কোমর ব্যথা কারণ ও প্রতিকার

Posted on February 3, 2024

ডা: মোহাম্মাদ আহাদ হোসেন।। ব্যথার অভিজ্ঞতা হয় নাই এমন কেউ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আবার তা যদি হয় কোমরে তাহলে তো কথাই নাই। আমরা যেসকল ব্যথায় ভোগী তার মধ্যে কোমরে ব্যথা অন্যতম কারণ কারণভেদে সকল বয়সের মানুষের মধ্যে কোমরে ব্যথা দেখা যায়। তবে মধ্যম ও অধিক বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তাই আজ কোমরে ব্যথার আদ্যেপান্ত নিয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব।

কোমরে ব্যথার কারণ: যে কোনো ধরনের ব্যথার ওপর অস্বাভাবিক চাপ বা ভেঙ্গে যাওয়া বা ইনজুরিই প্রধান কারণ। 

*মাংসপেশি 
*হাঁড়ে 
*জোড়া 
*লিগামেন্ট 
*জোড়ার আবরণ 
*শীরদাড়া বা ভারটিব্রাল কলাম 
*ডিস্ক (দুই কশেরুকার মধ্যে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি।
 
তাই কোমরে ব্যথাও এর ব্যতিক্রম নয়। আসুন জেনে নেয়া যাক কি কি কারণে এসকল ব্যথা তৈরি হতে পারে।

১.যারা অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে একই ভঙ্গিতে কাজ করেন। এতে দেখা যায়, কোমরের মাংসপেশি, কোমরের বিভিন্ন জোড়া বা জয়েন্টস ও স্নায়ুতে চাপ তৈরি হয়। এরকম কিছুদিন চলতে থাকলে সেটা ব্যথায় রুপ নেয় ও পরবর্তীতে ব্যথা প্রচন্ড হয়ে থাকে।

২. বসার চেয়ার টেবিল ঠিকমতো না হলে বা ঠিকমতো না বসলে বা সামনে-পেছনে ঝূঁকে বসলে একই কারণে কোনো সময় কোমরে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

৩. দীর্ঘক্ষণ ড্রাইভিং করলে বা বেশি সামনে ঝুঁকে চালালে কোমর ব্যথা হতে পারে।

৪. যারা শুয়ে বা কাত হয়ে বই পড়েন বা সোফায় শুয়ে টিভি দেখেন বা অন্য কাজ করেন, তাদের মেরুদনাড বা ভারটিব্রাল কলাম দীর্ঘ সময় তার স্বাবিক অবস্থান থেকে ব্যতিক্রম অবস্থানে থাকে। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং ব্যথা অনুভুত হয়।

৫. অনেকেই আছেন যারা কোনো ভারী জিনিস সঠিক নিয়মে তোলেন না। ফলে মেরুদন্ডে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে এবং তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যথা হয়।

৬. অস্বাভাবিক পজিশনে ঘুমানোর কারণে অনেকেই ব্যথায় আক্রান্ত হতে পারেন।

৭. আঘাতজনিত কারণে উপরোল্লেখিত যে কোনো একটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যথা হতে পারে।

৮. যারা বয়োবৃদ্ধ আছেন, তাদের দীর্ঘদিন ধরে শরীর নাড়াচাড়া বা জয়েন্টস একই অবস্থায় থাকতে থাকতে মাংসপেশী শিকিয়ে যায়, জয়েন্টসগুলো শক্ত হয়ে স্নায়ুর উপর চাপ বৃদ্ধি করে ফলে ব্যথা হয়।

৯. এছাড়াও অস্টিওপোরোসিস বা হাঁড়ে ক্ষয় রোগ। যাতে আমাদের শরীরের হাঁড়গুলো ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে পারে না। যে কারণে হাঁড়গুলো নরম ও ভঙ্গুর হয়। আবার এতে আমাদের দ্ইু কশেরুকার মাঝে যে নরম জেলির মতো পদার্থ থাকে বা ইন্টরভারটিব্রাল ডিস্ক থাকে তার উপর চাপ পড়ে। সেটা আবার আমাদের শরীরের দুই পাশের ব্যথা নিয়ন্তণকারী স্নায়ুর উপর চাপ বাড়ে এবং কোমরে ব্যথা হতে পারে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
*সব সময় ধরে বা জমে আছে এ ধরনের ব্যথা।
*ভারি ওজন তোলা বা অতিরিক্ত কাজের পর তীব্র ব্যথা।
*কোমর থেকে নিতম্ব, উরু ও পায়ের আঙুল পর্যন্ত ব্যথা বিস্তৃত হলে।
*পায়ে দুর্বলতা বা অবশ ভাব হলে।
*হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়।
*প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে।
*শোয়া অবস্থায় বা শোয়া থেকে ওঠার সময় ব্যথা হলে।

