কোম্পানি সেক্রেটারি ছাড়াই চলছে খুলনা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং

Posted on February 13, 2024

রফিকুল ইসলাম (রাব্বি) : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি’র (ডিএসই) ওয়েব সাইটে থাকা তথ্য অনুযায়ী কর্পোরেট সংবাদ কর্তৃক খুলনা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৩ সালে কোন ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশন নেই। কোম্পানির ওয়েব সাইট না থাকায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর কোন নির্দেশনা আদৌও পরিপালন হয়েছে কিনা তা বুঝার উপায় নেই। কোন প্রাইস সেন্সিটিভ ইনফরমেশন আদৌ প্রকাশ করেছে কিনা সেই তথ্যও নেই। অর্থাৎ কোম্পানির ওয়েব সাইটে বিনিয়োগকারীর জন্য যে তথ্য থাকার কথা তার কিছুই নেই।

ডিএসইসি’র ওয়েব সাইটে কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা “খুলনা মঙ্গলা রোড়, কাটাখালী, শাম্বাঘাট, পোস্ট : লকপুর, পিএস : ফকিরহাট, ডি : বাগেরহাট, খুলনা” দেয়া থাকলেও ফ্যাক্টোরির কোন ঠিকানা দেওয়া নেই। কোম্পানির ই-মেল আইডি “kppl 07@yahoo.com” দেয়া থাকলেও ওয়েব সাইটের লিংক দেয়া নেই এবং দুইটি টিএনটি নাম্বার “০২২২২২২১১৭৬, ০৪৬৬৩৫৬০১৬-৭” দেওয়া থাকলেও ফোন করলে সব সময় বন্ধ পাওয়া যায়। ডিএসসি’র ওয়েব সাইটে কোম্পানি সেক্রেটারির নাম, মোবাইল ও ফোন নাম্বার এবং ই-মেল আইডি দেয়া নেই।

প্রসঙ্গগত, কোম্পানিটির বিগত পাঁচ বছরে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২০২২ সালে মাইনাস ৩ টাকা ১০ পয়সা, ২০২১ সালে মাইনাস ৬ টাকা ১২ পয়সা, ২০২০ সালে মাইনাস ০ টাকা ৩৬ পয়সা, ২০১৯ সালে মাইনাস ২ টাকা ৩৪ পয়সা ও ২০১৮ সালে মাইনাস ১ টাকা ২২ পয়সা।

কোম্পানিটির বিগত পাঁচ বছরের শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ (এনএভি) ২০২২ এ হয়েছে মাইনাস ১ টাকা ৮৬ পয়সা, ২০২১ সালে ১ টাকা ২৩ পয়সা, ২০২০ সালে ১১ টাকা ৯১ পয়সা, ২০১৯ সালে ১২ টাকা ৩৩ পয়সা ও ২০১৮ সালে ১৪ টাকা ৬৭ পয়সা।

লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, বিগত পাঁচ বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০২০ সালে ০.২৫ শতাংশ নগদ, ২০১৯ সালে ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ , ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ নগদ, ২০১৪ সালে ৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে। কোম্পানিটি ২০২৩, ২০২২, ২০২১, ২০১৮, ২০১৭ ও ২০১৬ লভ্যাংশ দেয়নি।

৩০-৬-২০২২ সমাপ্ত বছরে সর্ব শেষ তথ্য মোতাবেক কোম্পানির রির্জাভে রয়েছে মাইনাস ৮ কোটি ৬৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং দীর্ঘ মেয়াদী লোন রয়েছে ৩১ কোটি ৫৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও স্বল্প মেয়াদী লোন রয়েছে ২৩ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ডিএসইতে কোম্পানির কোন ক্রেডিট-রেটিং তথ্য দেওয়া নেই। অর্থাৎ কোম্পানির আদৌ কোন ক্রেডিট-রেটিং রির্পোট হয়েছে বলে দৃশ্যমান হয়নি।

উল্লেখ্য যে, খুলনা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং কোম্পানিটি ১০০ কোটি টাকা অনুমোধিত মূলধন নিয়ে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ১৮-৮-২০১৪ ইং তারিখে তালিকাভূক্ত হয়। বর্তমানে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৭৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের সংখ্যা ৭ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

ডিএসই’র তথ্য অনুযায়ী, ৩১-১০-২০২২ ইং তারিখে উদ্যোক্তা-পরিচালকের হাতে রয়েছে ৩৯.৭৬ শতাংশ শেয়ার, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ১.১১ শতাংশ শেয়ার এবং বাকি ৫৯.১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। কিন্তু ৩০-৬-২০২৩ সমস্ত বছরের শেয়ার হোল্ডিং পজিশন ডিএসইতে দেখানো হয়নি। অর্থাৎ কোম্পানিটি প্রতিমাসে শেয়ার হোল্ডিং রির্পোটিংও করে না বা করলেও ডিএসইতে তা আপডেট করেনা বলে প্রতীয়মান হয়।

গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার দর উঠানামা হয়েছে ৮.৯০ টাকা থেকে ৫৯.৫০ টাকায়। গতকাল কোম্পানিটির দর উঠানামা হয়েছে ৪২.২০ থেকে ৪৭.৪০ টাকার মধ্যে। শেয়ারটি আজ ট্রেড হয়েছে ৩৯.১০ থেকে ৪৪.৮০ মধ্যে। এছাড়া গতকালের সমাপনী দর ছিল ৪৩.১০ টাকা এবং আজকের ওপেনিং দরছিল ৪৩ টাকা ২০ পয়সা ও সমপনীদর ৩৯ টাকা ৯০ পয়সা। ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারের তালিকাভূক্ত হয়ে খুলনা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং বর্তমানে বি ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।

কোম্পানিটির ইপিএস মাইনাস ৩ টাকা ১০ পয়সা, এনএভি মাইনাস ১ টাকা ৮৬ এবং রিটেইন আর্নিং/ রির্জাভ এন্ড সারপ্লাস রয়েছে মাইনাস ৮ কোটি ৬৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও স্বল্প মেয়াদী লোন রয়েছে ২৩ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী লোন ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ সব আর্থিক প্যারামিটারই নেগেটিভ তারপরও কোম্পানিটির শেয়ার দর গত এক বছর ধরে বাড়ছে।

এটা বিনিয়োগকারীদের সাথে এক ধরনে প্রতারণা বলে মনে করা হচ্ছে। এভাবে কতৃপক্ষের তথা ডিএসসি, সিএসসি ও বিএসইসির চোখ ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের হতাশ করে চলেছে খুলনা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদ।