মানবেতর জীবনযাপন করছে তাড়াশের হিজড়রা

Posted on April 16, 2024

সাব্বির মির্জা (তাড়াশ) প্রতিনিধি: জীবন যেখানে যে রকম। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ গুলোর দুর্দশা যেন কাটছেই না। বাসা বাড়িতে তাদের কেউ কাজে নেয় না, মাঠে ঘাটেও তাদের কাজ নেই। শুধুমাত্র কিছু হোটেল-রেষ্টুরেন্টে কয়েক জন কাজ করেন। বাকীরা বিভিন্ন পাড়া, মহল্লা, হাট-বাজারে তোলা (সাহায্য) তুলে দিনাতিপাত করেন। কিন্ত তা বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট নয় এমনটি বললেন তাড়াশের হিজড়া সাথী আক্তার।
আর সিরাজগঞ্জের তাড়াশের প্রায় শতাধিক হিজড়ারা কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শুধূ কাজের ক্ষেত্রেই বৈষম্য নয়, নিজ পরিবারসহ সমাজের সবখানেই তারা চরম বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হন।

বর্তমান সরকার তাদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে সরকারী স্বীকৃতি দিলেও আমাদের সমাজ এখনও তাদের মেনে না নেওয়ার মানসিকতা আগের মতই আছে আক্ষেপ করে বললেন হোসনে আরা হিজড়া।

কথা হয় তাড়াশের পপি হিজড়া, লাকী হিজড়া, সাথী হিজড়া, যুথি হিজড়া, চামিলী হিজড়া, চৈতী হিজড়া, রেখা হিজড়া সহ অনেকের সাথে।

তারা দুঃখ করে বলেন, ক্ষুধা তো সবারই আছে, আর সবাইকেই তো খেয়ে পড়ে বাঁচতে হয়। অন্তত রাতের ঘুমের জন্যও একটা জায়গা দরকার হয়। অথচ সরকারি-বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানেও কাজের সুযোগ নেই। অনেক বাড়ির মালিক হিজড়াদের বাড়ি ভাড়াও দিতে চায় না। এছাড়া হিজড়া হওয়ার কারণে সামাজিকভাবে তাদের কোথাও বিন্দু মাত্র সন্মান নেই। ঘর থেকে বেড়োলেই লোকজন হিজড়া-হিজড়া বলে ডাকাডাকি করেন। অনেকে নোংড়া মন্তব্যও করেন। এতে করে তাদের জীবনটাই তুচ্ছ তাচ্ছিল্যে ব্যাথিত করে।

তারা দাবী করেন, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের সামাজিক স্বীকৃতি চাই। সাথে সাথে তারা তাদের মানবেতর জীবন থেকে মুক্তি পেতে চান সকলে।

জানা গেছে, উপজেলার ২শ’ ৫৪টি গ্রামের প্রায় শতাধিক হিজড়া রয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই কিশোর বয়স থেকে মাঝ বয়সী রয়েছেন। আবার অনেকেই তৃতীয় লিঙ্গের হলেও চক্ষু লজ্জায় তারা নিজেদের প্রকাশ করতে পারছে না। তবে একটা সময় ঠিকই জানাজানি হবে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি না পাল্টালে ওরাও একদিন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হবে। ওদেরও হয়ত ঠাঁই হবে হিজড়া সম্প্রদায়েই।

হাটিকুমরুল-বনাপাড়া মহাসড়কের ১০ নং ব্রীজের সন্নিনিকটে থাকা বাসন্তী হিজড়ার তত্বাবধানে তাড়াশের হিজড়ারা এক সময়ে থাকলেও বর্তমানে এদের একটি বড় অংশ তাড়াশ সদরে অবস্থান করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা একে. এম মনিরুজ্জামান বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে তাড়াশে ১০ জন হিজড়াকে বিশেষ ভাতা দেওয়া হয়েছে। মাসিক ভাতার পরিমান ৬শ’ টাকা। এছাড়াও হিজড়াদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।
তবে তাড়াশের হিজড়াদের জীবনে অন্ধকার কেটে কবে আলোর দেখা পাবে কোন হিজড়াই বলতে পারেন না।