চিকিৎসা: চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা দুটিন পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি।
১. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
২. ব্যথা পরবর্তী চিকিৎসা

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
১. দীর্গক্ষণ আমরা একই ভাবে বসে না থেকে ৫-১০ মিনিট বিরতি নিতে পারি। এই সময়ে আমি নিজ অবস্থানে বসে শারীরিক কিছু হালকা ব্যায়াম করে নিতে পারি যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন মাংশপেশী, জয়েন্টস ও মেরুদন্ড রক্ত চলাচল বাড়বে ও এদের অতিরিক্ত চাপ নেয়ার জন্য প্রস্তত হবে।

২. নিয়মিতভাবে আমাদের বিভিন্ন জায়গায় মাংশপেশির জন্য নির্ধারিত কিছু ব্যায়াম আছে যা করতে পারি। এসকল ব্যায়ামে বেশি সময় প্রয়োজন হয় না। নিয়মিত ভাবে ৫-১০ মিনিট সময় দেয়ার মাধ্যমে আমরা এসকল ব্যায়াম করতে পারি। এতে আমাদের শরীরের মাংশপেশী ও জয়েন্ট অতিরিক্ত চাপ নেয়ার জন্য প্রস্তত হবে।

৩. ঘুমানোর ক্ষেত্রে খুব সুন্দর কিছু নিয়ম আছে যা মেনে আমরা খুব সহজেই শরীরের ঘাড়, মাথা ও কোমরের ব্যথা থেকে বেঁচে থাকতে পারি।

৪. আমাদের বাসায় যারা খুবই বয়োবৃদ্ধ তাদের দিনের কোনো এক সময় অন্য কেউ একজন শরীরের বিভিন্ন মাংশপেশী ম্যাসেজ ও জয়েন্টসগুলো নাড়াচাড়া করিয়ে দিতে পারি। এতে করে তাদের স্নায়ুর উপরে চাপ কম হয় এবং ব্যথা কম থাকে বা আসে না।

৫. অভ্যাস না থাকলে মাত্রারিক্ত ওজন বহন করা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আমাদের মাংশপেশী, লিগামেন্টস, জয়েস্টস ও মেরুদন্ডের উপর অতিরিক্ত চাপের কারণে ইনজুরি থেকে ভালো থাকতে পারি।

৬. অস্টিওপোরোসিস রোগের জন্য যারা ঝুঁকিতে থাকেন যেমন মাঝ বয়েসী মহিলা, ডায়াাবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, যাদের ওজন অতিরিক্ত তারা যথা সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যভ্যাস মেনে চলতে পারেন।

ব্যথা পরবতী চিকিৎসা পদ্ধতিঃ কোমরে ব্যথায় যারা ভোগেন তারা অধিকাংশ সময় মানসিক চাপে থাকেন এই ভেবে যে আমর মনে হয় বড় কিছু হয়েছে অথবা আমি আর কখনো সম্পূর্ণ ভালো বা সুস্থ হব না এমন।কিন্তু বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুল। কোমরে ব্যথা অনেক ধরনের আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে এবং এগুলো নিয়ে ও কিছু অভ্যাস মেনে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকা যায়। এই চিকিৎসা পদ্ধতি আমরা কয়েকটি স্তরে নিতে পারি।

১. মেডিক্যাল চিকিৎসা ও ব্যায়াম।
২. ইন্টারভেনশনাল থেরাপি।
৩. কগনিটিভ বিহ্যাভিয়েরালথেরাপি বা জীবন যাপন পদ্ধতি পরিবর্তনমুলক কাউ¯েœলিং
৪. অপারেশন।

কাগনিটিভ বিহ্যায়েরাল থেরাপি বা জীবন যাপন পদ্ধতি পরিবর্তন মূলক কাউন্সিলিং:
কোমরে ব্যথার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ওকার্যকরী চিকিৎসা। এতে এ সকল রুগীদের মানসিক অবস্থা উন্নতি করা হয়, চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বোঝানো হয় জীবন যাপন পদ্ধতি নিয়ে বোঝানো হয় ও বিভিন্ন ব্যায়াম শিক্ষা দেয়া হয়। বিভিন্ন পেইন সেন্টারে এই ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকে।

