উরস (ﻋﺮﺱ) শব্দটি দৃষ্টিভঙ্গির রোষানলে

Posted on March 4, 2024

।। মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী ।।
উরস’ (ﻋﺮﺱ) আরবি শব্দ এবং ইসলামি পরিভাষা। এর আভিধানিক অর্থ বিবাহ-শাদী। বর ও কনে উভয়কে আরবীতে ‘আরূস’ ( ﻋﺮﻭﺱ ) বলা হয়। বাসর, প্রীতিভোজ, ওলীমাহ্ ( ﻭﻟﻴﻤﻪ – ﻃﻌﺎﻡ – ﺯﻓﺎﻑ) কেও উরস বলা হয়। এছাড়াও উরস অর্থ মহামিলন, আনন্দের মহাঘুম, দুলহানের আলিঙ্গন ইত্যাদি। এর বহুবচন হয় ‘আ’রাস’ ও ‘উরূসাত’ ( ﺍﻋﺮﺍﺱ ﻭﻋﺮﻭﺳﺎﺕ )।

ইসলামি পরিভাষায়, বাইয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা'য়ালার ধারার অলি-আউলিয়া, সূফী-দরবেশ, গাউস-কুতুব ও পীর-মুর্শিদগণের ইন্তেকাল ( ওফাত ) দিবসকে ‘উরস’ বলা হয়। এর ভিত্তি হাদীসে নববীতেও রয়েছে, মৃত ব্যক্তিকে সমাহিতেরপর কবরে জীবিত করে মুনকার ও নাকীর কিছু প্রশ্ন করে, প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারলে মুনকির-নাকীর তাকে বলে - ﻧَﻢْ ﻛَﻨَﻮْﻣَﺔِ ﺍﻟْﻌَﺮُﻭْﺱِالَّتِىﻻَﻳُﺆْﻗِﻈُﻪ ﺍِﻻَّ ﺍَﺣَﺐُّ ﺍَﻫْﻠِﻪ ﺍِﻟَﻴْﻪِ অর্থাৎ ঐ দুলহার ন্যায় ঘুমিয়ে পড়, যাকে পরিবারে তার প্রিয়তম ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ জাগাবে না ( মিশকাত শরীফ, অধ্যায় আসবাতে আজাবুল কবুর )। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো মুনকার ও নাকীর ফিরিশ্তাদ্বয় প্রশ্নের সঠিক উত্তর দাতাকে সম্মানের সহিত ‘আরূস’ ( ﻋَﺮُﻭْﺱ ) শব্দ সম্বোধন করে। কবরে যে বিবাহ-শাদীর কোন কর্মকাণ্ড নেই তা কিন্তু আমরা সকলেই জানি। মূলত মহাআরাম বা মহাশান্তিময় ঘুমকে বুঝানোর জনই বাসরের রাত্রির দুলহা-দুহানির উদাহরণে কবরে মুনকার -নাকীর আরুস শব্দটি ব্যাবহার করেছে তার অর্থ এ নয়যে কবরে বিবাহ-শাদীর বিষয়াদি আছে। আউলিয়ায়ে কেরাম ইন্তেকালের ( ওফাত ) মাধ্যমে মাশুক মাওলার সাথে মহামিলনে মিলিত হন। ঐ মিলনটি সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দের। উরসের অনেকগুলো অর্থের মধ্যে মিলনও একটি অর্থ। বাসর রাত্রির বর এবং কনের শান্তিময় ঘুম ও মিলন উভয়কে দৃষ্টান্ত ধরে আউলিয়ায়ে কেরামের ইন্তেকাল ( ওফাত ) দিবস বা সময়কে তাসাওউফমহলে ‘উরস’ ( ﻋُﺮْﺱ) বলে থাকে। এছাড়াও আরো একটি বিশেষত্ব হলো প্রতিটি ব্যক্তি নূরনবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার দেখার সৌভাগ্য হবে, যখন মুনকার ও নাকীর জিজ্ঞাসা করবে ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺖَ ﺗَﻘُﻮْﻝُ ﻓِﻰْ ﺣَﻖِّ ﻫﺬَﺍ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ অর্থাৎ রাউফুর রাহীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার দিকে ইশারা করে এ নূরানী সত্তা কে? তখন আউলিয়া কেরাম দীদারে মুস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পেয়ে সে আত্মহারা হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ইতিবাচক উত্তর দেবে। উভয় জাহানের সরদারের দীদার লাভ করে ধন্য হওয়াতে ঐ সময় তার অনেক আনন্দ লাগবে। তাই আউলিয়া কেরামের শান ও মর্যাদায় ঐ দিন বা ক্ষণকে ‘উরস’ ( ﻋُﺮْﺱ)-এর দিন অথবা দিবস বলে সম্মান দেখানো হয়।

