শীতকালে নাক-কান-গলায় বিভিন্ন সমস্যা

Posted on February 11, 2024

স্বাস্থ্য ডেস্ক : ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এখন শীতকাল চলছে এবং আগামী কয়েক মাস থাকবে। প্রতি বছর ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের শরীরে নানা প্রকার সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় বিভিন্ন রকম শীতকালীন টাটকা শাকসবজি, ফলমূল পাওয়া যায়। টাটকা শাকসবজি, ফলমুল খাওয়ার জন্য শীতকালে সাধারণত রোগব্যাধি কম হয়।

কিন্তু তারপরও আবহাওয়ার বিপর্যয়, পরিবেশ দূষণের কারণে শীতকালেও অনেক রোগব্যাধি দেখা দেয়। অনেক সময় শীতকালে নাক, কান, গলায় বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে। যেমন- সর্দি কাশি, অ্যালার্জি, টনসিলে প্রদাহ, গলাব্যথা ইত্যাদি। এছাড়া অ্যাজমা, শিশুদের নিউমোনিয়া এবং বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।

সর্দি : শীতকালে অতিরিক্ত ঠান্ডার ফলে সর্দির সৃষ্টি হয়। অনেক সময় সর্দি লাগলে কানে ব্যথা করে এবং নাক দিয়ে রক্তও পড়তে পারে। যার ফলে অনেক সমস্যা, যেমন-সাইনোসাইটিস হতে হয়।

কাশি : শীতকালে ঠান্ডায় কাশির প্রকোপ বেড়ে যায়। যার ফলে বুকে ও গলায় ব্যথা দেখা দেয়। অতিরিক্ত কাশির ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় কাশির সাথে কফ বা রক্তও বের হতে পারে।

অ্যালার্জি : অ্যালার্জি প্রত্যেক মানুষের দেহে কম-বেশি বিদ্যমান। অতিরিক্ত ঠান্ডার ফলে মানুষের নাক, কান, গলায় অ্যালার্জির প্রকোপ দেখা দেয়। যার ফলে হাঁচি-কাশি বেশি হয়। অ্যালার্জি জন্য চোখে কনজাস্কটিভাইটিস হতে পারে।

টনসিল : শীতে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার কারণে গলার ভিতরের টনসিলে ইনফেকশন হতে পারে। টনসিল ইনফেকশনের কারণে গলায় ব্যথা ও জ্বর হতে পারে। টনসিলাইটিসের জন্য শিশুদের পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটে এবং বড়দের অফিস ও দৈনন্দিন কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।

গলাব্যথা : শীতকালে অতিরিক্ত ঠান্ডার ফলে বিভিন্ন কারণে গলায় ব্যথা হয়ে থাকে। যেমন- হঠাৎ করে ঠান্ডা পানি পান করলে, শীতে গরমে কাপড় না পড়লে, গলায় ব্যথা পারে। এ ছাড়া টনসিলের কারণে গলায় ব্যথা হতে পারে।

অ্যাজমা : শীতকালে অ্যাজমা দেখা দিতে পারে। অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীদের খুবিই সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। নিয়মিত অ্যাজমার ওষুধ বা ইনহেলার গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। অনেক সময় শীতকালে ভোরে অ্যাজমার অ্যাটাত বেড়ে যায়। তখন রোগীকে নেবুলাইজেশন করে অবিলম্বে নিকটস্থ হাসপাতারে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া উচিত।

বয়স্ক লোকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এ সময় বেশি সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের দেশে উওরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি। শীতের প্রকোপে প্রতি বছর বয়স্ক লোকদের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

শিশুদের নিউমোনিয়া: শীতে সবচেয়ে বড় সমস্যা শিশুদের নিউমোনিয়া। যারা শীতকালে জম্মগ্রহণ করে তাদের ক্ষেত্রে বেশি ভয় হলো নিউমোনিয়া। শিশু বয়সে সবচেয়ে ঝুঁকিপুর্ণ রোগ হলো নিউমোনিয়া। শীতে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার ফলে শিশুদের নিউমোনিয়া হতে পারে।

তাই শিশুদের অতি যন্তে রাখতে হবে। শীতের মধ্যে ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রিম খাওয়া এবং গরম কাপড় না পরার কারণে নাক, কান ও গলার সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। বিশেষ করে শিশুদের ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। কারণ, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে শিশুদের নিউমোনিয়াও হয়ে যেতে পারে। যার ফলে এ সময় শিশু ও বয়স্কদের বেশি রোগব্যধি লেগেই থাকে। তার পরও এ সময় মামস, ভাইরাসজনিত জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

প্রতিকার
শীতকালে সাবধানে থাকতে হবে। যাতে সর্দি, কাশি ও ভাইরাসজনিত জ্বর না হয়। ঠান্ডাজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। যেমন- ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রিম ইত্যাদি।

বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বেশি নজর দিতে হবে।প্রয়োজনীয় গরম কাপড় পরিধান করতে হবে।
এরপরও শীতকালে সর্দি-কাশি হওয়ার পরও গুরুত্ব দেখা হয় না বা অবহেলা করা হয়।

তাই যখন নাক, কান ও গলায় সমস্যা দেখা দেবে, তখনই একজন নিকটস্থ ইএনটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অন্যথায় অনেক সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে। শীতকালে সবাই সুস্থত থাকুন, ভালো থাকুন। পরিশেষে বলা ভালো, চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।

লেখক: অধ্যাপক ডা: এম আলমহীর চৌধুরী, এমবিবিএস, ডিএলও, এমএস (ইএনটি), নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।