মেডিক্যাল চিকিৎসা: মেডিক্যাল চিকিৎসা ক্ষেত্রে কয়েকটি কথা বলে নেয়া খুবই জরুরী। ব্যথার জন্য অনেকেই বিভিন্ন সময় নিজেদের ইচ্ছামতো ঔষধ কিনে খান। ব্যথার জন্য ব্যবহার হয় এমন অনেক ঔষধ (NSSID) দীর্ঘদিন ধরে বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে খেলে কিডনী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশস্কা থাকে। প্রেশার বেড়ে যাওয়ার আশস্কা থাকে। এছাড়াও রক্ত ক্ষরণজনিত সমস্যা হতে পারে। সেজন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিরাপদ ঔষধ খাওয়া উচিত। আর চিকিৎসা নেয়ার সময় অবশ্যই পুর্ব থেকে কোনো অসুখ বা ঔষধ খেয়ে থাকলে বলতে ভুল করবেন না।

ব্যায়াম : কোমর ব্যথার চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো ব্যথা নিরাময় করা এবং কোমরের নড়াচড়া স্বাভাবিক করা। পুর্ণ বিশ্রাম কিন্তু দীর্ঘদিন বিশ্রাম নিলে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে যায়। তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ওজন তোলা, মোচড়ানো পজিশন, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম ও সামনে ঝুঁকে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। সঠিক উপায়ে বসার অভ্যাস করতে হবে এবং প্রয়োজনে ব্যাক সাপোর্ট ব্যবহার করতে হবে। গরম সেঁক (গরম প্যাড, গরম পানির বোতল বা উষ্ণ পানিতে গোসল) নিতে হবে। পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে। কিছু ব্যায়াম কোমরব্যথা প্রশমনে সাহায্য করে, এমনকি ওষুধের চেয়েও ভালো ফল দেয়। এই ব্যায়াম প্রতিদিন রাতে ও সকালে বিছানায় শুয়ে শুয়ে করতে পারেন। সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৭ মিনিট।

১. সমতল হালকা নরম বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে দুই হাত শরীরের পাশে রেখে দুই পা সোজা করে শুতে হবে। হাঁটু ভাঁজ না করে এক পা ওপরের দিকে তুলুন যত দূর সম্ভব। ১০ সেকেন্ড পা তুলে রাখতে হবে। একই ভাবে অপর পা ওপরে তুলুন এবং একই সময় নিন।

২. এবার একই ভাবে হাঁটু ভাঁজ না করে একসঙ্গে দুই পা তুলুন এবং একই সময় নিন।

৩. এবার এক হাঁটু ভাঁজ করে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে হাঁটুকে বুকে লাগানোর চেষ্টা করুন। 
১০ সেকেন্ড থাকুন। একই ভাবে অপর হাঁটু বুকে লাগাতে হবে।

৪. একসঙ্গে দুই হাঁটু ভাঁজ করে দুই হাতে জড়িয়ে বুকে লাগাতে হবে।

৫. সর্বশেষ দুই পা সোজা করে পায়ের পাতার দিকে সটান করে ১০ সেকেন্ড রাখকতে হবে। 
প্রতিটি ধাপে ১০ সেকেন্ড দীর্ঘায়িত হবে বা ১০ গোনা পযর্ন্ত করতে হবে।

ইন্টারভেনশন বা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা:
মেডিক্যাল চিকিৎসা ও ব্যায়াম যদি কার্যকরী না হয় বা অনেক ক্ষেত্রে ব্যথার কারণ যদি নির্ণয় করা সম্ভব না হয় তাহলে ইন্টারভেনশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করে ভালো উন্নতি পাওয়া যায। বর্তমানে ব্যথার চিকিৎসায় অনেক ধরনের ইন্টারভেনশন প্রচলিত রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন ব্যথায় কার্যকারী। অনেকেই ইন্টারভেশন নিয়ে ভীত হন। তাদের জন্য তথ্য হচ্ছে এই সকল ইন্টারভেশনগুলো ব্যথামুক্তভাবে করা হয় এবং রুগীরা দিনে দিনেই বাসায় চলে যেতে পারেন। এতে অপারেশন এড়ানো যায়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যথা কমাতে ইন্টারভেনশন নিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু বলব। 

