তাড়াশে খাল পাড়ের মাটি ধসে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

Posted on March 20, 2024

সাব্বির মির্জা (তাড়াশ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বৌরো মৌসুমে খালের পানির সেচ সুবিধার জন্য সগুনা ইউনিয়নের বিন্নাবাড়ী আমতলা কাটা খাল ভায়া কুন্দইল সেতু খাল খনন করা হচ্ছে। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ অনুযায়ী এ খনন কাজের আরম্ভ ও শেষ করতে পারেনি। বিশেষ করে কার্যাদেশের ৫ মাস পর খনন কাজ শুরু করায় খালের পাড়ের মাটি ধসে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

সগুনা ইউনিয়নের কাটাবাড়ী গ্রামের কৃষক আইয়ূব আলী বলেন, খালের ধারে সারে তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করা ছিল আমার। তার মধ্যে প্রায় ১২ কাঠা জমির ফসল পাড়ের মাটির নিচে পড়ে গেছে।

কুন্দইল গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার এরশাদ আলী বলেন, খালের পাড়ের ছোট-বড় অসংখ্য মাটির চাপ জমির মধ্যে ধসে পড়েছে। আমি জমির মধ্যে থেকে মাটির চাপগুলো তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এ গ্রামের রসুল নামে আরেক জন কৃষক বলেন, আমি আবাদি জমি থেকে ধান গাছ তুলে সরিয়ে নিয়েছি। নয়ত সব মাটি চাপা পড়ে যেত। ভুক্তভোগী কৃষকরা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন এ খালটি দুই মাস আগে খনন করা হলে কৃষকের কোন ক্ষতি হতনা।

এদিকে উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক বলেন, ২০২৩ সালের আগষ্ট মাসের ২০ তারিখে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আকাশ ট্রেডাসের সত্ত্বাধিকারী মো. আনোয়ার হোসেনকে বিন্নাবাড়ী আমতলা কাটা খাল ভায়া কুন্দইল সেতু খাল খননের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ দেন সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে।
এ কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ১ তারিখে খনন কাজ আরম্ভ হওয়ার কথা ছিল ও ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ সালে কাজটি শেষ হওয়া কথা ছিল। কিন্তু মৌখিকভাবে বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও ঠিকাদার কাজ আরম্ভ করতে সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। পরে তাকে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ১৩ তারিখে একটি শতর্কীকরণ পত্র দেওয়া হয় সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে। অনুরূপ আরো একটি পত্র ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখে দেওয়া হয় উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর থেকে।

উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে সারাদেশে পুকুর, খাল উন্নয়ন প্রকল্প (১ম সংশোধিত) (আইপিছিপি) প্রকল্পের আওতায় তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নে ১. ক) বিন্নাবাড়ী আমতলা-কাটা খাল ভায়া কুন্দইল সেতু খাল খনন করা হচ্ছে। এ কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছিল ১ কোটি, ৯৬ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৬ টাকা। চুক্তি মূল্য ১ কোটি ৮৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬৯ টাকা। এ খালে ১৪ টি রেফারেন্স বেড ব্লক ও ১৪ টি টেম্পোরারি বেঞ্চ মার্ক নির্মান করার কথা রয়েছে কাজের নথিতে। কাজটি ২৬‘শ মিটার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভেক্যু মেশিন দিয়ে বিন্নাবাড়ী আমতলা কাটা খাল ভায়া কুন্দইল সেতু খাল খনন করা হচ্ছে। খালের মাটি অনেক মাটি ধসে ধসে পড়ছে বোরো ও ভট্টার জমির মধ্যে। ২৬ মিটার খনন কাজের প্রায় ১৮শ মিটার খনন করা হয়ে গেছে। এক কৃষক খালের মাটির দুশ্চিন্তায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। অপর দুই জন কৃষক জমির মধ্যে ধেকে মাটির চাপ সরানোর চেষ্টা করছেন। ২৬শ মিটার খালের কোল ঘেষে যাদের জমি রয়েছে এমন বহু কৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়ে গেছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আকাশ ট্রেডাসের সত্ত্বাধিকারী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যস্ততার কারণে আমি বিন্নাবাড়ী আমতলা কাটা খাল ভায়া কুন্দইল সেতু খাল কার্যাদেশ মোতাবেক শুরু করতে পারিনি।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, খালের তলা গভীর করে খনন করা হচ্ছে পানি ধরে রাখার জন্য। ফলে মাটি বেশি পড়ছে খাল পাড়ে। অতিরিক্ত মাটি বেচে সরকারি খাতে টাকা জমা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।