কোম্পানি সেক্রেটারি ছাড়াই চলছে জাহিনটেক্স

Posted on February 18, 2024

রফিকুল ইসলাম (রাব্বি) : ঢাকা স্টক একচেঞ্জ পিএলসি’র (ডিএসই) ওয়েব সাইটে থাকা তথ্য অনুযায়ী কর্পোরেট সংবাদ কর্তৃক জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড পর্যালোচনায় দেখা যায় ২০২৩ সালে কোন ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশন নেই। ফলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর কোন নির্দেশনা আদৌও পরিপালন হয়েছে কিনা তা বুঝার উপায় নেই।

ডিএসইসি’র ওয়েব সাইটে কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা “ভোগড়া, বাইপাস মোড়, বাসন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর-১৭০৪” দেয়া থাকলেও ফ্যাক্টোরির কোন ঠিকানা দেওয়া নেই। কোম্পানির ই-মেল আইডি “info@givenseegroup.com” এবং চারটি টিএনটি নাম্বার “৮৯৩২৮১৩, ৮৯১৩৮০২, ৮৯১৩৮২৬, ৮৯৩২৮০১২” দেওয়া থাকলেও ফোন করলে সব সময় বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়া ডিএসসি’র ওয়েব সাইটে কোম্পানি সেক্রেটারির নাম, মোবাইল ও ফোন নাম্বার এবং ই-মেইল আইডি দেয়া নেই। এটা বিনিয়োগকারীদের সাথে এক ধরনের প্রতারণা বলে মনে করা হচ্ছে। এভাবে কর্তৃপক্ষের তথা ডিএসসি, সিএসসি ও বিএসইসি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের হতাশ করে চলেছে জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদ।

প্রসঙ্গগত, কোম্পানিটির বিগত পাঁচ বছরে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২০২৩ সালে মাইনাস ২ টাকা ৫৮ পয়সা, ২০২২ সালে মাইনাস ৩ টাকা ১১ পয়সা, ২০২১ সালে মাইনাস ৩ টাকা ০১ পয়সা, ২০২০ সালে মাইনাস ৩ টাকা ৭৭ পয়সা ও ২০১৯ সালে মাইনাস ২ টাকা ২৪ পয়সা।

কোম্পানিটির বিগত পাঁচ বছরের শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ (এনএভি) ২০২৩ এ হয়েছে ১০ টাকা ০১ পয়সা, ২০২২ সালে ১২ টাকা ৫৯ পয়সা, ২০২১ সালে ১৫ টাকা ৭১ পয়সা, ২০২০ সালে ১৮ টাকা ৭২ পয়সা ও ২০১৯ সালে ২২ টাকা ৪৯ পয়সা।

লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, বিগত পাঁচ বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০২৩, ২০২২, ২০২১, ২০২০ কোন লভ্যাংশ দেয়নি। কিন্তু ২০১৮ সালে ৩ শতাংশ নগদ, ২০১৬ সালে ৭ শতাংশ নগদ ও ৮ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ, ২০১৫ সালে ৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে।

৩০-৬-২০২৩ সমাপ্ত বছরে সর্বশেষ তথ্য মোতাবেক কোম্পানির রির্জাভে রয়েছে মাইনাস ২৯ কোটি টাকা এবং দীর্ঘ মেয়াদী লোন রয়েছে ১৬৬ কোটি ৫১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও স্বল্প মেয়াদী লোন রয়েছে ৫১ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ডিএসসিতে কোম্পানির কোন ক্রেডিট-রেটিং তথ্য দেওয়া নেই। অর্থাৎ কোম্পানির আদৌ কোন ক্রেডিট-রেটিং রির্পোট হয়েছে বলে দৃশ্যমান হয়নি।

জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড কোম্পানিটি ১২০ কোটি টাকা অনুমোধিত মূলধন নিয়ে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জে তালিকাভূক্ত হয়। বর্তমানে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৮১ কোটি ৮২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের সংখ্যা ৮ কোটি ১৮ লাখ ২৪ হাজার ৫৪৯ টাকা।

ডিএসই’র তথ্য অনুযায়ী, ৩১-১-২০২৪ ইং তারিখে উদ্যোক্তা-পরিচালকের হাতে রয়েছে ৩৬.৯৪ শতাংশ শেয়ার, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ২১.৫৩ শতাংশ শেয়ার এবং বাকি ৪১.৫৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার দর উঠানামা হয়েছে ৬.৬০ টাকা থেকে ১০.৪০ টাকায়। গতকাল কোম্পানিটির দর উঠানামা হয়েছে ৭.৬০ থেকে ৭.৭০ টাকার মধ্যে। শেয়ারটি আজ ট্রেড হয়েছে ৭.৬০ থেকে ৮.০০ মধ্যে। এছাড়া গতকালের সমাপনী দর ছিল ৭.৭০ টাকা এবং আজকের ওপেনিং দর ছিল ৭ টাকা ৬০ পয়সা ও সমাপনীদের ৭ টাকা ৬০ পয়সা। ২০১১ সালে পুঁজিবাজারের তালিকাভূক্ত হয়ে জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড বর্তমানে বি ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।

কোম্পানিটির ২০২৩ সালে ৩০ শে জুন সমাপ্ত বছরে ইপিএস মাইনাস ২ টাকা ৫৮ পয়সা, এনএভি ১০ টাকা ০১ পয়সা পয়সা এবং রিটেইন আর্নিং বা রিজার্ভ রয়েছে মাইনাস ২৯ কোটি টাকা, স্বল্প মেয়াদী লোন রয়েছে ৫১ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী লোন ১৬৬ কোটি ৫১ লাখ ৩০ হাজার টাকা । অর্থাৎ সব আর্থিক প্যারামিটারই নেগেটিভ তারপরও কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়ছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাদের কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড (সিজিসি) ২০১৮ তে প্রত্যেক তালিকাভূক্ত কোম্পানিতে কোম্পানি সেক্রেটারি নিয়োগ বাধ্যতামূলক করেছে কিন্তু জাহিনটেক্স পরিচালনা পর্ষদ গত ৫ বছরে কোন সেক্রেটারি নিয়োগ দেয়নি অথচ বিএসইসিসি, ডিএসসি, বিএনসি চুপচাপ রয়েছে। কোম্পানির বিরুদ্ধে এ বিষয়ে কোন শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।