পিএলআইডি বা রগে চাপজনিত কোমর ব্যথার অত্যাধুনিক চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী কোমরে ব্যথার ক্ষেত্রে পিএআইডি বা রগে চাপ একটি অন্যতম কারণ। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে এই কারণটি খুব কমন নয়। সাধারণত কোমরে ব্যথার রোগীদের ক্ষেত্রে শতকরা ২-৫ শতাংশ রোগীদের ক্ষেত্রে এই ধরনের পিএলআইডি বা রগের চাপজনিত কারণ থাকতে পারে।

কিভাবে বোঝা যাবে?
এই ধরনের ক্ষেত্রে কোমরে ব্যথা সাধারণত কোমর থেকে দু-পায়ের কোনো এক পাশে অথবা উভবা পাশে নেমে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পা অবশ অনুভব হতে পারে। গুরুত্বপুর্ণ একটি লক্ষণ হচ্ছে হাঁটতে গেলে বা কোনো বস্ত ঝুঁকে তুলতে গেলে এ ব্যথা প্রচন্ড আকার ধরণ করতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনও হতে দেখা যায় যে সজোরে হাঁচি বা কাশি দেয়ার পর এই ব্যথা অনুভব হয় এবং এটি প্রচন্ড আকার ধারণ ধরণ করে। হেলান দিয়ে বসে থাকলেঅথবা বিছানায় শুয়ে থাকলে এই ব্যথাটি প্রশমিত হয়।

চিকিৎসা পদ্ধতি কি?
এ ধরনের ক্ষেত্রে কোমরে ব্যথা হলে প্রথমেই অপারেশন করাতে হবে বিষয়টি এমন নয়। রোহের লক্ষণ এবং এমআরআই পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে সাধারণত করণীয় নির্ধারণ করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যদি হঠাৎ করে প্রচন্ড ব্যথা, পা অবশ হয়ে যাওয়া, হাঁটতে না পারা, পায়খানা ও প্রস্রাবের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা এ জাতীয় লক্ষণ প্রকাশ পায়, তাহলে এ অবস্থায় দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। তবে এই জাতীয় ঘটনা খুব কমই দেখা যায়। রোগের অবস্থা প্রাথমিক দিকে থাকলে ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়, প্রয়োজনীয় কিছু ব্যায়াম দেয়া হয়। এই ঔষধ, ব্যায়াম এবং অপারেশনজনিত চিকিৎসার মধ্যবর্তী অবস্থায় মিনিমাল ইন্টারভেনশন চিকিৎসা বর্তমান সময়ে সারা বিশে^ ব্যাপকে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং এ ব্যাপারে ব্যাপক গবেষণা চলছে।

কি কি ধরনের ইন্টারভেনশন চিকিৎসা রয়েছে?

ওজন নিউক্লিওলাইসিস: আমাদের শরীরের পুরো মেরুদন্ড একটার পর একটা পর একটা কশেরুকা এবং তাদের মাঝখানে ডিস্ক দ্বারা সজ্জিত আছে। এই ডিস্ক মূলত শক এবজরবার হিসেবে কাজ করে। আমাদের ওজনকে বহন করে ও ভারসাম্য বজায় রাখে। ডিস্কের গঠনে বাইরের দিকে রাবারের মতো অংশ এবং ভেতরের দিকে রাবারের মতো অংশ এবং ভেতরের দিকে জেলির মতো অংশ দিযে গঠিত থাকে। যদি কোনো কারণে ডিস্কের সুস্থতা নষ্ঠ হয় বা ডিজেনারেশন-জনিত কোনো সমস্যা হয় তাহলে এর স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। এছাড়াও যদি শরীরের ওজন অত্যাধিক রকম বেড়ে যায় তাহলেও এর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলশ্রুতিতে ডিস্কের ভেতরে থাকা জেলির মতো অংশের উপরে চাপ পড়ে এবং এটি পেছনের দিকে বের হয়ে আসতে থাকে। ওজন নিউক্লিওলাইসিস এই পদ্ধতিতে ডিস্কের ভেতরে সূক্ষ্র সূচের মতো অংশ প্রবেশ করিয়ে এর মাধমে সদ্য প্রস্ততকৃত ওজন গ্যাস প্রয়োগ করা হয়। এই ওজন ডিস্কের ভেতরের জেলের মতো অংশের পানির অংশটুকু শুষে নেয়া। যে কারণে ডিস্কের ভেতরে নেগেটিভ প্রেসার তৈরি হয় এবং ডিস্ক স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসার চেষ্ঠা করে। একই সাথে জেলির মতো অশের তরল অবস্থা থেকে একটু শক্ত অবস্থা ধারণ করে যে কারণে ভবিষ্রতে পেছনের কিকে চাপ দেয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। কমে যায়। ইনজেকশন পরবর্তী সময়ের সতর্কতা মেনে চললে এই পদ্ধতিতে দীর্ঘমেয়াদী ভালো থাকা সম্ভব।

