তাড়াশে কাফেলা’র ডাকে ঘুম ভাঙে রোজাদারদের

Posted on April 2, 2024

সাব্বির মির্জা, (তাড়াশ) প্রতিনিধি: আর দেরি নয়, ঘুম থেকে জেগে উঠুন। চেহেরি খেয়ে নিন এবং অপরকে জাগিয়ে তুলুন। সিরাজগঞ্জের তাড়াশে রমজান মাসে এভাবে প্রতিদিন মধ্যরাতে ‘কাফেলা’ ঘুরে বেড়ায় পাড়া- মহল্লায়। পবিত্র রমজান মাসে সেহেরি সময় একদল মানুষ পাড়া–মহল্লা ঘুরে ঘুরে রোজাদারদের ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে। তাড়াশে এমন দলকে ‘কাফেলা’ বলে ডাকা হয়।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেহেরির ঘণ্টাখানেক আগে থেকে বিভিন্ন পাড়া–মহল্লার অলিগলিতে রোজাদারদের জাগাতে ঘুরে বেড়ায় কাফেলা। পৌর শহরের পূর্বপাড়া থেকে তাড়াশ উপজেলা কাফেলা, খান পাড়া থেকে মাদ্রাসা কাফেলা পার্টি, ভাদাশ গ্রাম থেকে পূর্বপাড়া কাফেলা কাজ করে যাচ্ছে। তাড়াশ পৌর এলাকার কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ বলেন, তাড়াশে আগে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় একাধিক কাফেলার দল থাকলেও কালের বিবর্তনে এর সংখ্যা এখন অনেক কম।

খান পাড়া সেহেরির একটু আগে ঘুম ভাঙান মাদ্রাসা পাড়া পার্টি কাফেলা দলের সদস্যরা। সম্প্রতি মধ্যরাতে দেখা যায়, রিকশায় মাইক লাগিয়ে চালানো হয়েছে গজল আর ইসলামিক কবিতার শ্লোক। গজল পাঠের মাঝে মাঝে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেহেরি সময়।

মাদ্রাসা পাড়া পার্টি কাফেলার প্রধান আব্দুল মালেক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি এ কাজ করে আসছেন। তাঁদের ডাক শুনে মহল্লার ছোট ছেলেমেয়েরা ঘুম থেকে উঠে তাঁদের একনজর দেখতে বাইরে ভিড় করে। রমজান মাসের প্রথম দিন থেকে ঈদের চাঁদ দেখা পর্যন্ত প্রতিদিন রাত দুইটার দিকে তাঁরা নেমে পড়েন রোজাদারদের ডেকে তোলার কাজে। রাত জেগে এভাবে ডেকে তোলা তাঁদের কাছে পরম পুণ্যের কাজ।

তাড়াশ পৌর এলাকার পূর্বপাড়া গৃহিণী শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘সেই ছোটবেলা থেকে কাফেলা দেখে আসছি। এক সময়ে ঘড়ির প্রচলন ছিল না। সে কারণে রোজাদারদের সেহেরির অসুবিধা হতো। সেই সময় থেকে এ কাজ শুরু হয়। আগে কিশোরদের এই কাজ করতে দেখা গেলেও এখন বয়স্করা এই কাজ করছেন।

পৌর এলাকার ভাদাশ মধ্যে পাড়া গ্রামের মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, রমজান মাস এলেই প্রতি রাতে কাফেলার গজলে ঘুম ভাঙে। ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই তারা ঘুরে ঘুরে সেহেরি খাওয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু এখন যান্ত্রিক জীবনে সবকিছু কেমন যেন পানসে হয়ে গেছে।

তাড়াশ উপজেলা কাফেলা দলের প্রধান মো. নূরনবি বলেন, ‘আমি ১০ বছর ধরে কাফেলার দলে যুক্ত। প্রতিবছরই রোজাদারদের ডেকে তোলার কাজ করি। এলাকার কিছু তরুণ ও যুবক স্বেচ্ছায় রাতজাগার দলে যোগ দেন। তাঁদের বিশ্বাস, এই কাজে মানুষের দোয়া মেলে।

তাড়াশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান মনি বলেন, আগে জুমাতুল বিদার দিন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের পুরস্কৃত করা হতো। যদিও এখন এটা হয় না। তবে স্থানীয় সংস্কৃতি রক্ষার্থে তাদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।