৩ বছরেও শেষ হয়নি ৫০ মিটার সেতুর নির্মাণ কাজ: ভোগান্তিতে ৫০ হাজার মানুষ

Posted on March 25, 2024

শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার রইচপুর খালের ওপর সেতু নির্মাণাধীন ৫০ মিটার সেতুর কাজ ৩ বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান "সল্যুশন ডিজাইন"।

৫ টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের চলাচলের এক মাত্র সেতু এটি। রইচপুর খালের ওপর পূর্বের সেতুটি ২০২০ সালে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পরায় সাতক্ষীরা এলজিইডি অফিস থেকে ২০২১ সালে একই স্থলে নতুনভাবে ৫০ মিটার সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। টেন্ডারের মাধ্যমে সাড়ে ৪ কোটি টাকা মূল্যের সেতু নির্মাণের কাজটি পান "সল্যুশন ডিজাইন" নামের ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ওর্য়াক অর্ডার বা কার্য আদেশ অনুযায়ী ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের নভেম্বরে মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ওই সময়ে মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করে এখান থেকে সব মালামাল গুটিয়ে নিয়ে চলে যায় কর্মরত শ্রমিক ও ঠিকাদার।

এ দিকে নির্মাণাধীন সেতুটির কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ করে রাখায় ভোগান্তির শিকার প্রায় ৫ টি ইউনিয়নের ৫০ হাজারের অধিক মানুষ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

বারবার তাগাদা দেয়ার পরও নিয়োগকৃত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যেমে নির্মাণাধীন সেতুর কাজ ৩ বছরের মধ্যে সম্পন্ন না করতে পারায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন সংশ্লিষ্টরা অধিদপ্তর।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নাজমুল শাহাদাৎ জাকির বলেন, আমরা জেনেছি ২০২২ সালের নভেম্বরের মধ্যে সেতুটির কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কেবল তিনটি পিলার ঢালাই ছাড়া দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি সেতুটির।

পথচারী রতন রায় বলেন, মানুষ চলাচলের জন্য অস্থায়ী ভাবে কাঠের সাঁকো নির্মান করা হয়েছিলো সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে প্রায়। তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে কোনো রকম সাইকেল বা মোটরসাইকেল পার ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না।

স্থানীয় বাসিন্দা তৈবুর রহমান বলেন, শহরের প্রবেশমুখ ইটাগাছা-ঘোনা সড়কের রইচপুর খালের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে সেতুটি। সদর উপজেলার ঘোনা, শিবপুর, আগড়দাড়ী ও আলিপুর ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজার মানুষের যাতয়াতের মাধ্যম হলো রইচপুর সেতু। গত তিন বছরেও সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়ায় মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের সেবাও মিলছে না।

সাতক্ষীরা পৌরসভার কাউন্সিল মো. জাহাঙ্গীর কবির কালু বলেন, আশপাশে তিন-চারটি ইউনিয়নের মানুষ চলাচল করে ইটাগাছা-ঘোনা সড়ক দিয়ে। এসব ইউনিয়নের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সবজি বা বিভিন্ন প্রকার মাছ জেলা শহরে নিয়ে যাওয়া হয় রইচপুর সেতু পার হয়ে। সেতুটির কারনে ওই এলাকায় কৃষকদের কৃষি পন্য বিপণনের খরচ বেড়েছে এবং তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান "সল্যুশন ডিজাইন" র স্বত্বাধিকারী মাহবুবর হোসেনে সঙ্গে মোবাইল ফোন যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জান বলেন, ওর্য়াক অর্ডার বা কার্য আদেশ অনুযায়ী ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০২২ সালের নভেম্বরে মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করার কথা থাকলেও সেতুর কাজটি শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান "সল্যুশন ডিজাইন"। বার বার তাদেরকে কাজটি শেষ করার জন্য বলা হলেও তারা কোন গুরুত্ব দেয়নি বাধ্য হয়ে গত ১৪ জানুয়ারি ২৪ তারিখে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে এতে উল্লেখ করা হয়েছে আগামী ২৬মে ২৪ তারিখ ৬ মাসের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষেকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়ে উক্ত তারিখের মধ্য কাজ শেষ না করতে পারলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অর্থিক জরিমানাসহ তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।