বিচার বিভাগকে স্মার্ট করার চেষ্টা করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

Posted on February 24, 2024

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : ১৯৯৬ সালের আগে ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টেই বন্দি ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ক্ষমতা দেশের মানুষের হাতে তুলে দেয়া হয়। এখন মানুষ দ্রুত বিচার পাচ্ছে। ডিজিটাল থেকে বিচার বিভাগকে সরকার স্মার্ট করার চেষ্টা করছে।

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে সুপ্রিমকোর্ট আয়োজিত ‘একবিংশ শতাব্দীতে দক্ষিণ এশিয়ার সাংবিধানিক আদালত : বাংলাদেশ ও ভারত থেকে শিক্ষা’ শীর্ষক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার আগে জুডিশিয়ারিতে কোনো নারী অংশগ্রহণ করতে পারতো না। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেন। সুপ্রিম কোর্টে যাতে বিচার প্রার্থীরা ন্যয় বিচার পায়, সেটা নিশ্চিত করেন। কিন্তু ক্ষমতালোভীরা তাকে হত্যা করে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টেই বন্দি করে রাখে। ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসি এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করি। কিন্তু উচ্চ আদালতের ক্ষমতা আবার ২০০১ সালে বিএনপি কেড়ে নেয়। এরপর ২০০৯ সালে আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম দেশের মানুষের ন্যয় বিচার নিশ্চিত করব।বিচারহীনতার সংস্কৃতি এ দেশ থেকে চিরতরে দূর করব। আমরা সেই কথা রাখতে পেরেছি প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ আমার পরিবারের সবাইকে হত্যার পর বিচারের জন্য আমাকে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। আমি আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম যে এ দেশে বিচার পাবো না। ন্যায় বিচার নিভৃতে কাঁদে। বিচারের জন্য আমাকে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসতে হলো। কেন এ দেশের কারও কী বিবেক ছিল না? অবশেষে ক্ষমতায় এসে আমরা আইন পরিবর্তন করে বিচার শুরু করেছিলাম। কিন্তু ২০০১ সালে বিচার বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আবার বিচার শুরু হলো। এরপর খুনিদের রায় কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের পাশাপাশি স্মার্ট বিচার বিভাগ গড়ে তোলা হবে। করোনাকালীন অনলাইনে কোর্ট চালু, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলার দ্রুত নিরসনের কাজ হয়েছে যেটার সুফল মানুষ পাচ্ছে। আদালতের মামলাজট নিরসনে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আদালত অঙ্গনে ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যাতে বিচারপ্রার্থীরা এসে বসতে পারে। এজন্য প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত থেকে যারা এসেছেন তারা সৌভাগ্যবান। ভারত, পাকিস্তান পাশাপাশি রাষ্ট্র। কিন্তু ভারতে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ছিল। অপরদিকে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে মিলিটারি ডিক্টেটরশিপ অব্যাহত ছিল। যেকারণে দেশের উন্নয়ন হয়নি। এখন দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত যদি হিসেব করেন, আজকে দেশের যে আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে, সেটা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই। একটা স্থিতিশীল পরিবেশ আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে এটা প্রমাণিত সত্য যে মানুষের জীবনে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং আর্থসামাজিক উন্নতি- এটা একমাত্র হতে পারে যখন মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার সুযোগ হয়। তখন দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। আজকে জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত করা হয়েছে।’

গণতান্ত্রিক ধারা ছাড়া কখনো কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি সম্ভব নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান দুটি দেশ পাশাপাশি। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ যখন আত্মপ্রকাশ করল, আমরা দেখলাম ভারতে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। অন্যদিকে সেই পাকিস্তান আমলে হোক, আর বাংলাদেশ হওয়ার পরে হোক, আমরা মিলিটারি ডিক্টেটরশিপের ওপর পড়েছি। বারবার আঘাত এসেছে গণতন্ত্রের ওপর, দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের ওপর। কোনো স্থিতিশীলতা ছিল না। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করে আশা করেছিলাম, আমাদের ভূ-খণ্ডের মানুষ অন্তত একটা স্থিতিশীল জীবন পাবে, দেশের উন্নতি হবে। মানুষের উন্নতি হবে, জীবনমানের উন্নতি হবে।’

বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ভারতের প্রধান বিচারপতি ড. ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন- অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিরা, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিরাণ, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা, সংসদ সদস্য ও বিজ্ঞ আইনজীবীরা।

আরও পড়ুন:

তিন দিনের সফরে ঢাকায় মার্কিন প্রতিনিধিদল

ফোবানা সম্মেলনের মাধ্যমে দেশের ইতিহাস-সংস্কৃতি তুলে ধরুন: প্রধানমন্ত্রী

বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরকার: রাষ্ট্রপতি