৪৩ বছর ধরে ১০ টাকায় রোগী দেখেন ডা. এবাদুল্লাহ

Posted on February 13, 2024

শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : হু হু করে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মানুষ। তবে বাড়েনি ডা. মো. এবাদুল্লাহর রোগী দেখার ফি। মাত্র ১০ টাকায় রোগী দেখেন তিনি। প্রতিদিন শতাধিক রোগী তার কাছে আসেন চিকিৎসা সেবা নিতে। তার কাছে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছেন অনেকে। অল্প খরচে চিকিৎসা সেবা পেয়ে খুশি রোগী ও স্বজনরা। টানা ৪৩ বছর ধরে এভাবেই চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন "গরিবের ডাক্তার" খ্যাত এই চিকিৎসক।

সাবেক সিভিল সার্জন ডা. মো. এবাদুল্লাহর গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাঁদাকাটি গ্রামে। বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা শহরে বসবাস করেন।

১৯৭৭ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে চাকুরিতে যোগদান করেন । এরপর জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১০ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অবসর নেওয়ার পরও তিনি সেবার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।

প্রতিষ্ঠা করেছেন "নওয়াব ক্লিনিক"। মাত্র ১০ টাকা ফি দিয়ে এখানে প্রতিদিন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন শতাধিক রোগী। বিশ্বাস আর আস্থা নিয়ে আসা রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবনে সুস্থও হয়ে উঠছেন অনেকে।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা না দেওয়া ও পরীক্ষার দরকার হলেও সেটার ফি তুলনামূলক কম নেওয়ায় জেলার বিভিন্ন স্থানের রোগী ও স্বজনরা তার শরণাপন্ন হয়।

সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে আসা সোলাইমান হোসেন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন এ ডাক্তার দেখায় কম টাকায় ভালো সেবা বর্তমানে একজন এমএএম বিবি এস ডাক্তার দেখাতে ৫শ-৭শ টাকা খচর হয়। তার সাথে বিভিন্ন টেস্ট তো থাকবেই আর এখানে মাত্র ১০ টাকায় ভালো ভাবে ডাক্তার দেখাতে পারছি টেস্ট দিলেও কম টাকায় হয়ে যায়।

আলীপুর থেকে আসা নাসিমা খাতুন বলেন, আমি বেশ কিছু দিন জ্বরে ভূগছিলাম এখান থেকে ডাক্তার দেখায়ছিলাম ওষুধ দিলো আর রক্তের টেস্ট দিলো কম টাকায় হয়ে গেছে এখন সুস্থ হয়েছি আবার এসেছি পরবর্তী পরামর্শ নিতে।

শহরের পলাশপোল এলাকার সঞ্জয় কর্মকার বলেন, আমার ছেলের স্কুল চলাকালীন সময়ে পেটে ব্যাথা করছিলো তাকে নিয়ে এসেছি একটা পরীক্ষা দিছে মাত্র ৪শ টাকা। বাহিরে এই টেস্ট করাতে গেলে ১৬-১৮শ টাকা লাগতো। এখানে আমাদের মত মধ্যেবিত্ত, ধনী, গরীব সকল শ্রেনি পেশার মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসে।

স্বল্পমূল্যে মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া সাবেক সিভিল সার্জন ডা. মো. এবাদুল্লাহ জানান, অসহায় দুঃস্থ মানুষ আমার কাছে সেবা নিতে আসেন। যারা টাকার অভাবে উন্নত হাসপাতাল বা অন্য ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে পারেন না তারাই সেবা নিতে আসেন এখানে। যতদিন এই পেশায় থাকবেন মানুষকে এভাবে সেবা দিয়ে যাবো।

তিনি আরও বলেন, সমাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই আগে ৫ টাকা ফি নিতাম। তবে ব্যবস্থা পত্র তৈরী করা খরচ বেড়েছে বিদ্যুৎ বিল অফিস ভাড়া বেশি। আমার স্টাফদের কথা চিন্তা করে বর্তমানে ১০ টাকা করে ফি নিই। পৃথিবীর সমস্ত কিছুর মূল্যবৃদ্ধি হলেও আমার চিকিৎসা সেবার মূল্য ১০ টাকাতেই সীমাবদ্ধ রেখেছি। কারণ অসহায় দুঃস্থ মানুষরা টাকার অভাবে উন্নত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন না, তারা আমার সেবা নিতে আসেন। যতদিন এই পেশায় রয়েছি মানুষকে এভাবে সেবা দিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।

দাদাকে কথা দিয়েছিলাম আর দাদার কথা রাখতেই আমি ১০ টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

আমার দাদা নওয়াব আলী সরদার তিনি ছোটবেলায় আমাকে পড়াতেন। দাদা বলতেন, বড় হয়ে ডাক্তার হবা, মানুষের সেবা করবা, খেয়াল রাখবা। আমার দাদার কথাগুলো আমি আজও মনে রেখেছি। আমার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নামও রেখেছি দাদার নামে "নওয়াব ক্লিনিক" রেখেছি।