এসএমই ও ভোক্তা ঋণ বাড়াবে ঢাকা ব্যাংক: সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ব্যবস্থপনা পরিচালক, ঢাকা ব্যাংক লি:

Posted on July 9, 2017

ঢাকা ব্যাংক ৫ জুলাই যাত্রার ২২ বছর পূর্ণ করেছে। এ উপলক্ষে ব্যাংকটির কার্যক্রম, অর্জন, আগামী দিনের পরিকল্পনা এবং ব্যাংক খাতের কিছু বিষয়ে কথা বলেছেন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।

প্রশ্ন:ঢাকা ব্যাংক ২২ বছর পার করে ২৩ বছরে পা দিল। গ্রাহকদের জন্য নতুন কী ভাবছেন?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: ঢাকা ব্যাংক শুরু থেকে করপোরেট ও হোলসেল ব্যাংকিং করে আসছে। এখন এসএমই ও ভোক্তা ঋণ বাড়ানোর মাধ্যমে বেশি মানুষের কাছে সেবা পেঁৗছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী দু'বছরের মধ্যে আমরা ব্যাংকের অর্ধেক ঋণ এসএমই ও কনজুমার খাতে দেবো, যা বর্তমানে ৩০ শতাংশ। একই সঙ্গে কম সুদে বেশি ঋণ বিতরণের চেষ্টা থাকবে।

প্রশ্ন: কম সুদে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ বিষয়ে একটু বিস্তারিত বলুন।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: এতদিন মোট আমানতের ৬০ ভাগ এসেছে মেয়াদি আমানত থেকে, যা উচ্চ সুদবাহী। এখন মেয়াদি আমানতের পাশাপাশি কম সুদের আমানতের জন্য নতুন নতুন প্রোডাক্ট ডিজাইন করা হচ্ছে। এতে সামগ্রিকভাবে তহবিল ব্যয় কমে আসবে। ফলে পর্যায়ক্রমে ঋণের সুদহারও কমবে।

প্রশ্ন: কনজুমার বা ভোক্তা ঋণ বাড়ানোর উদ্যোগের কথা বললেন। কোন কোন খাতে ঋণ দেবেন?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: কনজুমার ঋণের প্রধান দুটি খাত হচ্ছে গৃহনির্মাণ ও গাড়ি কেনার জন্য ঋণ। এ দুই খাতে ঋণ বাড়ানো হবে। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ড তো আছেই। বর্তমানে ব্যাংকের মোট ঋণের ৩ শতাংশ ভোক্তা ঋণ। এটা ২০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রশ্ন: গ্রাহকদের জন্য নতুন কোন কোন সেবা চালু করার পরিকল্পনা আছে আপনাদের?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: আমরা বেশকিছু নতুন পরিকল্পনা নিয়েছি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডিজিটাল সেবা বাড়ানো। এ জন্য 'ডিজিটাল ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্ট' চালু করতে যাচ্ছি। এ বিভাগ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গ্রাহকদের জন্য আধুনিক সেবা উদ্ভাবনে কাজ করবে। ইতিমধ্যে আমরা ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট সলিউশন, ট্রেড ক্লাউড, মোবাইল অ্যাপস, টেক্সটভিত্তিক লাইভ চ্যাট চালু করেছি। আগামীতে এ ধরনের আরও সেবা আমরা চালু করব। গ্রাহকদের প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা বাড়ানো এখন ঢাকা ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য।

প্রশ্ন: সেবাগুলো সম্পর্কে একটু বিস্তারিত বলুন।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট সলিউশন বা 'সি' সলিউশন হচ্ছে, ঢাকা ব্যাংকের কোনো গ্রাহক চাইলে তাদের সকল বিল এ ব্যবস্থায় পরিশোধ করতে পারবে। গ্রাহক তার বিলের তালিকা দিয়ে দিলে ব্যাংক ইএফটিএন ব্যবস্থায় সেগুলো পাওনাদারদের হিসাবে পেঁৗছে দেবে। আর ট্রেড ক্লাউড হচ্ছে আমদানি-রফতানিতে একটি বিশেষ ব্যবস্থা। এলসি ডকুমেন্ট নিয়ে গ্রাহককে ব্যাংক শাখায় আসতে হবে না। এটি একটি ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ। গ্রাহক এই অ্যাপ ব্যবহার করে ডকুমেন্ট পাঠাতে পারবেন এবং কোন ডকুমেন্ট কী অবস্থায় আছে তাও জানতে পারবেন। এলসি কনফারমেশন সম্পর্কেও জানতে পারবেন এ ব্যবস্থায়। এতে মোবাইলে এসএমএসও যাবে। ঢাকা ব্যাংক গো নামে মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে। এর মধ্যে গ্রাহকরা নিজেরাই ঢাকা ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবেন। মোবাইল রিচার্জ করা, অন্যান্য ইউটিলিটি বিল দেওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধা পাবেন।

প্রশ্ন: বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের অন্যতম চ্যালেঞ্জ কী?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: অবশ্যই খেলাপি ঋণ। মোট ঋণের ১০ ভাগ এখন খেলাপি। ডিসেম্বরে এটা কমে, আবার মার্চে বাড়ে। এই প্রবণতাও ভালো নয়। পুনঃতফসিল বা হিসাবের কৌশলে বাড়িয়ে মুনাফা দেখালে ব্যাংকেরই ক্ষতি। এ ছাড়া দক্ষ মানবসম্পদের অভাবও বড় চ্যালেঞ্জ। অধিকাংশ কর্মীই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে নিজের স্বার্থ হিসেবে দেখে না। দক্ষতা ও আন্তরিকতারও অভাব রয়েছে। আবার সামান্য সুযোগেই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দিচ্ছে।

প্রশ্ন: খেলাপি ঋণ কীভাবে কমানো যেতে পারে?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: ব্যাংকগুলোর বড় বিনিয়োগের অধিকাংশই তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে। বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোতে সম্প্রতি কিছু বিনিয়োগ হয়েছে। ঘুরেফিরে একই গ্রাহকের কাছে যাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে নতুন খাতে অর্থায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি সরকারকেও স্থানীয় শিল্পে সুরক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ ঠেকানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ে ঐক্য দরকার। সুশাসন খুব গুরুত্বপূর্ণ। যার যে দায়িত্ব তাকে স্বাধীনভাবে সেই কাজটি করতে দেওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে বারবার এটা ব্যাহত হয়েছে।

সৌজন্যে: দৈনিক সমকাল