শ্রীমঙ্গলে ১ বছর ধরে সড়কটির বেহাল দশা, চলাচলে অতিষ্ঠ জনজীবন

Posted on March 29, 2024

তিমির বনিক, স্টাফ রিপোর্টার: প্রায় বছর খানেক ধরে এভাবেই ফেলে রাখা হয়েছে রাস্তাটি। 'ফেলে রাখা হয়েছে' বাক্যটি কিন্তু এমনি এমনিই বলা হয়নি। এখানে ভুক্তভোগী এলাকার মানুষের ক্ষোভ আছে, রাগ আছে, আছে বিরক্তি ও সাথে তিক্ততার অভিজ্ঞতা। প্রশ্ন আসতে পারে কার উপর এসব মানুষের ক্ষোভ, কার উপর রাগ। কার উপরই বা বিরক্তি? নির্দিষ্ট কারোও বিরুদ্ধে নয়। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের উপরই ভুক্তভোগীদর এসব ক্ষোভ, রাগ, বিরক্তি। প্রশ্ন আসতে পারে - কারণ কি?

ভুক্তভোগী এলাকার মানুষের কথায় এর কারণটাকে একটা প্রশ্নের মধ্য দিয়ে জানাতে চেয়েছেন। যাদের প্রশ্নটা হলো - যে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির পক্ষে কাজ সম্পন্ন করার ক্ষমতা নেই, তাহলে সে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে এসব কাজ করার দায়িত্ব কেন দেওয়া হয়?

ভুক্তভোগী এলাকাটি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শহরে যাতায়াত করার জন্য আশিদ্রোণ ও কালীঘাট ইউনিয়নের আওতাধীন কয়েকটি এলাকার হাজারো মানুষের চলাচলের রাস্তা এটি। দীর্ঘদিনের ভাঙ্গা রাস্তাটি নতুন করে মেরামত করার কথা বলে ভেঙ্গে ফেলে রেখে দেওয়া হয়েছে প্রায় বছর খানেক। এই সময়ের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমেও তুলে ধরে কর্তৃপক্ষের নজর কাড়লেও ফলাফল সেই 'শূন্য'র মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। এর ফলে এই রাস্তা ব্যবহার করে চলাচলকারীদের ভোগান্তি দিনের পর দিন বেড়েছে। বর্ষাকালে কাঁদা আর শীতকালে ধুলোর পথে রুপ নিয়েছে রাস্তাটি। আর কিছুদিন গেলে যানবাহন চলারও অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে হয়তো। তাছাড়া বর্তমানে যাদেরকে বাধ্য হয়ে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে তারা একবারে তাদের কাজগুলো শেষ করে নেবার চেষ্টা করেন। যাতে করে এতো কষ্ট সহ্য করে আবার সেই রাস্তা দিয়ে আসতে না হয়। খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া কেউ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে আগ্রহ দেখাতে দেখা যাচ্ছে না।

'পর্যটন এলাকার এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা মেরামতের কথা বলে এভাবে ভেঙ্গে ফেলে রাখার মানে বুঝলাম না! এখন তো মনে হচ্ছে মেরামতের জন্য না ভেঙ্গে আগের অবস্থায় রেখে দিলেই ভাল হতো। পর্যটকরা গাড়ীতে করে এদিকে আসতেই পারেন না। যার কারণে মনিপুরি কাপড়ের ব্যবসার অবস্থা তো শোচনীয়। '

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি মেরামত না করে ফেলে রাখাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী এলাকার বাইরের অনেকে। স্কুল শিক্ষক জানান, 'শ্রীমঙ্গল পর্যটন এলাকা। তার মধ্যে উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতাল যেতে হলে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। এই রাস্তাটিকে গুরুত্ব দেওয়ার বদলে এভাবে অবহেলা করে ফেলে রাখাটা মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে।

অবসর সময় কাটাতে আমার মতো অনেক তরুণরা এই রাস্তা দিয়ে চা খেতে, আড্ডা দিতে এদিকে আসে। কাজ শুরুর নামে যা খরচ হলো সেই খরচ নিশ্চয় আবার কাজ শুরু করার সময় হবে। সেটা নিশ্চয় বাড়তি খরচের আওতায়? আশাকরি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মানুষের ভোগান্তি দূর করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।'

শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রকৌশলী ইউসুফ হোসেন খান জানান, 'আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন ভাবে দেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই এর ফলাফল পাওয়া যাবে। তবে আগামী মাস দুই একের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

অর্ধ্বেক কাজ করে ফেলে রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'পুরনো ঠিকাদার কাজ অসম্পূর্ণ রেখে আত্মগোপন করার কারণে দরপত্র বাতিল করার জন্য জেলা প্রকৌশলী বরাবর প্রস্তাব করা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেরিন এন্টারপ্রাইজ কাজ অসম্পূর্ণ রাখা ও কাজের টাকা তুলে আত্মগোপন করায় তাকে প্রদানকৃত অন্য ৪ টি কাজও বাতিল করা হয়েছে।'

প্রকৌশলী আরও জানান, 'উপজেলা হাসপাতালে চলাচলের একমাত্র রাস্তা হওয়ায় গুরুত্ব বিবেচনায় দরপত্র বাতিল, নতুন দরপত্র আহ্বান, ঠিকাদার নিয়োগ সংক্রান্ত কার্য্যপ্রক্রিয়া শেষে আড়াই মাসের মধ্যে কাজটি শুরু করা যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা করছি।'