আউলিয়া আল্লাহ (রহঃ) তাদের কবরে জীবিত থাকেন।

ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻤَﻠِﻚِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟﺸَّﻮَﺍﺭِﺏِ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﺑْﻦُ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﻣَﺎﻟِﻚٍ ﺍﻟﻨُّﻜْﺮِﻱُّ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟْﺠَﻮْﺯَﺍﺀِ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻗَﺎﻝَ ﺿَﺮَﺏَ ﺑَﻌْﺾُ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺧِﺒَﺎﺀَﻩُ ﻋَﻠَﻰ ﻗَﺒْﺮٍ ﻭَﻫُﻮَ ﻻَ ﻳَﺤْﺴِﺐُ ﺃَﻧَّﻪُ ﻗَﺒْﺮٌ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻓِﻴﻪِ ﺇِﻧْﺴَﺎﻥٌ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺳُﻮﺭَﺓَ ﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﺍﻟْﻤُﻠْﻚُ ﺣَﺘَّﻰ ﺧَﺘَﻤَﻬَﺎ ﻓَﺄَﺗَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻧِّﻲ ﺿَﺮَﺑْﺖُ ﺧِﺒَﺎﺋِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﻗَﺒْﺮٍ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻻَ ﺃَﺣْﺴِﺐُ ﺃَﻧَّﻪُ ﻗَﺒْﺮٌ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻓِﻴﻪِ ﺇِﻧْﺴَﺎﻥٌ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺳُﻮﺭَﺓَ ﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﺍﻟْﻤُﻠْﻚُ ﺣَﺘَّﻰ ﺧَﺘَﻤَﻬَﺎ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ” ﻫِﻲَ ﺍﻟْﻤَﺎﻧِﻌَﺔُ ﻫِﻲَ ﺍﻟْﻤُﻨْﺠِﻴَﺔُ ﺗُﻨْﺠِﻴﻪِ ﻣِﻦْ ﻋَﺬَﺍﺏِ ﺍﻟْﻘَﺒْﺮِ ” . ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻫَﺬَﺍ ﺣَﺪِﻳﺚٌ ﺣَﺴَﻦٌ

ইবনু আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক সাহাবী একটি কবরের উপর তার তাবু খাটান… তিনি জানতেন না যে, সেটি একটি কবর…. তিনি হঠাৎ বুঝতে পারেন যে, কবরের ভিতরে একটি লোক সূরা আল-মুলক পাঠ করছে। সে তা পাঠ করে সমাপ্ত করলো… তারপর তিনি নাবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বললেনঃ ইয়া আল্লাহর রাসূল! আমি একটি কবরের উপর তাঁবু খাটাই…আমি জানতাম না যে, তা কবর। হঠাৎ বুঝতে পারি যে, একটি লোক সূরা আল-মুলক পাঠ করছে এবং তা সমাপ্ত করেছে…. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ সূরাটি প্রতিরোধকারী নাজাত দানকারী… এটা কবরের আযাব হতে তিলাওয়াতকারীকে নাজাত দান করে।
(ক) সুনানে তিরমিযি,অধ্যায়:ফাজাএলে কুরান,হাদীস নং-২৮৯০, (খ) মাআজুমুল,কাবীর,হাদীস নং ১২৮০১।
হাদীসে লক্ষ করতে পারেন যে, কবরে ভিতরে একজন সূরা মুলক পাঠ করছে। তার অর্থ সে যদি জীবিত না থাকে সূরা মুলক পাঠ করতে পারে কি? অর্থাৎ বুঝা যায় আল্লাহর ওলীরা (রহ:) কোরআন পাঠের মত আমলও কবরে মধ্যে করে এবং আর একটা জিনিষ লক্ষ করার বিষয় যে, আল্লাহর কুদরতে সেই সাহাবীকে(রা আ) জানিয়ে দিলেন তিনি কবরে কোরআনের আয়াত পাঠ করছেন। এইবার আউলিয়া আল্লাহ (রহ:) তারা যে কবরে জীবিত তা নিয়ে যারা সন্দেহ করে তাদের জন্য এই ঘটনা দৃষ্টান্ত স্বরুপ নয় কি?

