সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ

Posted on February 20, 2024

অর্ধ-বাণিজ্য ডেস্ক : ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা আগামী পহেলা মার্চ থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও দাম নির্ধারণ নিয়ে জাতীয় টাস্কফোর্সের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিলিটার বোতলজাত ভোজ্যতেলের দাম ১০ টাকা কমিয়ে ১৬৩ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া খোলাবাজারে প্রতিলিটার ভোজ্যতেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪৯ টাকায়।

নির্ধারিত দামে বিক্রি করা না হলে ১৯৫৬ সালের এসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট, ভোক্তা অধিকার আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে প্রয়োজনে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

তেল-চিনির মূল্য নির্ধারণ প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘তেল এবং চিনির মূল্য আমাদের ট্যারিফ কমিশন নির্ধারণ করে দেয়। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমদানিকারক এবং উৎপাদকদের সঙ্গে বসে যৌক্তিক পর্যায়ে নতুন শুল্কের প্রভাব অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে দেব। রমজান উপলক্ষে সেই দামেই বাজারে বিক্রি হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, টি কে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বসুন্ধারা গ্রুপের প্রতিনিধির সভায় ছিলেন। সরকারের উদ্যোগে আমরা ৫ টাকা ট্যারিফ কমিয়েছি। আমি ওনাদের বলেছি, প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাশা করেন- আমাদের যারা বড় শিল্প গ্রুপ এবং ব্যবসায়ী আছেন, তাদেরও সামাজিক দায়বদ্ধতায় এগিয়ে আসতে হবে। সবকিছু বিবেচনায় আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীরা ভোজ্য তেলের দাম ১০ টাকা প্রতি লিটারে কমানোর জন্য একমত হয়েছেন। উনারা নিজেরাই প্রস্তাবটা করেছেন।

তিনি বলেন, সর্বোচ্চ বাজার মূল্য রমজানে প্রতি এক লিটারের বোতল ১৬৩ টাকা করার বিষয়ে আমরা একমতে পৌঁছেছি। যে মূল্যটা ছিল ১৭৩ টাকা ও তার আগের বছরে ১৮৫ টাকার মতো ছিল।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা জানেন যে- আমাদের ট্যারিফের সার্কুলারটা এসেছে ৮ ফেব্রুয়ারি, যে কোনো জাহাজের বিদেশ থেকে আসতে প্রায় এক মাস লেগে যায় এবং সেটা খালাস করে ভোক্তা পর্যায়ে যেতে ন্যুনতম দুই মাস লেগে যায়। দুই মাস আমাদের রমজানের নেই। তবে আমাদের বিশেষ অনুরোধে ব্যবসায়ীরা এই বাজার মূল্যটা ১ মার্চ থেকে কার্যকর করবে।

আহসানুল ইসলাম বলেন, যেহেতু ভোজ্যতেলের সঙ্গে অনেক কিছু সম্পৃক্ত, তাই আশা করি ভোক্তা পর্যায়ে বাজারে একটা স্বস্তি আসবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে- খোলা তেলের সর্বোচ্চ মূল্য থাকবে ১৪৯ টাকা। আর ৫ লিটারের বোতল ৮০০ টাকায় বিক্রি হবে। আমরা আশা করছি এতে ভোক্তা সাধারণ উপকৃত হবেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা ব্যবসায়ী আছেন, বিভিন্ন পর্যায়ের তারা এটুকু নিশ্চিত করেছেন যে- আগামী রমজানে যে পরিমাণ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বাজারে থাকা বা মজুর থাকা বা পাইপলাইনে থাকা দরকার, তার সবগুলোই পর্যাপ্ত রয়েছে।

তিনি বলেন, আপনারা সবাই জানেন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ফিলিস্তিন-ইজরায়েল যুদ্ধ নানা কারণে পরিবহনের ব্যয় বেড়েছে, ডলারে আমদানি পর্যায়ে ব্যয় বেড়েছে। তারপরও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আমাদের ব্যবসায়ীরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেন যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে, সেজন্য কিছু পরিবর্তন করেছে।

আগামীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীরা আরও বেশি সহযোগিতা পাবেন বলে তিনি জানান।

আহসানুল ইসলাম আরও জানান, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলোর ট্যারিফ আগামী বাজেটে যেন যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে, সেজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন আমদানিকৃত যে পণ্য আছে এবং যে পরিমাণ মজুদ আছে এটা রমজানের জন্য যথেষ্ট।

তিনি বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ এবং চিনি আমদানির জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছি, নীতিগতভাবে ভারত সরকার পেঁয়াজের বিষয়ে সম্মতিও দিয়েছে। এখন ভারতের পক্ষ থেকে আমরা অফিসিয়ালি কাগজ পেলে, পেঁয়াজ দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে এসে পৌঁছাতে পারে সে পদক্ষেপ আমরা নেব।

আহসানুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমার থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমরা যেন বর্ডার থেকে নদী পথে আনতে পারি সে ধরনের একটি এমওইউ ড্রাফট আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সেদেশের সরকার।
তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি উনি ব্যাপারটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় বছরে দুই বার পেঁয়াজ উৎপাদনের যে উদ্যোগ নিচ্ছে আমরা আশা করছি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চালের মত এটাতেও আমাদের আমদানি নির্ভর হতে হবে না।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ আমরা শুরু করেছি। এই রমজানে দুইবার এটা দেওয়া হবে। সেখানে চাল থাকবে ৫ কেজি, তেল, ডাল, চিনি, খেজুর এবং ছোলা থাকবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা শুধু ভোজ্যতেলের বিষয়ে কথা বলেছি এবং দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা আশা করি বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাকি যে পণ্যগুলো আছে, সেগুলোর দাম যৌক্তিক পর্যায়ে চলে আসবে।

তিনি বলেন, পাম অয়েল আমাদের বোতল আকারে আসে না। একটা বিষয় জানিয়ে রাখা দরকার যে- এই প্রথম আন্তর্জাতিক বাজারে পাম আয়েলের দাম সয়াবিনের থেকে বেশি। সুতরাং এটা যদি আমরা এখন পুনঃনির্ধারণ করতে যাই, তবে সেটা ভোক্তাদের জন্য খারাপ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের আর এক প্রশ্নের উত্তরে আহসানুল ইসলাম বলেন, ১ মার্চ থেকে ভোজ্যতেলের নতুন দাম কার্যকর হবে। আমাদের এই ট্যারিফটা আগামী মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।