প্রায় ২০ বছর ধরে শিকলে বাঁধা সাজিদুলের জীবন

Posted on February 4, 2024

সাব্বির মির্জা, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: বুদ্ধি ও বাকপ্রতিবন্ধী সাজিদুল ইসলামের বয়স (২২) বছর। দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত তিনি। জন্মের ৩ বছর পর থেকে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। চোখের আড়াল হলেই দূরে কোথাও চলে যেতেন। তাই বাধ্য হয়েই ছেলেকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে যেতেন মা মরজিনা খাতুন (৬৫)। এভাবে প্রায় ২০ বছর ধরে শিকলবন্দি সাজিদুল ইসলামের জীবন।

টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারে না তার মা। এমন অবস্থায় ছেলের চিকিৎসার জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আকুল আবেদন জানিয়েছেন মরজিনা খাতুন।

মো. সাজিদুল ইসলামের মা মরজিনা খাতুন সিরাজগঞ্জের তাড়াশে পৌর শহরে দক্ষিণ সোলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির সামনে গাছের সঙ্গে পাঁয়ে শিকল ও তালা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে সাজিদুলকে। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। পাশেই বসে আছেন তার মা। মায়ের চোখে-মুখে-কপালে চিন্তার ভাঁজ। বন্দী জীবন থেকে মুক্তির জন্য শিকল ধরে টানাটানি করছেন সাজিদুল ইসলাম ।

মা মরজিনা খাতুন বলেন, ছোটবেলায় কিছু বুঝতে পারেনি। সাজিদুল ইসলামের বয়স যখন পাঁচ-ছয় বছর, তখন টের পাই আমার ছেলে আর ১০টা ছেলের মতো স্বাভাবিক নয়। সেসময় প্রায়ই বাড়ি থেকে হারিয়ে যেত। খোঁজাখুঁজির করে কয়েকদিন পরে অন্য গ্রামে পাওয়া যেত। এভাবে কয়েক বছর যাওয়ার পর ছেলেকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখি। প্রায় ২০ বছর ধরে চলছে শিকল বাঁধা তার জীবন।

তিনি আরও বলেন, স্বামী একজন দিনমজুর। খুব অভাবের সংসার। সবাই ছেলেকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলত, কিন্তু টাকার অভাবে তা হয়ে ওঠেনি। তবে চিকিৎসা পেলে ছেলে ভালো হতে পারে। ছেলেটা আমরা খুব অসহায়। সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চাই। আপনাদের সহযোগিতায় হয়তো সুস্থতা ফিরে পাবে আমার ছেলে।

প্রতিবেশী আমানত হোসেন বলেন, মাঝেমধ্যে সাজিদুল ইসলাম সুস্থ মানুষের মতো কথা বলে। আবার কখনো এলোমেলো কথা বলেন। তাদের সংসারে খুব অভাব। তবে ভালো চিকিৎসা পেলে সাজিদুল ইসলাম সুস্থ জীবনে ফিরতে পারে।

প্রতিবেশীরা বলেন, বুদ্ধি ও বাকপ্রতিবন্ধী সাজিদুল ইসলামের বহু বছর ধরে শিকলে বাঁধা। তার বাঁধন খুলে দিলে অস্বাভাবিক আচরণ করে, হারিয়ে যায়। এজন্যই তাকে বেঁধে রাখা হয়। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না তার মা ও বাবারা। তারা খুবই দরিদ্র।

তাড়াশ পৌর সভার ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো শরিফুল ইসলাম বলে, সাজিদুল ইসলাম চিকিৎসার অভাবে শিকলে বাঁধা থাকে এট জানতাম না। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।

তাড়াশ উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা এ.কে.এম মনিরুজ্জামান বলেন, সাজিদুল ইসলাম শিকলে বাঁধা ও তার মায়ের কষ্টের জীবনের কথা জানতে পেরেছেন। ইতোমধ্যে ছেলেকে সরকারি ভাতা পাচ্ছেন। লিখিত আবেদন পেলে তিনি চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।