঋণগ্রহীতার পরিবার বিপদে না পড়ে, সে জন্য গৃহঋণের পাশাপাশি জীবনবিমা সুবিধা দিচ্ছি। যার কারণে ঋণ ঝুঁকিও কমবে। ঋণের পাশাপাশি বিনা মাশুলে আমরা গ্রাহকদের বাড়ি নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ সেবাও দিচ্ছি। যাতে করে গ্রাহক কোনোভাবে প্রতারিত না হন।
প্রশ্ন: আমরা জানি সম্প্রতি আইপিডিসির শেয়ারের মালিকানার হাতবদল হয়েছে। সেই বিষয়ে জানতে চাই।
মমিনুল ইসলাম: আমাদের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারধারীদের মধ্যে বেশির ভাগই প্রতিষ্ঠান। শেয়ারধারীদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ সরকার, আগা খান ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, ব্র্যাক, আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন, আরএসএ ক্যাপিটাল ও সাধারণ বিনিয়োগকারী। ২০১৫ সালে আগা খান ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের কাছ থেকে ৪০ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছে ব্র্যাক, আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন ও আরএসএ ক্যাপিটাল। প্রথম আলো।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
মমিনুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আইপিডিসি https://corporatesangbad.com/8460/ |