শুধু আউলিয়া কেরাম কেনো সাধারণ মানুষের মধ্যে কতিপয় মানুষও কবরে জীবিত থাকে।

ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕُ ﺑْﻦُ ﺇِﺳْﻤَﺎﻋِﻴﻞَ ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻭَﻛِﻴﻊٌ ، ﻭَﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﻧُﻤَﻴْﺮٍ , ﻋَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺑِﻴﻊِ ﺑْﻦِ ﺳَﻌْﺪٍ ﺍﻟْﺠُﻌْﻔِﻲِّ ، ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑْﻦِ ﺳَﺎﺑِﻂٍ ، ﻋَﻦْ ﺟَﺎﺑِﺮِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ” ﺣَﺪِّﺛُﻮﺍ ﻋَﻦْ ﺑَﻨِﻲ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻓِﻴﻬِﻢُ ﺍﻷَﻋَﺎﺟِﻴﺐُ ، ﺛُﻢَّ ﺃَﻧْﺸَﺄَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺧَﺮَﺟَﺖْ ﺭُﻓْﻘَﺔٌ ﻣَﺮَّﺓً ﻳَﺴِﻴﺮُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻓَﻤَﺮُّﻭﺍ ﺑِﻤَﻘْﺒَﺮَﺓٍ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻟِﺒَﻌْﺾٍ : ﻟَﻮْ ﺻَﻠَّﻴْﻨَﺎ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﺛُﻢَّ ﺩَﻋَﻮْﻧَﺎ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻌَﻠَّﻪُ ﻳُﺨْﺮِﺝُ ﻟَﻨَﺎ ﺑَﻌْﺾَ ﺃَﻫْﻞِ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﻤَﻘْﺒَﺮَﺓِ ﻓَﻴُﺨْﺒِﺮُﻧَﺎ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺼَﻠُّﻮﺍ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﺛُﻢَّ ﺩَﻋَﻮْﺍ ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻫُﻢْ ﺑِﺮَﺟُﻞٍ ﺧِﻼﺳِﻲٍّ ﻗَﺪْ ﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﺮٍ ﻳَﻨْﻔُﺾُ ﺭَﺃْﺳَﻪُ ، ﺑَﻴْﻦَ ﻋَﻴْﻨَﻴْﻪِ ﺃَﺛَﺮُ ﺍﻟﺴُّﺠُﻮﺩِ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﻫَﺆُﻻﺀِ ﻣَﺎ ﺃَﺭَﺩْﺗُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﻫَﺬَﺍ ؟ ﻟَﻘَﺪْ ﻣِﺖُّ ﻣُﻨْﺬُ ﻣِﺎﺋَﺔِ ﺳَﻨَﺔٍ ﻓَﻤَﺎ ﺳَﻜَﻨَﺖْ ﻋَﻨِّﻲ ﺣَﺮَﺍﺭَﺓُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔِ ، ﻓَﺎﺩْﻋُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺃَﻥْ ﻳُﻌِﻴﺪَﻧِﻲ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﻨْﺖُ ” .
হজরতে জাবীর বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা বনী ইসরাইলদের ঘটনা বর্ণনা করো।কেননা তাদের মাঝে অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল। এরপর রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ঘটনা বর্ণনা করলেন, একদা বনী ইসরাইলের কয়েকজন বন্ধু বের হল। তারা একটি কবরস্থানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিল। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলো আমরা যদি, দুই রাকাত নামায আদায় করে আল্লাহর নিকট দোয়া করি। তাহলে আল্লাহ তা'য়ালা হয়তো কবরের কোন ব্যক্তিকে আমাদের সামনে উপস্থিত করবেন। সে মৃত্যু সম্বন্ধে আমাদেরকে বলবে। অতঃপর তারা দুরাকাত নামাজ আদায় করল। এরপর আল্লাহর কাছে দোয়া করল। হঠাৎ এক ব্যক্তি মাথা থেকে মাটি পরিষ্কার করতে করতে কবর থেকে বের হয়ে এলো। তার কপালে সিজদার চিহ্ন ছিল। সে বলল তোমরা কী চাও ? আমি একশ বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেছি। এখনও আমার দেহ থেকে মৃত্যুর যন্ত্রনা হ্রাস পায়নি। আল্লাহর নিকট দোয়া করো, যাতে তিনি আমাকে পূর্বের স্থানে (কবরে) ফেরত পাঠিয়ে দেন। (ক) মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা,হাদীস নং-২৫৯০৫ (খ) ইমাম ইবনে হাজার আস্কালানী, মাসানিদে সামানিয়া,হাদীস নং-৮০৭
(গ) মুসনাদে আবদ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-১১৬৪
(ঘ) ফাওয়াইদে তামাম রাযি, পৃষ্ঠা-২১৭
(ঙ) তাম্বিউল গাফেলিন,আহাদীসে আম্বীয়া ওয়াল মুরসালিন,পৃষ্ঠা-১১ (চ) ইবনে আবি শাইবাহ,আল আদাব, পৃষ্ঠা-২০৬ (ছ) ইবনে আবিদ দুনিয়া,মান আশা বা’দাল মাউত,পৃষ্ঠা-৫৮ (জ) ফুনুন আল আজাইব, পৃষ্টা-১১৯,১২০ (ঝ) মাজালিশ মিন আমালি,পৃষ্ঠা-৩৯৩
(ঞ) খাতিব বাগদাদী,আল-জামে আখলাকির রাবী হাদীস নং-১৩৭৮ (ট) ইবনে আবি দাউদ, আল-বাআস, হাদীস নং-৫ (ঠ) আজ-জুহদ,ইমাম ওয়াকী ইবনে জাররাহ, পৃষ্ঠা-৫৪ (ড)ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল,কিতাব- আজ-জুহদ,পৃষ্ঠা-৮৮ (ঢ) মাজালিস মিন আমালি ইবনে মান্দাহ, ইবনে মান্দাহ, হাদীস নং- ৩৯৩
(ণ) ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতী,শরহুস সুদুর,পৃষ্ঠা-৪৩।

