কর্মকর্তাই যেন ঠিকাদার, টেন্ডার চূড়ান্ত হওয়ার আগেই কাজ শুরু'

Posted on April 8, 2024

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বিনসাড়া গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো টেন্ডার প্রক্রিয়াই শেষ হয়নি! টেন্ডার ওপেনিংয়ের নির্ধারিত তারিখ সোমবার (৮ এপ্রিল) নিয়ম অনুযায়ী এরপর লটারির মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ হওয়ার কথা। তারপর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে কাজ পাওয়া ঠিকাদারকে দেওয়া হবে ওয়ার্ক অর্ডার (কার্যাদেশ) কিন্তু কোনো নিয়ম না মেনেই এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ‘নিজেই রয়েছেন’ ঠিকাদারের ভূমিকায়! সরকারের ‘নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে মনগড়া’ কাজ করছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের জন্য আব্দুর রাজ্জাক নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি আট শতক জমি দান করেন। এরপর কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের অনুমোদন দেয় সরকার। ৪২ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে গত ২১ মার্চ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সিরাজগঞ্জ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (এইচইডি)। চলতি মাসের ৮ তারিখে টেন্ডার চূড়ান্ত করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। অথচ টেন্ডার চূড়ান্ত হওয়ার ১৫ দিন আগে থেকেই কাজ শুরু করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। স্থানীয়রা বলছেন, দুটি গাড়িতে করে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের লোকজন এসে মিলাদ পড়িয়ে কাজের উদ্বোধন করে গেছেন। মিস্ত্রিরা স্থানীয় না হওয়ায় এলাকাবাসী তাদের চেনেন না। কার্যাদেশ না হওয়ায় মিস্ত্রিরা কোন সিদ্ধান্তকে আদর্শ ধরে কাজ করছেন তা স্থানীরা বুঝতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও তার অধস্তন কর্মকর্তা দিয়েছেন খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস।

সরেজমিনে দেখা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শ্রমিকরা জমির মাটি খুঁড়ে গর্ত করছেন। নিয়ে আসা হয়েছে রড, সিমেন্ট ও অন্য নির্মাণসামগ্রী। এ সময় প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় স্থানীয় কয়েকজনের।

বিনসাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোক্তার হোসেন বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ শহর থেকে আসা মিস্ত্রিরা এখানে কাজ করছেন। তাই তাদের আমরা চিনি না। তারা কারা সেটা বড় বিষয় নয়, কাজ ভালোভাবে হলেই আমরা খুশি।’

একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা লেখাপড়া খুব একটা জানি না, বুঝিও কম। কিন্তু হক কথা বলতে চাই। কয়েক দিন আগে দুটি প্রাইভেট কার নিয়ে ঠিকাদারের লোকজন ও প্রকৌশলীরা এসেছিলেন। মিলাদ পড়িয়ে কাজের উদ্বোধন করেন। কিন্তু পরে শুনি এখনো টেন্ডার প্রক্রিয়াই শেষ হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কার্যাদেশ ও শিডিউল ছাড়া কাজ শুরু হলো কীভাবে? উদ্বোধন হলো কীভাবে। আর যে কাজ হচ্ছে সেগুলো ঠিকভাবে হচ্ছে না। যে কাজের জন্য ৪২ লাখ টাকা ধরা হয়েছে সেটি ১০ লাখের মধ্যে শেষ করা যায়।’

স্থানীয় তরুণ বুলবুল হোসেন বলেন, ‘অনেক জায়গায় দেখি টেন্ডার হওয়ার পরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে দেরি করে। কখনো বছরের পর বছর চলে যায়। আর আমাদের এখানে ওয়ার্ক অর্ডার এখনো হয়নি অথচ কাজ শুরু হয়ে গেছে। কাজটি কোনো নিয়ম অনুসরণ করে হচ্ছে কি না, সেটা তো আমরা বুঝতে পারছি না। আমরা চাই কাজটি ভালোভাবে হোক, মানসম্মত হোক।’

স্পটে থাকা অজ্ঞাত ঠিকাদারের প্রতিনিধি পারভেজ আলী বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগের স্যারের অনুমতি নিয়েই এখানে কাজ করা হচ্ছে।’ কিন্তু কোন স্যারের অনুমতি নিয়ে কাজ করছেন জানতে চাওয়া হলে তিনি কারও নাম বলতে রাজি হননি।

বিষয়টি নিয়ে সিরাজগঞ্জ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি সহকারী প্রকৌশলীর সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দেন।

সহকারী প্রকৌশলী শাহানুর ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, কে বা কারা কাজ করছেন তা আমার জানা নেই। আমরা ওয়ার্ক অর্ডার দেব, তারপর কাজ শুরু হবে। ৮ এপ্রিল ঠিকাদার অ্যাসাইন করা হবে। তারপর বলতে পারব কাজ কে পেয়েছেন।’ তবে টেন্ডার হওয়ার আগেই কাজ শুরুর বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।'