সিলেষ্টিভ নার্ভ ব্লক (এসএনআরবি): এটি আরো একটি ইন্টারভেনশন প্রক্রিয়া। যখন মেরুদন্ডর ডিস্কের উপরে যে কোনো কারণজনিত চাপ পড়ে এবং এটি পেছনে থাকা স্নায়ু মূল বা নার্ভ রুটের উপরে চাপ প্রয়োগ করে। ফলে নার্ভে প্রদাহ হয় বা ফুলে যায়। এ কারণে রহে চাপজনিত কোমরে ব্যথা কোনো এক পাশে অথবা উভয় পাশে কোমর থেকে পা বরাবর নেমে আসে। এই ধরনের ক্ষেত্রে যদি কোনো এক পাশে বা উভয় পাশে এ জাতীয় ঘটনা ঘটে তাহলে সুনির্দিষ্ঠ নার্ভ রুটে স্টেরয়েড-জাতীয় ঔষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে নার্ভে প্রদাহ-জনিত ফুলে যাওয়া রোধ করা সম্ভব। এর মাধ্যমে কোমর থেকে নেমে যাওয়া ব্যথা বা শিন শিন করা বা অবশ অবশ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

কডাল ইপিডুরাল ইনজেকশন: এই প্রক্রিয়াটি আরো একটি ইন্টারভেনশন ইঞ্জেকশন প্রক্রিয়া। যদি মেরুদন্ডের একাধিক ডিস্কে সমস্যার কারণে বিভিন্ন লেভেলের নার্ভের উপরে চাপ পড়ে সেক্ষেত্রে অপারেশন যেমন ঝুঁকিপুর্ণ হয় তেমনি সুনির্দিষ্ঠ কোনো নার্ভে ইনজেকশন দিয়ে লাভ হয় না। এ ধরনের ক্ষেত্রে আমাদের মেরুদন্ডের শেষ ভাগে একটি ছিচদ্র রয়েছে যার মাধ্যমে সূক্ষ্ম সূচ প্রবেশ করিয়ে স্টেরয়েড-জাতীয় ইনজেকশন দেয়া হয়। এই ইনজেকশনের মাধ্যমে মেরুদন্ডের কোমরে উপরিভাগের থেকে একদম শেষভাগ পর্যন্ত রগে চাপ-জনিত কোমরে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে ভুমিকা রাখে।

ইন্ট্রাডিসকাল পিআরপি: এটি আরো এক ধরনের ইন্টারভেনশন-জনিত কোমরে ব্যথার চিকিৎসা। এক্ষেত্রে যদি মেরুদন্ডের সুনির্দিষ্ট কোনো ডিস্কে ডিজেনারেটিভ সমস্যা-জনিত কারণ দেখা যায়, সেক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ঠ ডিসকে প্লাটিলাইট রিচ প্লাজমা বা পিআরপি ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। এতে করে রি-জেনারেনের মাধ্যমে ডিস্কের সুস্থতা বাড়ে এবং পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।

এই ধরনের ইন্টারভেনশন জড়িত চিকিৎসায় কি খুব বেশি ব্যথা পাওয়া যায়?
খুব কমন একটি প্রশ্ন সবার। প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের নন্টারভেনশন-জনিত চিকিৎসয় একটি ইনজেকশন প্রয়োগের মতো খুবই সামান্য ব্যথা অনুভব হতে পারে। রোগীকে শুধুমাত্র কিছু সময়ের জন্য উপর হয়ে শুয়ে থাকতে হয় এটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়।