‘উরস’ পালনের শরীয়ার ভিত্তি বা দলীল

প্রতি বছর ওফাত দিবসে বুজুর্গব্যক্তি কবর বা আউলিয়া কেরামের মাজার জিয়ারত, কোরআন কারীম তিলাওয়াত, সাদ্ক্বা-খায়রাত, হালাল পশু জবেহ করে তাবাররুকের ব্যবস্থা। এ সমস্ত কাজ ‘উরস’ ‘(ﻋﺮﺱ) উপলক্ষে করা হয়। শরীয়ত মতে এসব কর্মসূচি শুধু বৈধই নয়, বরং অনেক সাওয়াব এবং ফজিলতের কাজ। ইবনে আবী শায়বাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর বর্ণনা-
ﺍِﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻛَﺎﻥَ ﻯَﺄْﺗِﻰْ ﺷُﻬَﺪَﺁﺀَ ﺃُﺣُﺪٍ ﻋَﻠﻰ ﺭَﺃْﺱِ ﻛُﻞِّ ﺣَﻮْﻝٍ

অর্থাৎ নিশ্চয় নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক বছরের মাথায় উহুদের শহীদগণের কবরগুলোর নিকট যেতেন।

ﻋَﻦْ ﺭَﺳُﻮْﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺃَﻧَّﻪ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺄْﺗِﻰْ ﻗُﺒُﻮْﺭَ ﺷُﻬَﺪَﺁﺀٍ ﺍُﺣُﺪٍ ﻋَﻠﻰ ﺭَﺃْﺱِ ﻛُﻞِّ ﺣَﻮْﻝٍ ﻓَﻴَﻘُﻮْﻝُ ﺳَﻼَﻡٌ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﺻَﺒَﺮْﺗُﻢْ ﻓِﻨِﻌْﻢَ ﻋُﻘْﺒَﻰ ﺍﻟﺪَّﺍﺭِﻭَﺍﻟْﺨُﻠَﻔَﺂﺀُ ﺍَﻟْﺎَﺭْﺑَﻌَﺔُ ﻫٰﻜَﺬَﺍ ﻛَﺎﻧُﻮْﺍ ﻳَﻔْﻌَﻠُﻮْﻥَ

