ফ্রা লুকা ডি প্যাসিওলি’র ‘পার্টিকুলারিস ডি কম্পিউটিস এট স্ক্রিপচার্স’ (এ্যাকাউন্টিং বুকস্ এ্যান্ড রেকর্ডস) এর অধ্যাপক জেরেমি ক্রিপসকৃত ইংরেজি অনুবাদ থেকে বঙ্গানুবাদ

Posted on March 16, 2024

এন জি চক্রবর্তী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর) ১২তম অংশ

দ্বিতীয় ভাগ।
ষষ্ঠ অধ্যায়।
মেমোরেন্ডাম বা স্ক্র্যাপ বুক।
মেমোরেন্ডাম বা স্ক্র্যাপ বুক বা ডে বুক।

এটা রাখার উদ্দেশ্য, এটি কে লিখবে আর এতে কি কি লেখা থাকে।

পরিমান বা টাকার অংক যাই হোক না কেন ক্রম অনুযায়ী দিনের সমস্ত লেনদেন এতে লিখে রাখাই এই মেমোরেন্ডাম বা স্ক্র্যাপ বুক বা ডে বুক যে নামেই ডাকি না কেন তার উদ্দেশ্য। কেনাবেচা থেকে শুরু করে যত ধরণের যা কিছু লেনদেন হচ্ছে তার সমস্ত বিবরণসহ এ খাতায় যখন যা ঘটে তা ঘন্টা, দিন, মাসের ক্রম অনুযায়ী লিখে রাখতে হবে। যেমন ইনভেন্টরীতে করেছি ঠিক একই ভাবে এখানেও লেনদেনের সমস্ত খুঁটিনাটি বিবরণ লিখে রাখা দরকার। পরে যখন কে, কবে, কোথায়, কিভাবে, কখন, কেন- এ ধরণের প্রশ্ন সামনে চলে আসবে তখন যেন তার প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক ও নির্ভুল উত্তর দেয়া সম্ভব হয়। তাই বলে আবার এমন বিষয় তাতে লেখা ঠিক হবে না যাতে ব্যবসায়ীক গোপনীয়তা প্রকাশ হয়ে পড়ে।

লেনদেনের পরিমান যত বেশি হবে ডে বুকের গুরুত্বও ততই বেশি। এটা এমনভাবে রাখা দরকার যাতে ব্যবসায়ীর অনুপস্থিতিতে বা তার অবর্তমানে তার এজেন্ট, সহকারি বা কর্মচারীরাও যেন কাজ চালিয়ে নিতে যেতে পারে। কারণ, একজন সফল ব্যবসায়ির কাজ কখনো থেমে থাকে না। ব্যবসায়ীতো বটেই এমনকি তাদের কর্মচারীদেরকেও মাঝে মধ্যে ব্যবসায়ীক কাজে কর্মস্থলের বাইরে থাকতে হয়। তাদের বাদে বাকি যারা ব্যবসাস্থলে রইল ওই সময়ে যে ব্যবসায়ীক লেনদেনগুলো সংঘটিত হলো তারা হয়ত ওই ডে বুকে নিয়মমাফিক প্রয়োজনীয় এন্ট্রিগুলো লিখতে ততটা ওস্তাদ নয়, তবুও মালিক থাকলে যে যে ভাবে যা যা করতেন তারা যেন ঠিক সেই সেই ভাবে কেনাবেচা থেকে শুরু করে খরিদ্দারকে সন্তুষ্ট করা, দেনাদারদের থেকে আদায়সহ সমুদয় লেনদেন লিখে রাখে। কর্মচারীরা নিজেদের শুধু কর্মচারী ভেবে মালিকের আসার আশায় বসে না থেকে মালিক থাকলে যা করতো প্রতিদিনের খুঁটিনাটিসহ সমস্ত কাজ ডে বুকে লিখে রাখবে। নিক্তি ধরে ওজন মেপে কেনা বেচা চালিয়ে যাবে আর তা বাকি না নগদে হলো তাও লিখে রাখবে। বিভিন্ন মুদ্রায় লেনদেন সংঘটিত হলে তারা আবার যেন মাতব্বরি করে তা এক মুদ্রায় রুপান্তরিত করতে না যায়। ওটা মালিকের জন্য তোলা থাক। মালিক এলে না হয় তারপর ওগুলোকে রুপান্তরিত করে জার্ণালে আর লেজারে তোলা যাবে।