এই ধরনের ইন্টারভেনশনে কি কোনো ক্ষতি হওয়ার আশষ্কা আছে?
উপরোল্লিখিত প্রত্যেকটি ইন্টারভেনশনে ক্ষতি হওয়ার আশষ্কা নেই বললেই চলে। কারণ এতে যেই সুচ ব্যবহার করা হয় এটি অত্যন্ত সুক্ষ এবং এই সূচের দ্বারা কোনো ক্ষতি হওয়ার আশষ্কা থাকে না। যদিও-বা কোকো ক্ষেত্রে ভুল জায়গায় সূচ প্রবেশ করে তাহলে সেটি তাংক্ষণিক এক্স-রে, মাধ্যমে দেখা যায় এবং আবার সঠিকভাবে সূচটি প্রবেশ করিযে তাৎক্ষণিক এক্সে-রে র মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পরেই ইঞ্জেকশন প্রদান করা হয়। সুতরাং এই প্রক্রিয়ায় ক্ষতি হওয়ার আশস্কা একেবারেই কম।

কোমরে ব্যথা ইনজেকশন-জনিত চিকিৎসার ক্ষেত্রে কি হাসপাতালে ভর্তি থাকা লাগে?
সাধারণত সকলের ইন্টারভেনশন-জনিত চিকিৎসায় হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন নেই ইনজেকশন পরবর্তী ১৫ থেকে ৩০ মিনিট আমরা রোগীর অবস্থা পর্যাবেক্ষণ করি এবং এরপর সে বাসায় যেতে পারে।

এই ধরনের ইন্টারভেনশন-জনিত চিকিৎসায় খরচ কেমন?
এই প্রশ্নটি অনেকের মধ্যেই রয়েছে। অবস্থা ভেদে খরচ কিছু ওঠানামা করলেও কোমরে ব্যথার কারণে একটি অপারেশন-জনিত চিকিৎসার খরচের থেকে এ জাতীয় যে কোনো ইনজেকশনের খরচ এক তৃতীয়াংশের চেয়েও কম। তবে এই খরচ মূলত উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার কারণেই হয়ে থাকে।

এই ধরনের ইন্টারভেনশননে যে স্টেরয়েড জাতীয় ইনজেকশন দেয়া হয় তাতে কি শরীরের ক্ষতি হতে পারে?

এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপুর্ণ যে আমরা মুখে যদি ব্যথার জন্য দীর্ঘমেয়াদী স্টোরয়েড-জাতীয় ঔষধ খাই এটি সারা শরীরে নির্দিষ্ঠ সময়ে পরে খারাপ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু সকল ধরনের ইন্টারভেনশন-জনিত কোমরে ব্যথার চিকিৎসা খুবই সামান্য স্টেরয়েড-জাতীয় ঔষধ সুনির্দিষ্ঠ জায়গায় প্রয়োগ করা হয়। যার ফলে এতে দীর্ঘমেয়াদি শরীরে কোনো খারাপ ফলাফলের আশস্কা থাকে না। বরং এতে দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ-জনিত সমস্যার কারণে যে ব্যথা হয় সেটা নিরাময় গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা।

এ ধরণের ইন্টারভেনশন-জনিত চিকিৎসায় কি রোগ পুরোপুরি সেরে যায়?
সকল ধরণের ইন্টারভেনশন-জনিত চিকিৎসায মেরুদন্ডের ডিস্ককে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া না গেলেও ডিস্ক যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় রেখে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডিস্কের সুস্থতা ফিরিয়ে অনে যার মাধ্যমে রোগের লক্ষণ থেকে ভালো থাকা যায়,ব্যথামুক্ত থাকা যায় এবং সতর্ক থাকলে দীর্ঘমেয়াদি অপারেশন-জনিত চিকিৎসা এড়িয়ে চলা সম্ভব।

অপারেশন চিকিৎসা: বেশ কিছু কারণে অপারেশন-জনিত চিকিৎসা দরকার হতে পরে। 
যেমন -
*আঘাত-জনিত কারণে মেরুদন্ডের হাঁড় ভেঙ্গে গেলে।
*ডিস্ক প্রেল্যান্সড হয়ে বেতরের জেলির মতো অংশ বের হয়ে গেলে।
*কোমরে ব্যথার সাথে পা অবশ হওয়া শুরু হলে।
*কোমরে ব্যথার সাথে পায়খানা ও প্রস্রাবের বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কস্ট হলে।
*মেরুদন্ডে টিউমারের কারণে কোমরে ব্যথা হলে।