অর্থাৎ কা'বায়ে কাউছায়িন সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক বছর নির্দিষ্ট তারিখে উহুদের শোহাদা-ই কেরামের মাজারে হাজির হতেন এবং তাদেরকে সালাম পেশ করে দোয়া করতেন। খোলাফা-ই রাশেদীনগণও এ আমল করতেন। শায়খ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেন,
ﺩﻭﻡ ﺁﻧﻜﻪ ﺑﻬﻴﺌﺖ ﺍﺟﺘﻤﺎﻋﻰ ﻣﺮﺩﻣﺎﻥ ﻛﺜﻴﺮ ﺟﻤﻊ ﺷﻮﻧﺪ ﻭﺧﺘﻢ ﻛﻼﻡ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺎﺗﺤﻪ ﺑﺮﺷﻴﺮﻳﻨﻰ ﻭﻃﻌﺎﻡ ﻧﻤﻮﺩﻩ ﺗﻘﺴﻴﻢ ﺩﺭﻣﻴﺎﻥ ﺣﺎﺿﺮﺍﻥ ﻛﻨﻨﺪ ﺍﻳﮟ ﻗﺴﻢ ﻣﻌﻤﻮﻝ ﺩﺭﺯﻣﺎﻧﻪ ﭘﻴﻐﻤﺒﺮﺧﺪﺍ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺧﻠﻔﺎﮰ ﺭﺍﺷﺪﻳﻦ ﻧﻪ ﺑﻮﺩ ﺍﮔﺮ ﻛﺴﮯﺍﻳﮟ ﻃﻮﺭ ﻛﻨﺪ ﺑﺎﻙ ﻧﻴﺴﺖ ﺑﻠﻜﻪ ﻓﺎﺋﺪﻩ ﺍﺣﻴﺎﺀ ﺍﻣﻮﺍﺕ ﺭﺍﺣﺎﺻﻞ ﻣﻰ ﺷﻮﺩ

অর্থাৎ দ্বিতীয়ত অনেক লোক একত্রিত হয়ে খতমে কোরআন করবে, খাবার ও শিরনী রান্না করে ফাতেহার মাধ্যমে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে বন্টন করবে। যদিও এ কাজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও খোলাফা-ই রাশেদীনের যুগে ছিলোনা।কিন্তু এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন অসুবিধা নেই; বরং এতে জীবিত ও মৃত সকলেরই উপকার সাধিত হয়।

