৩ মাসে ৩১ মামলায়ও বন্ধ হয়নি পুকুর খনন

Posted on March 11, 2024

সাব্বির মির্জা, (তাড়াশ) প্রতিনিধি : চলনবিল অধ্যুষিত তিন ফসলি এলাকা সিরাজগঞ্জের তাড়াশে জমির শ্রেণি পরিবর্তন হচ্ছে উদ্বেগজনক হারে। ২০০৭ সালের পর দেড় দশকে কয়েক হাজার পুকুর খনন করা হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। এভাবে যততত্র পুকুর খননের ফলে বিভিন্ন গ্রামের ফসলি মাঠে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। খাদ্যশস্যের ভান্ডারখ্যাত উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে ধান, গম, ভুট্টার মতো খাদ্যশস্য ও সরিষা উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে দাবি চাষিদের। 

উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলছিলেন, পুকুর খনন বন্ধ না হলে আগামী দিনে কৃষক পরিবারগুলোর ভাত জুটবে না। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালের দিকে উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় আবাদি জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ২৯ হাজার হেক্টর। তবে পুকুর খনন করায় আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে অন্তত ছয় হাজার হেক্টর। পুকুর কাটা হলেও খাজনা দেওয়া হচ্ছে কৃষিজমি হিসেবে। অথচ পুকুরের জমির খাজনা বেশি।

এলাকায় প্রচুর পুকুর খনন করায় ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান উপজেলার খালকুলা এলাকার তোতা মিয়া। তিনি বলেন, এসব জমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। এ কারণে পুকুর খননে বাধ্য হয়েছেন। এদিকে পুকুর খননের জন্য তিন মাসের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জামিনে আছেন কোহিত মহল্লার ওমর আলী। তিনি খননযন্ত্র ভাড়ায় চালান। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন। তাঁর ভাষ্য, দণ্ড পাওয়ার পর আর পুকুর খননের কাজ করছেন না। যারা খনন করছেন, তাদের শাস্তি হওয়া উচিৎ বলে মত তাঁর।

জানা গেছে, পুকুর খনন রোধে উপজেলা প্রশাসন, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় এবং পুলিশ যৌথভাবে তিন মাস ধরে অভিযান চালাচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সাতটি ইউনিয়ন এলাকায় তাড়াশ থানা পুলিশ বাদী হয়ে ১২টি মামলা করেছে। আর ভূমি কর্মকর্তারা বাদী হয়ে করেছেন ১৫ মামলা। ২০১০ সালের বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন এবং ২০২৩ সালের ভূমি অপরাধ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ আইনে এসব মামলা হয়েছে।

এসব মামলার মধ্যে নওগাঁ ইউনিয়নে ৯টি মামলায় আসামি ৫৬ জন। এ ছাড়া মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের দুই মামলায় চারজন, দেশিগ্রামের একটি মামলায় দু’জন, বারুহাসের একটি মামলায় আটজন, সদরের দুই মামলায় ৯ জন, মাধাইনগরের একটি মামলায় ২২ এবং তালম ইউনিয়নে একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে দু’জনকে।

এদিকে ভূমি অফিস থেকে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো.  খালিদ হাসান পুকুর খনন রোধে পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ অভিযানে পাঁচ ব্যক্তিকে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অপরাধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া জব্দ করা হয় দুটি এক্সক্যাভেটর (ভেকু)। পাশাপাশি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ৩১ জনকে। সব মিলিয়ে ৩১টি মামলার পর পুকুর খনন কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। প্রশাসনের অভিযানের কারণে তাদের চোখ ফাঁকি দিতে দিনের পরিবর্তে রাতে খনন করা হচ্ছে।

বিষয়টি স্বীকার করে তাড়াশ থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ পুকুর খনন বন্ধে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। তবে তারা বিভিন্ন সময় অন্য কাজেও ব্যস্ত থাকায় কিছু ব্যক্তি রাতে পুকুর খনন করছেন। তার পরও সেগুলো বন্ধে তৎপর আছেন বলে জানান তিনি। আর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. খালিদ হাসানের ভাষ্য, তিন মাসে যৌথ অভিযান চালালেও ফসলি জমিতে পুকুর খনন পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। খনন বন্ধে জনপ্রতিনিধি, কৃষক, সচেতন নাগরিকদের সচেতনা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন এ কর্মকর্তা।