বাজেটে ভ্যাট প্রস্তাব প্রত্যাহার, আগামী নির্বাচনের ইউটার্ন ক্ষমতাশীন দলের

Posted on June 29, 2017

পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে ১৫% ভ্যাটের প্রস্তাব স্থগিত রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাজেটে ভ্যাট ও শুল্ক বিষয়ক দুটি প্রস্তাব নিয়ে বিস্তর সমালোচনার পর এ ইস্যুতে পুরো ইউটার্ন নিয়েছে সরকার।বাজেটের উপর আলোচনার শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রীকে বলেছেন, শতকরা পনেরো টাকা হারে ভ্যাট আদায়ের আইনটি বাস্তবায়ন আরো অন্তত দুবছরের জন্য স্থগিত করতে এবং ব্যাংক আমানতের উপর আবগারী শুল্ক আরো অনেক কমিয়ে দিতে। এই দুটি শুল্ক প্রস্তাব নিয়ে বাজেট ঘোষণার পরদিন থেকেই তোপের মুখে আছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এমনকি তিনি নিজ দলের সংসদ সদস্যদেরও বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়েন। যদিও বিশেষ করে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে অনড় ছিলেন অর্থমন্ত্রী।
কিন্তু প্রায় এক মাস ধরে টানা সমালোচনার প্রেক্ষাপটে আজ বাজেট আলোচনার সমাপনি দিনে শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রীকে আরো অন্তত দু বছরের জন্য ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন থেকে পিছু হঠার পরামর্শ দেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য দেয়ার সময়ে এ ব্যাপারে পিছু হঠার জন্য ব্যবসায়ীদের অনীহার কারণটি উল্লেখ করেন। অর্থমন্ত্রীকে তিনি এই পরামর্শ দেবার সময় সংসদ সদস্যদের টেবিল চাপড়ে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রীর তার পরামশ্যে ব্যাংকঋণের আমানতের আবগারী শুল্কেও ব্যাপক সংস্কার আনার পরামর্শ দেন।

এই আমানতের উপর আবগারী শুল্কের প্রস্তাব নিয়ে একটি অভিযোগকে ঘিরে গত এক মাস সবচাইতে বেশী সমালোচনা সইতে হয়েছে অর্থমন্ত্রীকে। বাজেটের প্রস্তাবের পর এমনব্য্যখ্যাও এসেছে যে নতুন আবগারী শুল্কের হার অনুযায়ী যেসব মধ্যবিত্ত সামান্য লভ্যাংশ্যের আশায় এক লাখ টাকা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করত, আবগারি শুল্ক কর্তনের পর তারা হয়তো বছর শেষে পুরো এক লাখ টাকাও হাতে পাবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ব্যাখ্যা করে বলেন, অর্থমন্ত্রী বরঞ্চ এক্ষেত্রে মানুষের দুর্ভোগ কমিয়েছেন, আগে কুড়ি হাজার টাকার বেশী থাকলেই আবগারি শুল্ক দিতে হতো, কিন্তু নতুন প্রস্তাবে এক লাখ পর্যন্ত শুল্ক না দেয়ার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু এখন যেহেতু সমালোচনা হচ্ছে, সেই এক লাখ ও তদূর্দ্ধ পরিমান আমানতেরও আবগারী শুল্ক আরো ব্যাপক হারে কমানোর এবং তিনটি স্তরে বিভক্ত করে পুননির্ধারণ করবার প্রস্তাব করেন শেখ হাসিনা। প্রস্তাব অনুযায়ী ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতে আবগারি শুল্ক দিতে হবে না। ১ লাখ ১ টাকা থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত: ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক (পূর্বের প্রস্তাব ছিল ৫০০ টাকা) এবং ৫ লাখ ১ টাকা থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত: ৫০০ টাকা (পূর্বের প্রস্তাব ৮শ টাকা।)

যদিও এগুলো সংসদ নেতার প্রস্তাব, কিন্তু রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদে বাজেট নিয়ে আলোচনার সবশেষে প্রধানমন্ত্রী যে আলোচনা করেন এবং প্রস্তাবগুলো করেন সেটাকে অর্থমন্ত্রী সংশোধিত প্রস্তাবে অন্তভূক্ত করেন এবং চূড়ান্ত বাজেট হিসেবে সেটাই পাশ হয়।
তবে এটা নি:সন্দেহে বলা যায়, পাশ হতে যাওয়া বাজেটটিতে ব্যাবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হলো।এছাড়া আবগারী শুল্কের সিদ্ধান্তও জনগণ সানন্দে গ্রহণ করবে যা আগামী নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাশীন দলের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।