মাওলানা আব্দুল হাই দেহলভী বর্ণনা করেন যে,
ﻛﻪ ﺷﻴﺦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺤﻖ ﻣﺤﺪﺙ ﺩﻫﻠﻮﻯ ﺍﺯ ﺷﻴﺦ ﺧﻮﺩ ﻧﻘﻞ ﻣﻰ ﺳﺎﺯﺩ ﻛﻪ ﻓﺮﻣﻮﺩ ﻛﻪ ﺍﻳﮟ ﻋﺮﺱ ﺩﺭ ﺯﻣﺎﻥ ﺳﻠﻒ ﻧﺒﻮﺩ ﺍﺯ ﻣﺴﺘﺤﺴﻨﺎﺕ ﻣﺘﺄﺧﺮﻳﻦ ﺍﺳﺖ
অর্থাৎ শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি নিজ ওস্তাদের সূত্রে বর্ণনা করেন যে, প্রচলিত উরস শরীফ সালফ-ই সালেহীনের যুগে না থাকলেও পরবর্তী ওলামা-ই কেরামের মতে মুস্তাহাসান, কোরআন-সুন্নাহর আলোকে সাব্যস্ত আমল। হাজী এমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী (দেওবন্দী আলিমদের পীর) ‘ফয়সালা-ই হাফতে মাসয়ালা’য় ওরস বৈধ বলে জোর দিয়ে বলেন, ফক্বীর (নিজ) এর বিষয়ে ত্বরীকা এইযে, আমি প্রত্যেক বছর আমার পীর-মুর্শিদের জন্য ঈসালে সাওয়াবের ব্যবস্থা এভাবে করি যে, প্রথমে কোরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা হয়। আর মাঝে মধ্যে সময়ানুপাতে মীলাদ শরীফও পাঠ করা হয়। এরপর উপস্থিত সবাইকে খাবার তাবাররুক বিতরণ করা হয়।
আল্লামা আজীজুল হক্ব শেরে বাংলা রহমাতুল্লাহি আলায়হি তিনার ফাতাওয়া-ই আজীজিয়াতে উল্লেখ করেন যে,
ﻭَﻓِﻰْ ﺳِﺮَﺍﺝِ ﺍﻟْﻬِﺪَﺍﻳَﺔِ َﻟِﻤَﻮْﻻَﻧَﺎ ﺟَﻼَﻝُ ﺍﻟﺪِّﻳْﻦِ ﺍﻟْﺒُﺨَﺎﺭِﻯِّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔُ ﻓِﻰْ ﺣَﺎﺷِﻴَﺔِ ﺍﻟْﻤَﻈْﻬَﺮِﻯِّ ﻭَﺗُﺤْﺘَﺎﻁُ ﻓِﻰْ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔِ ﺍﻟَّﺘِﻰْ ﻧُﻘِﻞَ ﺭُﻭْﺣَﻪ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﻓَﺎِﺫَﺍ ﺍَﺭْﻭَﺍﺡُ ﺍﻟْﺎَﻣْﻮَﺍﺕَ ﺗَﺄْﺗُﻮْﻥَ ﻓِﻰْ ﺍَﻳَّﺎﻡِ ﺍﻟْﺎَﻋْﺮَﺍﺱِ ﻓِﻰْ ﻛُﻞِّ ﻋَﺎﻡٍ ﻓِﻰْ ﺫَﺍﻟِﻚَ ﺍﻟْﻤَﻮْﺿِﻊِ ﻓِﻰْ ﺗِﻠْﻚَ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔِ ﻭَﻳَﻨْﺒَﻐِﻰْ ﻳُﻄْﻌَﻢَ ﺍﻟﻄُّﻌَﺎﻡُ ﻭَﺍﻟﺸَّﺮَﺍﺏُ ﻓِﻰْ ﺗِﻠْﻚَ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔِ ﻓَﺎِﻥَّ ﺫَﺍﻟِﻚ ﻳُﻔْﺮَﺡُ ﺍَﺭْﻭَﺍﺣَﻬُﻢْ ﻭَﺍِﻥَّ ﻓِﻴْﻪِ ﺗَﺄْﺛِﻴْﺮًﺍ ﺑَﻠِﻴْﻐًﺎ ‏( ﻫﺪﻳﺔ ﺍﻟﺤﺮﻣﻴﻦ)

অর্থাৎ মাওলানা জালালুদ্দীন বোখারী হাশিয়া-ই মাযহারীতে ‘সিরাজুল হেদায়া’য় বর্ণনা করেন, ঐ সময়কে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে, যখন বুজুর্গব্যক্তির রূহ কব্জ হয়েছে। রূহ প্রত্যেক বছর উরস চলাকালীন ঐ সময়ে ঐ স্থানে হাজির হয়। অতএব, সে সময় খাবার-তাবাররুকাত পরিবেশন করা দরকার। এতে তাদের রূহ আনন্দিত হয়। উপরোল্লিখিত দলিলাদির আলোকে সাব্যস্ত হয় যে, উরস শরীফ পালন করা ইসলামী অনুষ্ঠানাদির অন্তর্ভুক্ত। এটা শুধু জায়েজ নয়; বরং সাওয়াবের কাজ ও ঐ অনুষ্ঠানে প্রথমে জিয়ারত করা হয়। আর জিয়ারত করা কোরআন-সুন্নাহ্ দ্বারা প্রমাণিত। হাদীসে রাসূল মাকবুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
ﻧَﻬَﻴْﺘُﻜُﻢْ ﻋَﻦْ ﺯِﻳَﺎﺭَﺓِ ﺍﻟْﻘُﺒُﻮْﺭِ ﻓَﺰُﺭُﻭْﻫَﺎ ﺭَﻭَﺍﻩُ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻰْ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻛُﻨْﺖُ ﻧَﻬَﻴْﺘُﻜُﻢْ ﻋَﻦْ ﺯِﻳَﺎﺭَﺓِ ﺍﻟْﻘُﺒُﻮْﺭِ ﻓَﺰُﺭُﻭْﺍ ﻓِﺎِﻧَّﻬَﺎ ﺗُﺰْﻫِﺪُ ﻓِﻰ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﺗُﺬْﻛِﺮُ ﺍﻟْﺎﺧِﺮَﺓَ ‏( ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ )
অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে প্রথমে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা জিয়ারত কর। কেননা, এটা দুনিয়া বিমুখতাকে বাড়িয়ে দেয় এবং আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। উরসে কোরআন খতম ও অন্যান্য জিকির-আজকার করা হয়। যা কোরআন-সুন্নাহ মতে সম্পূর্ণ নেক আমল। সেখানে বুযুর্গ ও মৃত ব্যক্তির স্মারক আলোচনা করা হয়, যার হাদীসে পাকে আমাদের উপর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে-