কোমরে ব্যথা কাদের বেশি হয়?
১. কোমরে ব্যথা সসাধারণত বয়সের সাথে সাথে বাড়ে। বেশি দেখা যায় ৩০ থেকে ৪০ বছরে বয়সের পর থেকে।
২. কায়িক শ্রমের আভাব বা নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব পেট ও পিঠের মাংসপেশি চাপ ধরে যায়। ফলে একটু পরিশ্রমেই ব্যথা হতে পারে।
৩. অতিরিক্ত ওজনের কারণে কোমরের মাঙসপেশি এবং হাঁড়ের ওপর চাপ পায়ে । ফলে ব্যথা হতে পরে।
৪. অনেক সময় কিডনিতে পাথর হলে বা প্রস্রাবে ইনফেকশন হলেও কোমরে ব্যথা হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শুধু কোমরে ব্যথাই না, অন্য আরো অনেক উপসর্গও থাকবে। তাই কোমরে ব্যথা হলেই সেটা কিডনি স্টোন বা ইউরিন ইনফেকশন নয়।
৫. ডিপ্রেশন বা স্ট্রেসের কারণেও কোমরে ব্যথা হতে পারে।
৬. মদ্যপান এবং স্মোকিংয়ের কারণেও কোমরে ব্যথা হয়। স্মোকিংয়ের কারণে রক্তনালী চিকন হয়ে যায় এবং কোমরা থেকে রিচের দিকে ঠিকমতো রক্ত প্রবাহ হয় না। যার পলে হাঁড় ঠিকমতো পুষ্টি পায় না এবং দুর্বল হয়ে পড়ে।
৭. অস্টিওপোরোসিসের কারণে অনেক মাঝ বয়সী মহিলাদেরও মাজায় ব্যথা হতে পারে।

কোমরে ব্যথায় কখন সতর্ক হবেন?
কোমরে ব্যথার পাশাপাশি কিছু কিছু লক্ষণ আছে যা অনেক রোগের অ্যালার্মিং সাইন। এসকল ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিঃসকের পরামর্শ নিতে হবে যেমন-
১. যদি কোমরে ব্যথার সাথে সাথে প্রস্রাব বা পায়খানার কোনে পরিবর্তন খেঢায় করেন।
২. যদি সাথে জ্বর থাকে।
৩. আঘাত পেলে বা কোনো প্রকার ট্রমা হলে।
৪. যদি ব্যথার তীব্রতা প্রচন্ড আকার ধারণ করে এবং রেস্ট নিলেও না কমে।
৫. যদি ব্যথা এক বা দুই পায়েই নেমে যায়, বিশেষ করে হাঁটুর নিচে।
৬. যদি ব্যথার সাথে সাথে দুর্বলতা, অবশ ভাব বা পায়ে ঝিম ঝিম অনুভূতি হয়।
৭. যদি ব্যথার সাথে সাথে ওজন কমতে থাকে।
৮. যে কোনো প্রকার স্টেরয়েড ওষুধ খাওয়ার পর যদি ব্যথা শুরু হয়।
৯. যদি আপনার অতিরিক্ত মদ পান বা সিগারেটের বদভ্যাস থাকে। কোমরে ব্যথা আমাদের একটি খুবই সাধারণ সমস্যা। এটিকে অনেকেই সময়মতো গুরুত্ব দেন না। যে কারণে মারাত্বক পরিণতি এমনকি অপারেশনের মতো ঝুঁকিপুর্ণ পর্যায়ে চলে যেতে হতে পারে। তাই কোমরে ব্যাথার গুরুতেই চিকিৎসাকের পরামর্শ নিয়ে চলুন। অনেক অত্যাধুনিক চিকিৎসা রয়েছে ধারাবাহিকভাবে সেগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জেনেশুনে ও বুঝে চিকিৎসা নিতে পারেন। আর অবশ্যই চলা-ফেরা বা জীবনযাপন পদ্ধতিতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন কোনো সমস্যা তৈরি না হয়। সবাই ভালো থাকুন সুস্থু থাকুন।

লেখক: ডা: মোহাম্মাদ আহাদ হোসেন, এমবিবিএস, বিসিএস, এমডি, এফআইপিএস(ইন্ডিয়া) কনসালটেন্ট ও পেইন ফিজিশিয়ান বঙ্গবন্ধু শেমখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চেম্বার: ইবনে সিনা ডায়গনোস্টিক ও কনসালটেশন সেন্টার, লালবাগ, ঢাকা।