মুতলিব হত্যা মামলা: ২৫ বছর পর ২ জনের যাবজ্জীবন

Posted on February 7, 2024

তিমির বনিক, স্টাফ রিপোর্টার: ২৫ বছর পর সিলেটের খাদিমনগরে আব্দুল মুতলিব হত্যা মামলায় দুই জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদেরকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রমে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো. শাহাদৎ হোসেন প্রামানিক এ রায় প্রদান করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের পেশকার (বেঞ্চ সহকারী) মোঃ আহম্মদ আলী।

দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন, সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার খাড়াউড়া গ্রামের মৃত সুরুজ আলীর ছেলে, বর্তমানে ইসলামপুর ধনুকান্দি চামেলীবাগ আবাসিক এলাকার ১০৫নং বাসার বাসিন্দা মো. শওকত আলী এবং সিলেট নগরীর টিলাগড় ব্রাক্ষনপাড়ার মৃত আজগর আলীর ছেলে আব্দুর রহিম। বর্তমানে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা পলাতক।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, খাদিমনগর এলাকার ধনুকান্দি গ্রামের মৃত সাইয়িদ উল্ল্যাহর ছেলে আব্দুল মুতলিবের সাথে শওকত আলী ও আব্দুর রহিমের জমি-জমা কেনাবেচা সংক্রান্ত বিষয়াধী নিয়ে টাকার বিরোধ চলে আসছিলো।

বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল সকাল ৭টার দিকে শওকত আলী ও আব্দুর রহিম নাস্তা খাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে আব্দুল মুতলিবকে বাহিরে ডেকে নিয়ে যায়। ওইদিন শওকত আলী ও আব্দুর রহিমসহ তার লোকজন আব্দুল মুতলিবকে হত্যা করে সিলেট নগরীর আরামবাগ এলাকায় ফেলে যায়। পরে ঘাতক শওকত আলী ও আব্দুর রহিম বিষয়টি নিয়ে টালবাহনা শুরু করেন।

এদিকে আব্দুল মুতলিব বাড়ি ফিরতে না দেখে পরদিন ২৪ এপ্রিল কোতোয়ালী থানায় ১১১১নং একটি জিডি এন্ট্রি করেন তার ভাই মো. তাহির আলী। তৎকালীন কোতোয়ালী থানা পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে আব্দুল মুতলিবের লাশের ব্যবহারী কাপড়-চোপড় দেখালে তার ভাই ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা লাশ সনাক্ত করেন।

এর আগে পুলিশ আরামবাগ এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে বেওয়ারিশ হিসেবে সিলেট নগরীর মানিকপীর (র.) টিলায় দাফন করে। পরবর্তীতে সিলেট জেলা প্রশাসনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৫ এপ্রিল পুলিশ আব্দুল মুতলিবের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে লাশ সনাক্ত করেন তার পরিবার।

পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে আব্দুল মুতলিবের লাশ হযরত শাহপরান (র.) মাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় নিহত আব্দুল মুতলিবের ভাই মো. তাহির আলী কোতোয়ালী থানায় শওকত আলী ও আব্দুর রহিমের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (নং-৭১ (২৬-০৪-১৯৯৮)।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৪ জুলাই তৎকালীন কোতোয়ালী থানার এসআই আবু জাফর ২জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং-৩৮৯) দাখিল করেন এবং ২০০১ সালের ১৭ জুলাই চার্জগঠন (অভিযোগগঠন) করে আদালত এ মামলার বিচারকাজ শুরু করেন।

দীর্ঘ শুনানী ও ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) আদালত আসামী মো. শওকত আলী ও আব্দুর রহিমকে ১৮৬০ সালের পেনাল কোড এর ৩৬৪/৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককে পেনাল কোড এর ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনরাশ্রমে কারাদণ্ড এবং পেনাল কোডের ৩৬৪ ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৩ মাসের বিনাশ্রমে কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট মোঃ ফখরুল ইসলাম ও আসামীপক্ষে ষ্টেইট ডিফেন্স অ্যাডভোকেট মো. আমিরুল ইসলাম মামলাটি পরিচালনা করেন।