বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে প্রাণীর প্রজননে সুবাতাস

Posted on February 4, 2024

মোহাম্মদ রিদুয়ান হাফিজ, কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বাড়ছে প্রাণীর সংখ্যা। বাইরে থেকে সংগ্রহ করে নয়, পার্কেই প্রজননের মাধ্যমে এসব প্রাণীর বংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি এই ধারা অব্যাহত রয়েছে বিরল প্রজাতির প্রাণীর ক্ষেত্রেও। এতে আগ্রহ বাড়ছে পর্যটকদেরও। কর্তৃপক্ষের দাবি- পার্কে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করায় প্রজননে সুফল পাওয়া যাচ্ছে।

সাফারি পার্ক সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে বাচ্চা প্রসব করেছে ইন্ডিয়ান বাইসন বা বনগরু। এই বনগরু স্থানীয়ভাবে গয়াল হিসেবে পরিচিত। বাচ্চাসহ বনগরু উন্মুক্ত স্থানে বিচরণ করছে। দেড় মাস আগে দেশে প্রায় বিরল দুটি কালো ভল্লুকও তিনটি বাচ্চা প্রসব করে। যেগুলোর এখনও চোখ ফোটেনি। এর ফলে বাচ্চাসহ মা ভল্লুককে রাখা হয়েছে বন্য প্রাণী হাসপাতালের কোয়ারেন্টিন সেফে। পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, সাফারি পার্কে ১৮টি কালো ভল্লুক ছিল। তিনটি বাচ্চা হওয়ায় বর্তমানে ভল্লুকের সংখ্যা ২১। ভল্লুক গর্ভবতী হওয়ার সাত মাস পর বাচ্চা প্রসব করে। তাই পুরুষ ভল্লুক থেকে বাচ্চাগুলোকে বাঁচাতে প্রসবের এক মাস আগেই মাকে আলাদা করে কোয়ারেন্টিন সেফে নিয়ে যাওয়া হয়। ভল্লুককে নিয়মিত খাবার দেওয়া হয় পাউরুটি, মধু, মিষ্টি কুমড়াসহ কয়েক প্রকারের সবজি। এখনও চোখ না ফোটা ভল্লুকের বাচ্চা মায়ের দুধ পান করছে। ভল্লুক সাধারণত ২০-২২ বছর বাঁচে। বাচ্চা প্রসব করা মা ভল্লুক দুটোর বয়স ১৪ বছর।

প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, ভল্লুক স্তন্যপায়ী প্রাণী। পৃথিবীতে আট প্রজাতির ভল্লুক পাওয়া যায়। সাধারণত ভল্লুকের চেহারা ভারী ও পা ছোট আর মোটা হয়। ভল্লুকের মুখ লম্বাটে, গায়ে বড় বড় লোম। থাবায় পাঁচটি আঙুল আর আঙুলে নখ থাকে। সব ভল্লুকের গায়ে রঙ একরকম নয়। যেমন আমেরিকান কৃষ্ণ ভল্লুকের গায়ের রঙ কালো। এ ছাড়া বাদামি, নীলাভ ইত্যাদি রঙের হয়ে থাকে।

দেশে যে দুটি প্রজাতির ভল্লুক পাওয়া যায় তার মধ্যে একটি কালো ভল্লুক। এ ভল্লুকটিও দেশে এখন বিরল। সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে এদের বাস। মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বনগরুর সংখ্যাও বাড়ছে দ্রুত। এই বনগরু পার্কের গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ উন্মুক্ত এলাকায় বিচরণ করে। গর্ভধারণের নয় মাস পর বাচ্চা প্রসব করে। এক সপ্তাহ আগে একটি প্রসব করলেও পাঁচটি বনগরু এখন গর্ভবর্তী। গত দুই বছরে তিনটি করে আরও ছয়টি বাচ্চা দিয়েছে। পার্কে বর্তমানে ইন্ডিয়ান বনগরুর সংখ্যা ২৩টি।

স্তন্যপায়ী বাঘ-সিংহ ছাড়াও দেশ-বিদেশ থেকে সংগ্রহ করে আনা বিরল প্রজাতির ময়ূর-উটপাখিসহ নানা প্রজাতির পশুপাখি বংশ বৃদ্ধি করেই চলেছে। এখানে জন্ম নেওয়া বাঘশাবক গাজীপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কেও স্থান পেয়েছে। পশুপাখির বংশ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় স্থানীয় দর্শনার্থী ছাড়াও ঘুরতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকরা বিনোদন পায়। স্বল্প পরিসরে স্ব-স্ব বেষ্টনীতে পশুপাখি সম্পর্কে বর্ণনা থাকায় অনেক অজানা তথ্য জানতে পারছে দর্শনার্থীরা।