অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে ব্যাংক কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের কারনে এ খাতে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেছে অনেক ক্ষেত্রে। বিভিন্ন সময়ে অনিয়মের কারনে মাঝারি সারির কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার হলেও এ সকল জালিয়াতির মূল হোতারা রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। গত সাড়ে ছয় মাসে সত্তর জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতাদের কাউকেই এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেননি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সর্বশেষ গত সপ্তাহের শেষদিন সকালে বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জনতা ব্যাংকের দুই ডিজিএম। অথচ যে মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হলো, সেই একই মামলার অন্যতম আসামি মো. আব্দুস সালাম আজাদ বর্তমানে জনতা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে কর্মরত। মামলার আসামি হওয়ার পরও সরকার তাকে পদোন্নতি দিয়েছে। এছাড়াও রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যাবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ূন কবির, বেসিক ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসাম ও অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদকে এখনো হেফাজতে নিতে পারেনি দুদক।
পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া শুধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের পক্ষে ঋণ দেওয়া কোন অবস্থাতেই সম্ভব না। অথচ বেসিক ব্যাংকের জালিয়াতি, হল-মার্ক কেলেঙ্কারি ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের জালিয়াতির ঘটনায় আসামি করা হয়েছেন শুধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের। বেসিক ব্যাংকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু ও পরিচালনা পর্ষদের সংশ্লিষ্টতার কথা আলোচিত হলেও তাঁকে বাদ দিয়েই গত বছর ৫৬টি মামলা করে দুদক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে আবদুল হাইয়ের দায় থাকার কথা বলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও ব্যাংকটিতে ‘হরিলুটের পেছনে আবদুল হাই বাচ্চু জড়িত’ বলে একাধিকবার উল্লেখ করেন। তাঁকে আসামি না করায় একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। ওই সব মামলায় ব্যাংকটির ২৭ জন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাকে আসামি করা হলেও পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করাতো দুরের কথা জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা হয়নি। হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলামসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নাম ঘুরেফিরে এলেও তাঁদের বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল। বিসমিল্লাহ গ্রুপের জালিয়াতিতে আসামি হয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারাই।
দুদকের হিসাব অনুযায়ী, নতুন চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বে নতুন কমিশন গঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন পর্যায়ের সত্তর জন ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে দুদকের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। অনুসন্ধান পর্যায়েই যে কাউকে গ্রেপ্তারের আইনি ক্ষমতা পেয়েছে সংস্থাটি। ক্ষমতার প্রয়োগও করছে তারা। দুদকের অভিযান নিয়ে প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনা হলেও এদের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও আস্থার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। তবে এই বিশ্বাস ও আস্থার ক্ষেত্র যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
বিশ্বাস ও আস্থার ক্ষেত্র যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় https://corporatesangbad.com/671/ |