সুন্দরবনের পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে বরফ কল

Posted on February 10, 2024

শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সরকার ঘোষিত পরিবেশগত সংকটাপন্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে বরফ কল। নিষেধাজ্ঞা জারি করে পরিবেশ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টদের পত্র দিলেও তার তোয়াক্কা করছেন না তারা। নিরুপায় সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকতারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্যামনগরের কলবাড়ি, গাবুরা, নওয়াবেঁকি, গ্যারেজ মোড় এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে বরফ কল কারখানা। পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় বরফ কল নির্মাণের বিষয়টি নজরে আসলে সরজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল। পরে পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা জেলা কার্যালয়ের ২২.০২.৪০৮৭.৩০১.৭৭.০০১.২২.২০২ নং স্মারকের পত্রে নির্মাণাধীন বরফ কলের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।

যেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ৫ ধারার উপ-ধারা (১ ও ৪) এবং একই আইনের ধারা ১২ মোতাবেক পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতিরেকে কোনো এলাকায় কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন/পরিচালনা করা যাবে না।

পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যাতিত কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন/পরিচালনা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। উক্ত এলাকায় নিষিদ্ধ কর্ম বা প্রক্রিয়া চালু রাখা বা শুরুর মাধ্যমে উপ-ধারা ৪ লঙ্ঘন করলে অন্যূন ২ বছর বা অনধিক ১০ কারাদন্ড বা অন্যূন দুই লক্ষ টাকা, অনাধিক ১০ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড এর বিধান রয়েছে। তা ছাড়া সুন্দরবন এলাকাটি সরকার ঘোষিত পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা।

বাংলাদেশ সরকার ১৩টি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করেছে। এগুলোর মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষিত সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো শিল্প কলকারখানা স্থাপন করা যাবে না। তা সত্ত্বেও সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত পাঁচটি বরফ কল গড়ে উঠেছে।

পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতিত কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনা আইনত দন্ডনীয় অপরাধত কিন্তু অনেকটা গায়ের জোরেই যেন তৈরি হচ্ছে এসব বরফ কল।অবৈধ বরফ কলের মালিকরা বলছেন বরফ কলের অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত অনুমোদন পেয়ে যাব।

কলবাড়িতে নির্মাণাধীন বরফ কলের মালিক মো. মিঠু গাজী বলেন, আমি স্থানীয় শাহিন ও হাফিজুর রহমানের বরফ কল থেকে বরফ নিতাম। এখন আর তার বরফ কল থেকে বরফ নিচ্ছে না বলে তারা পিছনে লেগেছে। তারও একটি অবৈধ বরফ কল আছে।

হাফিজ বলেন, আমার সেয়ারে আগে থেকে বরফ কল ছিলো এবং অনুমোদন ছিলো। বর্তমানে যারা করছে তাদের লাইসেন্স নাই। পূর্বের অনুমোদন দিয়ে কি নতুন আইনের সাথে কি সুন্দরবন এলাকায় বরফ কল চালানো যাবে এমন প্রশ্ন করলে তিনি সন্তোষ্টজনক কোন উত্তর দিতে পারেনি।

এ দিকে কলবাড়িতে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নির্মাণাধীন নতুন বরফ কলে বিদ্যুৎ সংযোগ না দিতে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার ও ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পত্রে (স্মারক নং ২২.০২.৪০৮৭.৩০১.৭৭.০০১.২২.২১০) দেওয়া হলেও বিপুল পরিমান উৎকোচের বিনিময়ে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্যামনগর পল্লী বিদ্যু কেন্দ্রের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জিত কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে শ্যামনগর পল্লী বিদ্যু কেন্দ্রে জেনারেল ম্যানেজার, সঞ্জিত কুমার মন্ডল মুঠোফোনে জানান, তারা অনেক টাকা খরচ করে বরফ কল তৈরি করেছে এ জন্য উপরের নির্দেশে তাদের দুই মাসের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা দুই মাসের মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র না পেলে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।

এ সময় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসকে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ার পত্র প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি অসংলগ্ন আচরণ শুরু করে সাংবাদিকের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, আপনাদের এই যে সাংবাদিকতা, এই যে কল রেকর্ড এইগুলো একটু কম করেন। কারণ বাংলাদেশে এখন আপনাদের সমস্যা হলো বেশি। কারণ কেউ পাস করা সাংবাদিক না, সব হচ্ছে এই যে, মোবাইলে কথা রেকর্ড করা এই সব করে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম জানান, পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার আগেই এখানে বেশকিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। আমরা পুরাতন প্রতিষ্ঠানগুলোকে নজরদারিতে রেখেছি। তাদেরকে ইতোমধ্যে দূষণ না ঘটাতে সতর্কও করা হয়েছে।

এছাড়া পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় নতুন করে আর কোনো প্রতিষ্ঠান যাতে গড়ে না ওঠে, সেজন্য নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। এ জন্য কলবাড়ি এলাকায় নির্মাণাধীন বরফ কলের কাজ বন্ধ করতে ইতোমধ্যে তিন দফা পত্র দেওয়া হয়েছে।

তারা কথা শোনেনি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া আইন অনুযায়ী পল্লী বিদ্যুৎকেও তাদের সংযোগ না দিতে পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য তারা সরকারিপত্রকে উপেক্ষা করে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে।