প্রশাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তাড়াশে চলছে পুকুর খনন

Posted on February 27, 2024

সাব্বির মির্জা (তাড়াশ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দিবারাত্রি চলছে পুকুর খনন। প্রভাবশালী মহলের ছত্র ছায়ায় জমে উঠেছে পুকুর খননের কাজ।

অবৈধ পুকুর খননকারীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করা হলেও তেমন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছেনা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকটি স্থানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হলেও কাজে আসছেনা। প্রশাসনের অদৃশ্য নীরবতার কারণে দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে পুকুর খনন। অবৈধ পুকুর খননের ফলে বিপাকে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে পুকুর খনন অব্যাহত রয়েছে।

প্রশাসনের কার্যকরী ভূমিকার অভাবে জমির মালিকরা অভিযোগ করলেও পাচ্ছেন না সঠিক বিচার। কৃষি জমিতে পুকুর খনন করা যাবে না মর্মে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র ও উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।

অনেক কৃষক পুকুর খনন বন্ধে বাধা প্রদান করতে গেলেও তাঁদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। গত ২-৩ বছরে কয়েক হাজার বিঘা কৃষি জমিতে পুকুর খনন হয়েছে। এ ভাবে পুকুর খনন অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তাড়াশ উপজেলায় আবাদযোগ্য জমি শেষ হয়ে যাবে। এতে পরিবেশ বিপর্যয় সহ খাদ্য সংকটে পড়তে হবে। পুকুর খননের মাটি ইটভাটা সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রির ফলে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে যানবহণ সহ পথচারিদের। ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

স্থানীয়রা জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পৌর শহরের সোলাপাড়া গ্রামে ফসলি জমিতে ইজারা নিয়ে পুকুর খনন করছেন সোবাহান আলী ,রফিকুল ইসলাম। সরকারি অফিসের অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ রকম অধিকাংশ গ্রামে রাতের আঁধারে কৃষিজমির এমন ধ্বংসযজ্ঞ চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চললেও কৃষি জমিসহ নদী ও খাস জমি দখল করে চলছে পুকুর খনন।

তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা লঙ্ঘন করে পুকুর খনন করার অপরাধে গত ১ মাসে জমির মালিকদের বিরুদ্ধে ২০টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ৮টি, ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ১০টি এবং সাধারণ কৃষকরা বাদী হয়ে ২টি মামলা করেছে।

তাড়াশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালিদ হাসান বলেন, পুকুর খননের তথ্য পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক অভিযান চালানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতে বেশ কয়েকজনকে জেল ও জরিমানা করা হয়েছে। সগুনা ইউনিয়নের খরখড়িয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠের আবাদযোগ্য উর্বর জমি কেটে পুকুর খনন করার অপরাধে গত ১ জানুয়ারি এক ব্যক্তিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা; অনাদায়ে ৩ মাসের জেল দেওয়া হয়েছে। নওগাঁ ইউনিয়নের ভায়াট গ্রামে পুকুর খনন করায় সুমন মোল্লা ও সাদ্দাম হোসেনকে এক মাস করে জেল দেওয়া হয়েছে। পৌষার গ্রামে পুকুর খনন করার অপরাধে শাজাহান নামের এক ব্যক্তিকে ৬ মাসের জেল দেওয়া হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তাড়াশের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে বছরে তিন ফসলিসহ বিভিন্ন জাতের ধান ও রবিশস্যের আবাদ হয়। তারপরও কৃষকেরা তাদের জমি কেটে পুকুর খনন করছেন। মূলত মধ্যস্বত্বভোগী একটি চক্র কৃষকের সব দায়ভার নিয়ে পুকুর খনন করে দিতে উৎসাহিত করছেন।