ﻋَﻦْ ﺍِﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍُﺫْﻛُﺮُﻭْﺍ ﻣَﺤَﺎﺳِﻦَ ﻣَﻮْﺗَﺎﻛُﻢْ ﻭَﻛُﻔُّﻮْﺍ ﻋَﻦْ ﻣَﺴَﺎﻭِﻳْﻬِﻢْ ‏( ﺍﺑﻮﺍ ﺩﺍﺅﺩـ ﺗﺮﻣﺬﻯ ـ ﺣﺎﻛﻢ ـ ﺑﻴﻬﻘﻰ ـ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ ﺍﻟﺼﻐﻴﺮ )

অর্থাৎ: হযরত ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল-ই পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের ঈমানদার মৃত ব্যক্তিদের ভাল দিকগুলো তুলে ধরো এবং তাদের মন্দ বিষয়সমূহের চর্চা থেকে বিরত থাক। তাছাড়া হাদীসে নববীতে আরো উল্লেখ আছে,
ﺫِﻛْﺮُ ﺍﻟْﺎَﻧْﺒِﻴَﺂﺀِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌِﺒَﺎﺩَﺓِ ﻭَﺫِﻛْﺮُ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤِﻴْﻦَ ﻛَﻔَّﺎﺭَﺓٌ ﻭَﺫِﻛْﺮُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﺻَﺪَﻗَﺔٌ ﻭَﺫِﻛْﺮُ ﺍﻟْﻘَﺒْﺮِ ﻳُﻘَﺮِّﺑُﻜُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ
অর্থাৎ নবীগণের আলোচনা ইবাদত, নেককার বান্দাদের আলোচনা কাফ্ফারা, মৃত্যুকে স্মরণ করা, সদক্বাহ্ এবং কবরের আলোচনা তোমাদেরকে জান্নাতের নিকটস্থ করে দেয়। এমনকি উরসে তাবাররুক বিতরণ করা হয়। অপরকে খাবার পরিবেশন সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত আছে,
ﺍَﻯُّ ﺍﻟْﺎِﺳْﻼَﻡِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻗَﺎﻝَ ﺗُﻄْﻌِﻢُ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡَ ﺗَﻘْﺮَﺃُ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡَ ﻋَﻠﻰ ﻣَﻦْ ﻋَﺮَﻓْﺖَ ﻭَﻣَﻦْ ﻟَّﻢْ ﺗَﻌْﺮِﻑْ ـ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍَﻳْﻀًﺎ ﺍَﻃْﻌِﻤُﻮْﺍ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡَ ﻭَﺃَﻓْﺸُﻮْﺍ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡَ ﺗُﻮَﺭِّﺛُﻮْﺍ ﺍﻟْﺠِﻨَﺎﻥَ
অর্থাৎ ইসলামের উত্তম কাজ খানা খাওয়ানো এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে অধিক হারে সালাম দেয়া এটাও এরশাদ করেছেন, তোমরা খানা খাওয়াও, বেশি পরিমাণে সালাম দাও, তাহলে বেহেশতের মালিক হয়ে যাবে। উরসে উপস্থিত ব্যক্তিরাই হলো মেহমান, আর মেহমানদের অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন করা ঈমানের পরিপূর্ণতা। যেমন হাদীসে আরো উল্লেখ আছে যে,
ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺆْﻣِﻦُ ﺑِﺎﻟﻠﻪِ ﻭَﺑِﺎﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺎﺧِﺮِ ﻓَﻠْﻴُﻜْﺮِﻡْ ﺿَﻴْﻔَﻪ
অর্থাৎ যে আল্লাহ্ ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানের সমাদর করে। উপরোক্ত আমলসমূহের সমন্বয়ে ওরসে পাক উদ্যাপিত হয়, তাই ওরস পালন ইসলামের অনুষ্ঠানাদি পালনের মধ্যে অন্যতম এবং সাওয়াবের কাজ।মিশকাত, বাবে আসবাতে কবুর, ফাতাওয়া-ই-শামী ১ম খন্ড-বাবু জিয়ারতিল ক্বুবূর, তাফসীর-ই কবীর, তাফসীর-ই-র্দুরে মনসূর, ইবনে মুনযের ইবনে মার দিওয়াইহ্ বর্ণনা সূত্রে হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, ফাতাওয়া-ই আযীযিয়্যাহ্, কৃত. গাযী শেরে বাংলা (রহ.), পৃ. ৩৬ (পুরাতন ছাপা), মেশকাত শরীফ বাবু যিয়ারাতিল ক্বুবূর, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, হাকিম, বায়হাক্বী, আল জামে‘ঊস সগীর, ইমাম সুয়ূত্বী, ৯. মুসনাদে ফেরদাউস আল জামেউস সগীর, ইমাম সুয়ূত্বী: ২য় খন্ড, পৃ. ১৯, সহীহ্ বুখারী শরীফ)ম খন্ড, পৃ. ৬, ত্বাবরানী, আল-জামেউস্ সগীর, ইমাম সুয়ূত্বী, পৃ. ৪৪ এবং মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ, বোখারী, মুসলিম ও আল-জামে‘ঊস সগীর, ইমাম সুয়ূত্বী।