যেইই করুক, ডে বুক থেকে জার্নালে পোষ্টিং দেয়ার আগে তাকে নিশ্চিত হতে হবে যে ডে বুকে প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্যাদি ক্রমানুযায়ী সাজানো আছে। তারপর, মালিক নিজের জায়গায় ফিরে আসলে ডে বুকটাকে ভালভাবে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সমন্বয়সহ তিনি জার্ণালে ও লেজারে পোষ্টিং দেবেন বা দেওয়াবেন। এজন্যই বিশেষ করে বড় ব্যবসাতে ডে বুকের এত গুরুত্ব। ডে বুকের সংখ্যাগুলো যদিও কেবল তাদের যোগফলমাত্র তবুও ডেবুকে লিখিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ আর তা সংঘটিত লেনদেনগুলোর ডাবল এন্ট্রির পোষ্টিং দিতে সহায়ক।

বছর শেষ হওয়ার ফলেই হোক আর হিসাবের অন্যান্য খাতাপত্র লিখতে লিখতে তার পাতা ভরে যাওয়ার ফলেই হোক ওই খাতার মলাটে ওটা যে বছরের, সে বছরটি লিখে রাখতে হবে যাতে পরে যে কোন সময় ওটা কোন বছরের তা চেনা যায়। হিসাবের খাতাগুলো এমনভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে আলাদা আলাদাভাবে চিহ্ন দিয়ে রাখতে হবে যাতে সেগুলোকে চেনাও যায় আবার প্রয়োজনে দেখে নেয়াও যায়। এ উদ্দেশ্যে তারিখ ব্যবহার সুবিধাজনক।

সাধারনত হিসাবের খাতাগুলো বর্ণের ক্রমানুসারে সাজানো হয়। তবে খৃষ্টান ব্যবসায়ীদেরকে ’পবিত্র ক্রস’ চিহ্নও ব্যবহার করতে দেখা যায়। বর্ণ কিম্বা ক্রস যাইই ব্যবহার করি তাতে হিসাবের প্রাথমিক বইগুলোর চেহারা হবে:
মেমোরেন্ডামা জার্ণালা হিসাবের প্রাথমিক খাতাপত্র
মেমোরেন্ডাম-এ জার্ণাল-এ হিসাবের পরবর্তী খাতাপত্র

খাতার প্রতিটি পাতায় নম্বর দিতে হবে। বেশীরভাগ ব্যবসায়ীরা এটা না মানলেও অভিজ্ঞরা এটা অবশ্যই মানেন। বেশীরভাগের যুক্তি হলো যেহেতু তারিখের ক্রম অনুযায়ী প্রতিটি এন্ট্র্রি খাতায় লিপিবদ্ধ হচ্ছে তাহলে প্রতি পাতায় পৃষ্ঠা নম্বর দেওয়া বাহুল্য মাত্র। হ্যাঁ, সেটা হতে পারত যদি এক পাতায়ই দিনের সমস্ত এন্ট্রি ধরে যেত। বড় ব্যবসাতে এক দিনের সব এনিট্র এক পাতাতে ধরাতো দূরের কথা, অনেক পাতারই দরকার হতে পারে। তাহলে আপনারাই ভাবুন, সেই অনেক পাতা থেকে একটি নির্দিষ্ট তারিখের একটি বা দুটি পাতা কোন বদমাশ যদি সরিয়ে ফেলে তাহলে সে বদমাইশিটা ধরা কতটা শক্ত, আর সে দিক থেকে পাতার নম্বর দরকারী কিনা। সুতরাং সব বিষয় বিবেচনা করলে পাতা নম্বর দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

লেখক: এন জি চক্রবর্তী, গবেষক কোম্পানি ল, পেশাদার হিসাববিদ ও সহ প্রতিষ্ঠাতা, আইসিএসবি।