শিশু আয়ানের মৃত্যু: তদন্তে নতুন কমিটি করে দিলেন হাইকোর্ট

Posted on February 20, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খৎনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এ সময় আদালত বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিটির রিপোর্ট আমাদের মনঃপূত হয়নি। আমরা পাঁচ সদস্যের নতুন কমিটি করে দিচ্ছি।

কমিটিতে তিনজন চিকিৎসক, দুইজন সিভিল সোসাইটির ব্যক্তি ও একজন ক্রিমিনলজিস্টকে রাখা হয়েছে। কমিটি এক মাসের মধ্যে আয়ানের মৃত্যুর পুরো ঘটনা তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের নার্সারি শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল আয়ান। গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খাতনার জন্য অজ্ঞান করা হয় তাকে। এরপর জ্ঞান না ফেরায় তাকে সেখান থেকে নেয়া হয় ইউনাইটেড হাসপাতালের গুলশান শাখায়। সেখানে টানা ৭ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর শিশু তার মৃত্যু হয়।

পরবর্তীতে অনুমতি ছাড়াই শিশু আয়ানের খাতনা করানো হয় বলে অভিযোগ তুলেন বাবা শামিম আহমেদ। তিনি বলেন, হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কারণে তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।

ওই ঘটনায় হাইকোর্টের নজরে এলে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে গত ২৯ জানুয়ারি এ নিয়ে শুনানিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আইওয়াশ (লোক দেখানো) ও হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই দিন এমন মন্তব্য করেন।

সেদিন আদালত বলেন, দায় এড়ানোর জন্যই তারা (তদন্ত কমিটি) এ ধরনের রিপোর্ট দাখিল করেছে। শিশু আয়ানের অ্যাজমা সমস্যা থাকার কথা জানার পরও কেন চিকিৎসকেরা অপারেশনের জন্য এত তাড়াহুড়া করলেন? ওই সময় সুন্নতে খাতনা করার সময় যে পরিমাণ ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে, হার্টের বাইপাসেও এত ওষুধ লাগে না বলেও মন্তব্য করেন আদালত। পরে এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আদালত।

উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খতনা করানোর জন্য আয়ানকে সাঁতারকুল বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান অভিভাবকরা। সেখানে অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়াই তাকে ফুল অ্যানেস্থেশিয়া (জেনারেল) দিয়ে সুন্নতে খাতনা করান চিকিৎসক। খতনা শেষ হওয়ার পর আয়ানের জ্ঞান না ফেরায় তাকে সেখান থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২ এর ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে পিআইসিইউতে (শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এর সাতদিন পর গত রাতে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে বাড্ডা থানায় অভিযোগ করেছে আয়ানের পরিবার। তাদের অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের সময় এমন ঘটনার পর অবস্থা বেগতিক দেখে সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২ ইউনাইটেড হাসপাতালে। এমনকি প্রথমে ১০ হাজার টাকার প্যাকেজে অপারেশনের কথা থাকলেও বিল ধরানো হয় প্রায় ছয় লাখ টাকার।

আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন বাবা শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, এতদিন তারা মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে টালবাহানা করছিল। শেষে নির্বাচনের দিনকে টার্গেট করা হয়, যাতে গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে কম প্রচার পায়।

অভিযোগ এড়িয়ে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় চাপাচ্ছে সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের ওপর। গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালের নন-মেডিকেল ডিউটি ম্যানেজার সানাউল্লাহ কবির বলেন, প্রশাসন থেকে শুরু করে ব্যবস্থপানাসহ পুরো প্রক্রিয়াতেই দুই প্রতিষ্ঠান আলাদা।