কর্ণফুলীতে অনলাইন জুয়ায় লাখপতি মাস্টার এজেন্ট

Posted on March 9, 2024

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলায় মুঠোফোন অ্যাপসের মাধ্যমে খেলা অনলাইন জুয়াড়িরা রাতারাতি অঢেল সম্পদশালী গড়ে পেশা পাল্টাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এদের পাল্লায় পড়ে জুয়ার লোভে সর্বস্বান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থী ও উঠতি তরুণেরা। অনলাইন জুয়ার নেশায় বুঁদ হওয়াতে বাড়ছে পারিবারিক কলহ আর অশান্তি।

মোবাইলে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইন জুয়া (বেটিং) পরিচালনা করে কর্ণফুলীতে লাখপতি আর কোটিপতি মাস্টার এজেন্টের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক।

এসব জুয়াড়িরা নিষিদ্ধ বেটিং সাইট থেকে অবৈধভাবে আয় করা অর্থ দিয়ে শহরে ও গ্রামে জমি, গাড়ি, বাড়িসহ বিপুল সম্পদও গড়ে তোলেছেন। যাদের ধারে কাছে ঘেঁষতে পারেনি দুদক, আয়কর কিংবা আইনশৃংখলা বাহিনী।

আর এ চক্রের প্রায় বেশির ভাগ সদস্যই শিকলবাহা ২ ও ৩ ওয়ার্ডের। রয়েছে চরলক্ষ্যা ও চরপাথরঘাটার ইছানগরের একাধিক জুয়াড়ি। যাদের এ টাকার কোন নির্ভরযোগ্য উৎস নেই। কিন্তু চালচলনে ভিআইপি। স্থানীয়দের ভাষায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।

জানা যায়, বেটিং পরিচালনার এসব অর্থের লেনদেন করা হয় মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে (ই-ট্রানজেকশন)। কিন্তু এরা কখনো গ্রেপ্তার হননি। তাদের বিরুদ্ধে কোন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা মানি লন্ডারিংয়ের মামলা নেই। তার কারণও স্বাভাবিক।

কেননা, এদের আস্তানায় এ যাবত কোন অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। ফলে, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘ ৭ বছর যাবত এরা মোবাইল হ্যান্ডসেটসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করে অনলাইনে জুয়া খেলার সাইট পরিচালনা করছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্মার্টফোনে নির্ধারিত কয়েকটি অ্যাপস ডাউনলোড করে সেখানে জুয়া খেলা চলে। এতে ‘ওয়ানএক্সব্যাট, মিলব্যাট, মোস্টব্যাট, বাবুএইটিএইট, ক্রিকেক্স, ক্যাসিনো জ্যাকপট সিটি, পারি, রুবি ফরচুনসহ দেশী বিদেশী অনেক অ্যাপস ও সাইটেই তাদের বিচরণ। এসব অ্যাপসে ১০ টাকা থেকে শুরু করে যেকোনো অঙ্কের টাকা দিয়ে শুরু করা যায়। পরিচালনা বাহিরের দেশে হলেও বাংলাদেশে এগুলোর স্থানীয় প্রতিনিধি (এজেন্ট) রয়েছে। হাজারে ৪০ টাকা কমিশন।

এসব জুয়া খেলা স্বাভাবিক গেমের মতো হওয়ায় প্রকাশ্যে খেলা হলেও আশপাশের মানুষ তা বুঝতে পারেন না। মনে করবে মোবাইল টিপসে। কিন্তু জুয়ায় খেলছে বেশির ভাগ স্মার্টফোনে।

শিকলবাহার মো. আলমগীর ও আবদুল করিম নামে দুই অভিভাবক বলেন, 'ছেলেদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে অনলাইন জুয়ার কারণে পড়ালেখায় মনোযোগ কম দিচ্ছে না। ছেলেদের ভবিষ্যৎ অনলাইন জুয়া নষ্ট করে দিচ্ছে। প্রশাসনের উচিত শিগগরই কিছু করা।'

মহানগর ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. ফজলে কায়সার জানান, 'অনলাইন জুয়া (বেটিং) সাইটগুলোর মাস্টার এজেন্ট হিসেবে দেশের বাইরে থাকা সুপার এজেন্টের কাছ থেকে প্রতিটি পিবিইউ (ভার্চ্যুয়াল কারেন্সি) ৬০ টাকার বিনিময়ে কিনতেন। পরে সাইটগুলোর ব্যবহারকারীদের কাছে প্রতিটি পিবিইউ ১৫০ টাকার বিনিময়ে এবং লোকাল এজেন্টের কাছে প্রতিটি পিবিইউ ১শ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন।'

তিনি আরও বলেন, 'এ কাজে অবৈধ অর্থের আদান-প্রদান মোবাইল ব্যাংকিং/ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা হয়। এখানে কারেন্সি হিসেবে পিবিইউ সাইটের নিজস্ব ভার্চ্যুয়াল কারেন্সি ব্যবহার করতো।'

ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) পুলিশের ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ হোসাইন শাজিন বলেন, সাইটগুলোতে এক তিন অনুপাতে বেটিং করা হয়। সাধারণ ইউজারের নির্দিষ্ট টার্গেট করা রান বা তার নির্দিষ্ট দল জিতলে বেটিংয়ের পিবিইউ পরিমাণে বেটিংয়ের শর্ত অনুসারে পিবিইউ ফেরত পায়। এভাবেই বেটিং অনলাইন জুয়া খেলা হয়। আর দ্রুত ধনী হওয়ার প্রতিযোগিতায় এই অন্ধকার পথে কোনো কিছু না ভেবেই পা বাড়াচ্ছে উঠতি বয়সীরা।'

কর্ণফুলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জহির হোসেন বলেন, 'অনলাইন জুয়া ও সরঞ্জাম নিয়ে জুয়া খেলার বিষয়ে অবশ্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যা আমরা পুলিশিং 'ওপেন হাউজ ডে' তে বলেছি। আপনারা সুনির্দিষ্ট তালিকা দিলে সে অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

সিএমপি বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘কিছু অনলাইন জুয়ার সাইট বিটিআরসি বন্ধ করছে। সাইবার অপরাধের মাধ্যমে ডলার কামানোর মোহে পড়ছেন যুবকরা। এতে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও নষ্ট হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন এসব বন্ধে তৎপরতা চালাচ্ছে। পাশাপাশি এসব জুয়া বন্ধ করতে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতাও দরকার।’