বছরে মোট পশুর চামড়ার অর্ধেক সংগৃহীত হয় পবিত্র ঈদুল আজহায়। এবারের ঈদ আসছে একটি ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে। এখন ট্যানারিগুলো হাজারীবাগ ছাড়ার চাপে আছে। সাভারে না যাওয়ায় তাদের জরিমানাও দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় কোরবানিতে পশুর চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি ও বাজার নিয়ে কথা বলেছেন হাজারীবাগের সবচেয়ে বড় ট্যানারি ঢাকা হাইড অ্যান্ড স্কিনের পরিচালক জে এ খোকন ভূঁইয়া।
প্রশ্ন: বেশ কয়েক বছর ধরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের আয় বাড়ছে। এ শিল্পের ভবিষ্যৎ কী?
খোকন ভূঁইয়া: বাংলাদেশের চামড়ার কদর আছে। তবে চামড়া রপ্তানি না করে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করলে লাভ বেশি। এতে মূল্য সংযোজন বেশি হয়। পাশাপাশি আয়ও বেশি হয়। চামড়ার কদর ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে। কারণ এখনো এর বিকল্প তৈরি হয়নি। এ দেশের পুরোনো ট্যানারির মালিকেরা এখন আর ট্যানারিশিল্পকে এগিয়ে নিতে পারছেন না। এখানে নতুনেরা বিনিয়োগ করছেন। বিদেশি বিনিয়োগও আসছে। ট্যানারি সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে সরিয়ে নিতে পারলে বিদেশি ক্রেতা বাড়বে। সব মিলিয়ে চামড়াশিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
প্রশ্ন: চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজারের সাম্প্রতিক প্রবণতা কী?
খোকন ভূঁইয়া: এখন ক্রেতাদের খোঁজ নেওয়ার প্রবণতা আগের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম। এর কারণ হলো, যেসব বাজারে আমরা রপ্তানি করি সেখানে চাহিদা কমে গেছে। যেমন ঢাকা হাইড যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে, তার ৯০ শতাংশ যায় ইতালিতে। সেখানে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। এ কারণে দামও অনেকখানি কমে গেছে।
প্রশ্ন: কোন গরুর চামড়া ভালো হয়?
খোকন ভূঁইয়া: মধ্যম বয়স ও মধ্যম আকারের গরুর চামড়া ভালো হয়। আর আমাদের দেশি গরুর চামড়া বেশি ভালো। এর হয়তো জলবায়ুগত কোনো কারণ আছে। তবে আমরা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে অনেকগুলো গ্রেডে ভাগ করি। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো দাম পাওয়া যায় প্রথম তিনটি গ্রেডের চামড়ার। ভারত থেকে একটি গরু কিনে ভারতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করলে দেখা যাবে সেই চামড়াটির গ্রেড আসবে তিন থেকে আটের মধ্যে। কিন্তু সেই গরু বাংলাদেশে কিছুদিন রেখে জবাই করলে দেখা যাবে গ্রেডিং আসবে এক থেকে চারের মধ্যে। আর সার্বিকভাবে ষাঁড়ের চামড়া ভালো।
প্রশ্ন: দুই বছর ধরে ভারতীয় গরু কম আসছে। দেশে চামড়া সরবরাহে কী টান পড়েছে?
খোকন ভূঁইয়া: বাংলাদেশে প্রায় ১৬ কোটি মানুষের সিংহভাগ গরুর মাংস খেতে পছন্দ করে। ভারত থেকে গরু সরবরাহ কমে গেলে এ দেশে পালন করার হার বাড়বে। গত দুই বছরে ভারত থেকে গরু সরবরাহ কমলেও দেশি গরুর সরবরাহ ভালো। এখন অনেকে খামার গড়ছেন। ফলে চামড়া সরবরাহে টান পড়েনি।
প্রশ্ন: ভারতের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেখানে ট্যানারিগুলো কাঁচা চামড়া পাচ্ছে না। এতে ভারতীয় চামড়া বা চামড়াজাত পণ্যের বৈশ্বিক ক্রেতাদের কি বাংলাদেশমুখী হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
খোকন ভূঁইয়া: অবশ্যই আছে। আমার কাছেই কিছু ভারতীয় ট্যানারির মালিক তাঁদের ক্রেতাসহ খোঁজখবর নিতে এসেছিলেন।
প্রশ্ন: আপনারা চামড়া কাদের কাছ থেকে কেনেন? এবারের প্রস্তুতি কী রকম?
খোকন ভূঁইয়া: আমরা সাধারণত ব্যাপারীদের কাছ থেকে কিনি। যাঁরা ৫০০ থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত চামড়া সরবরাহ করতে পারেন, তাঁদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি থাকে। কোরবানির আগে আমরা তাঁদের পুরোনো পাওনা পরিশোধ করি। তারা চামড়া কিনে মজুত করেন। কোরবানির পর সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে তাঁদের কাছ থেকে পুরো চামড়া আমরা কিনে নিই।
প্রশ্ন: আপনাদের ট্যানারি তো সবচেয়ে বড়। সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে আপনাদের কারখানার নির্মাণকাজের অগ্রগতি কতটুকু?
খোকন ভূঁইয়া: আমরা সাভারে ৪ লাখ ৩০ হাজার বর্গফুট জমি পেয়েছি। সেখানে কারখানা নির্মাণের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ৩০টির বেশি ড্রাম বসিয়েছি। ঈদের আগে অথবা কয়েক দিন পরেই সেখানে উৎপাদন শুরু হবে। হাজারীবাগে আমাদের দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা বড় চামড়ার ক্ষেত্রে প্রায় ২ হাজার, মাঝারি চামড়ার ক্ষেত্রে ৬ হাজার এবং ছোট চামড়ার ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০ হাজার। আপাতত সাভারে ছোট-বড় মিলিয়ে হাজার খানেক চামড়া উৎপাদন করা যাবে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
জে এ খোকন ভূঁইয়া, পরিচালক, ঢাকা হাইড অ্যান্ড স্কিন https://corporatesangbad.com/7269/ |