যমুনার ভাঙ্গণে বিলিনের পথে শাহজাদপুরের ৭ গ্রাম

Posted on February 7, 2024

সেলিম রেজা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি, জালালপুর ও কৈজুরি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে হাট পাচিল পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে যমুনা নদীর ব্যাপক ভাঙ্গণ। গত ২ মাসে এ ভাঙ্গণের তান্ডবে এ ৩টি ইউনিয়নের ৭টি গ্রামের অন্তত ২ শতাধিক বাড়িঘর ও ৩০০ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

গ্রামগুলো হল- ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, পাড়ামোহনপুর, জালালপুর, পাকুরতলা, সৈয়দপুর ও হাটপাচিল। এছাড়া যমুনার ভাঙ্গণে বিলিন হয়ে গেছে ৭টি গ্রাম। এগুলো হল, ঘাটাবাড়ি, বাঐখোলা, দাদপুর, কুচিয়ামারা, সোন্তষা, কোচগাঁও ও ভেকা গ্রাম।

এ বিষয়ে জালালপুর গ্রামের আব্দুস সালাম, আব্দুল হাই, তয়জাল সরকার, পাকুরতলা গ্রামের আশরাফ আলী,হাটপাচিল গ্রামের আব্দুল মজিদ জানায়, এই ভাঙ্গণের তান্ডবে ৭টি গ্রামের অন্তত অন্তত ২ শতাধিক বাড়িঘর ও ৩০০ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়া আরও ৭টি গ্রাম একেবারে বিলিন হয়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। এসব গ্রামের মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে পথের ফকির হয়ে গেছে। অনেকের দিন কাটছে ভাঙ্গণ এলাকার খোলা আকাশের নিচে। অনেকে আবার অন্যত্র চলে গেছে জীবিকার তাগিদে।

তারা আরও বলেন, চোখের সামনে বাড়িঘর যমুনার পেটে চলে গেছে। চেয়ে দেখা ছাড়া তাদের আর কিছু করার ছিল না। তারা জানায়, এলাকার প্রভাবশালীরা গত বর্ষা মৌসুমে অপরিকল্পিতভাবে যমুনা নদী থেকে মাত্রাতিরিক্ত বালু উত্তোলন করায় এবং বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর উজান থেকে উত্তোলন করা বালুবাহী ২ শতাধিক বাল্কহেড উচ্চ গতিতে যমুনা নদীর এই স্থান দিয়ে ২৪ ঘন্টা চলাচল করায় তীব্র ঢেউয়ের আঘাতে যমুনা নদীর পশ্চিম তীরের তলদেশে বালুর স্তর সরে যাওয়ায় এই ভাঙ্গণ তীব্র আকার ধারণ করেছে। তারা এসব বাল্কহেড চলতে নিষেধ করলে প্রভাবশালীরা তাদের প্রাণনাশের হুমকি সহ নানা ভাবে হয়রানি করে থাকে। ফলে তারা প্রাণভয়ে তাদেও বাঁধা দিতে সাহস পায় না। এর ফলে চোখের সামনে তাদের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি যমুনার পেটে চলে গেলেও তাদের চেয়ে দেখে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

তারা আরও বলেন, ভাঙ্গণরোধে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ বছর আগে তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজনের ধীরগতিতে কাজ চলতে থাকায় গত ৩ বছরে কিছু সংখ্যক সিসি ব্লক তৈরী ছাড়া কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে বছর বছর ভাঙ্গণের তান্ডবে এলাকার হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তাদের এ অসহায় অবস্থার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম। তিনি ভাঙ্গণ এলাকা পরিদর্শন করে ও অসহায় ভাঙ্গণ কবলিত মানুষের অবর্ণনীয় কষ্টের কথা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভাঙ্গণরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।'

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম বলেন, আমি এনায়েতপুর বেড়িবাঁধ থেকে ইঞ্জিন চালিত শ্যালো নৌকা নিয়ে ভাঙ্গণ কবলিত এলাকা ঘুরে দেখেছি ও ভাঙ্গণে নিঃস্ব অসহায় মানুষের মুখ থেকে তাদের কষ্টের কথা শুনেছি।

তিনি বলেন, তাদের এই কষ্ট লাঘবে আমি ইতোমধ্যেই পানি সম্পদ মন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছে, আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে ৩ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত সিসি ব্লক স্থাপন করে তীরসংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করবে। বাকি অংশের ভাঙ্গণরোধে এ বছর ১০ হাজার জিওটেক্স টিউব ব্যাগ ফেলা হবে। পরবর্তী বছরে ওই অংশেও সিসি ব্লকের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া হাটপাচিল থেকে ঠুটিয়া স্কুল পর্যন্ত জিমরম প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধ সংস্কার করা হবে। এ কাজ শেষ হলে এখনে আর ভাঙ্গণ থাকবে না।

তিনি আরো বলেন, আর যাতে আমার এলাকার এক ছটাক মাটিও না ভাঙ্গে আমি সে লক্ষ নিয়ে কাজ করছি। ইনশাহ আল্লাহ আগামীতে আর শাহজাদপুরে কোনো ভাঙ্গণ থাকবে না। আমি সেভাবেই এগুচ্ছি।'