৫৩ বছর ধরে লোহার শিকলে বাঁধা ময়দানের জীবন

Posted on March 30, 2024

সাব্বির মির্জা, তাড়াশ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশে মানসিক অসুস্থতাজনিত কারণে ময়দান আলী (৫৩) যুগ যুগ ধরে লোহার শিকলে বাঁধা পড়ে বহু কষ্টে বেঁচে আছেন। বস্তুত পারিবারিক সচেতনতা ও চিকিৎসা সেবাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে এই প্রতিবন্ধী। ময়দান আলীর বাড়ি তালম ইউনিয়নের গোন্তা গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত ইজ্জত আলী।

জানা গেছে, ময়দান আলীর মা-বাবা বেঁচে নেই। তার বড় বোন রেজাতন খাতুন ৩৩ বছর যাবৎ মানসিক প্রতিবন্ধীতার শিকার ভাইকে লালন পালন করে আসছেন। রেজাতন খাতুন বলেন, কোমরে লোহার শিকল বাঁধা অবস্থায় বসে থেকে থেকে তার ভাই ময়দান আলী এখন দাঁড়াতে পারে না।

দিন-রাত শুয়ে বসে কাটিয়ে দেয়। কথাও বলতে পারে না। ক্ষুধা লাগলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে মুখের দিকে। তার বসবাসের জায়গা নেই। গরুর গোয়াল ঘরের পাশে একটি গাছের সঙ্গে শিকল পেঁচিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। নয় তো হারিয়ে যেতে পারে, পানিতে পড়ে ডুবে মরতে পারে। সেই শঙ্কা থেকে বাধ্য হয়ে লোহার শিকলে বেঁধে রেখেছেন।

রেজাতন খাতুন আরও বলেন, ময়দান আলীর থাকার জায়গা নেই। বেশিরভাগ সময় নিজের মলমূত্রের মধ্যেই গড়াগড়ি করে কাটে। তাছাড়া মানসিক প্রতিবন্ধীতার সঙ্গে অন্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে তার। একজন মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকার নূন্যতম অধিকার থেকে সে বঞ্চিত।

প্রতিবন্ধীতার সঙ্গে দরিদ্রতা যেন ময়দান আলীকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে রেখেছেন। সরেজমিনে সেটাই প্রতীয়মান হয়। গোয়াল ঘর ও খড়ের পালার পাশে শিকলে বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছে মানসিক প্রতিবন্ধী ময়দান আলী। তিনখানা পুরান টিনের একটি খুপড়ি ঘরের মধ্যে রাখা হয়েছে তাকে। সে ঘরের চারপাশে নেই কোন বেড়া। হাড়কাঁপানো শীতের কষ্ট, প্রখর রোদের তাপ কিংবা ঝড়-বৃষ্টি সয়ে যেতে হয় নীরবে।

এদিকে স্থানীয় পরিবর্তন নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কর্মী (সিএইচডিআরপি) রোকসানা খাতুন বলেন, মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধীতার শুরুতেই সঠিক চিকিৎসা করানো গেলে দ্রুত আরোগ্য লাভ সম্ভব। তাদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি পারিবারিক সচেতনতা অতিব জরুরি।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা একেএম মনিরুজ্জামান বলেন, শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডের সামান্য টাকায় ময়দান আলীর মতো প্রতিবন্ধীদের ভরণ-পোষণ সম্ভব নয়। এ জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

মানসিক প্রতিবন্ধী ময়দান আলীর বিষয়টি নিজে দেখার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা।