জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা: শিক্ষক দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান গ্রেপ্তার

Posted on March 17, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও জবি শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শনিবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের লালবাগ বিভাগ তাদের গ্রেপ্তার করে।

এ ঘটনায় অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বাদী হয়ে জবি শিক্ষক দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মানের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

এর আগে শুক্রবার (১৫ মার্চ) মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনাকে হত্যা দাবি করে অবন্তিকার মা বলেন, ‘আমার মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আম্মান, রাফি, মাহিয়ান, লাকি, রিমি, আঁখি, বন্যা ও দ্বীন ইসলাম আমার মেয়ের জীবনটাকে বিষিয়ে তুলেছিল। তারা বিভিন্নভাবে আমার মেয়েকে হয়রানি করে আজকের অবস্থার সৃষ্টি করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে গিয়েও আমার মেয়ে কোনো বিচার পায়নি। উল্টো তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে, অপমান করা হয়েছে। আমার মেয়ে বিচার পেলে আজকের দিনে তাকে চলে যেতে হতো না।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমি বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রক্টর সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, বিষয়টির সুরাহার জন্য। আমার মেয়ে যাতে ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করতে পারে, সেটি আর হলো না। ওদের জন্য আমি মেয়ে হারিয়েছি, আমি তাদের বিচার চাই।’

এদিকে অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় নিজের কোনো দায় নেই বলে দাবি করেছেন দ্বীন ইসলাম। একটি সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করেন তিনি। নিজ এলাকার মানুষ হওয়ায় অবন্তিকা ও তার পরিবারকে যথেষ্ট সহায়তা করেছেন জানিয়ে দ্বীন ইসলাম বলেন, অফিসিয়ালি যে দায়িত্ব পেয়েছিলেন, সে অনুযায়ী তা পালন করেছেন।

এর আগে শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টায় ফেসবুক পোস্টে শিক্ষক ও সহপাঠীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি এবং মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা। এর কিছুক্ষণ আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন তিনি।

আত্মহত্যার আগে সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করে লেখা ফেসবুক পোস্টটি হুবহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—

আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই, তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট (সহপাঠী) আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী (সমর্থনদাতা) জগন্নাথের (বিশ্ববিদ্যালয়ের) সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন ও অনলাইনে থ্রেটের ওপর রাখত, সেবিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। দ্বীন ইসলাম আম্মানের হয়ে আমাকে নানাভাবে ভয় দেখায়, আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি, এখানে কোনো জাস্টিস পাব না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি এবিউজিভ কমেন্ট (যৌন নিপীড়নমূলক মন্তব্য) করায় আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনও আমাকে নানাভাবে মানহানি করতেসে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে। আর এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্র কল্যাণের তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্টদের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায়, সেটা কুমিল্লার কারো সৎসাহস থাকলে সে স্বীকার করবে। এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাতবার প্রক্টর অফিসে ডেকে নেয়। কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া, আর সে কিনা শেষমেশ আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিল না। আমি উপাচার্য সাদেকা হালিম ম্যামের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে বিচার চাইলাম। আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার ওপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এত ভালোবাসে যে মানুষ, সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না, কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেসে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইসিলাম! আর পোস্ট মর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয়নি মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল, আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনো গতি না পাই। তা-ও আমি ফাইট করার চেষ্টা করসি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্য ক্ষমতার।