উরস শব্দের শব্দগত অস্তিত্ব ইসলামি পরিভাষায় ইতিবাচক। হাদীস গ্রন্থগুলোতেও কবর অধ্যায়ে উরস সম্পর্কিত হাদীস বর্ণিত আছে। উরস বিষয় ইসলামি পণ্ডিতগণের পক্ষে-বিপক্ষে যে বক্তব্য তা শুধু দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য ছাড়া আর কিছুই না। এককথায় বলা চলে 'উরস' (ﻋﺮﺱ) শব্দটি দৃষ্টিভঙ্গির রোষানলে। যারা প্রচলিত উরসের বিপক্ষে তাদের লেখা পড়লেও উরসের সমর্থন মিলে। কবরে বিবাহ-শাদীর কোন বিষয়বস্তু নেই, তথাপিও উরস শব্দটি উদাহরণ স্বরূপ ফিরিস্তাদ্বয় নিয়েছে। অবশ্যই তা আল্লাহ তা'য়ালার নির্দেশিত। কারণ আল্লাহর নির্দেশ পালন ছাড়া ফিরিশ্তা আর কিছুই ক্ষমতা বা শক্রি রাখেনা। তাসাওউফের গুণীজনদের গ্রন্থ পড়লেও দেখা যায় তারা মহামিলনের সূত্র ধরে উরস শব্দের আনুষ্ঠানিকতা করে থাকে। মুসলিম ব্যক্তিদের উরস শব্দের শব্দগত বিরূপ পোষণ কোরআন-হাদীস মতে সমীচীন না এবং আনুষ্ঠানিক উরস সম্পর্কেও অপপ্রচার, মিথ্যাচার, বিরুদ্ধচারণ ইসলাম পরিপন্থী অপতৎপরতা বলে ইসলামি দালিলে প্রমাণিত। সুতরাং মানুষের সৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য ছিলো আছে থাকবে। নিজের বা ইজমের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে না মিললেই ইসলাম স্বীকৃত বিষয়ে হলেও সে বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে হবে এমন মানসিকতা থেকে আমাদের প্রত্যেকের সরে আসা প্রয়োজন।

লেখকঃ মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী সভাপতি, বাংলাদেশ সোস্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম।