অনুদান পাওয়ার আগেই নিভে যায় জীবনের প্রদীব

Posted on January 27, 2024

সাব্বির মির্জা, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: ক্যান্সার আক্রান্ত ভেংড়ী বড়ইচড়া গ্রামের মোহশীন আলী চিকিৎসার জন্য সরকারি অনুদান পেতে ২০২২ সালে আবেদন করেন। ওই বছর আগষ্ট মাসে মারা যান তিনি। পরের বছর এপ্রিল মাসে ৫০ হাজার টাকা চেক বরাদ্দ হয় তাঁর নামে । নমিনিরা সেই টাকা তুলে কুলখানিতে খরচ করেছেন। বারুহাঁস ইউনিয়নের বিনসাড়া গ্রামের হাসেম আলী মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যায় পক্ষঘাতগ্রস্ত হন। চিকিৎসার জন্য সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদন করে ৫০ হাজার টাকা পান। কিন্তু সেটা মৃত্যুর ছয় মাস পর ।

নমিনিরা ওই টাকা ব্যাংক থেকে তুলে ধার দেনা পরিশোধ করেন। মোহশীন আলী ও হাসেম আলীর মতো জটিল রোগে আক্রন্ত ছয়জন রোগী চিকিৎসা অনুদান চেয়ে সমাসেবা অধিদপ্তরে আবেদন করেও যথাসময়ে আর্থিক সহায়তা পাননি। তাদের নামে বরাদ্দ অনুদানের চেক আসে মৃত্যুর পর।

সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার অসহায় রোগীদের ক্যান্সার ,কিডনি, লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ , ষ্ট্রোকে প্যারলাইজডসহ জটিল রোগীর আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি ‘ বাস্তবায়ন করছে।

এর আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা ৩০০ জনকে দেওয়া যায় । বরাদ্দ কম থাকায় ৫০ জন বঞ্চিত হন। চলিত বছরে আবেদন করেছেন ৪০০ রোগী। বরাদ্দের প্রথম কিস্তির ৩৮ লাখ টাকা এসেছে।

সূত্র জানায়,২০২২-২৩ অর্থবছরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের আট ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৩৬ জন আবেদন করেন।

এর মধ্যে ২০২৩ সালের ২৭ এপ্রিলে ৯ জন ও ২৫ জুলাই ৭ জন ৫০ হাজার টাকা করে মোট ৮ লাখ টাকার আর্থিক সহযোগিতার চেক পান । অর্থ পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হলেও তালম ইউনিয়নের পান্ডরা গ্রামের তফের আলী, লাউতা গ্রামের সুফিয়া খাতুন ,দেশীগ্রাম ইউনিয়নের সোহানুর রহমান অনুদানের টাকায় চিকিৎসা নিয়ে ভালো আছেন ।

তবে সরকারি সহযোগিতা পাওয়ার আগেই মারা গেছেন ক্যান্সারে আক্রান্ত তালম ইউনিয়নের বড়ইচড়া ভেংড়ী মোহশীন আলী, দেশীগ্রাম ইউনিয়নের নজরুল ইসলাস, বারুহাঁস ইউনিয়নের সড়াবাড়ি গ্রামের আবুল হোসেন, পাড়িল বড়ইচড়া সালেকা খাতুন, ষ্ট্রোকে প্যারাইলাইজড বারুহাঁস ইউনিয়নের বিনসাড়া গ্রামের হাশেম আলীসহ ছয়জন।

পাড়িল বড়ইচড়া গ্রামের সালেকা খাতুনের স্বজন আশানুর বেগম জানান, সরকার দরিদ্র রোগীদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে উপকার করেছে । তবে এ টাকা দ্রূত না পেলে রোগীকে সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্ত এ কে এম মনিরুজ্জামান জানান, জটিল রোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রথম পর্যায়ে আবেদন পাওয়ার পর উপজেলা চেয়ারম্যান ,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কর্মকর্তা আবেদন যাচাই -বাছাই করে জেলা সমাসেবা কার্যালয়ে পাঠান।

জেলায় যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি আছে, যার সভাপতি জেলা প্রশাসক বা তাঁর মনোনীত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকা । কমিটির সদস্যরা তিন মাস পরপর সভা করে আর্থিক আবেদন যাচাই -বাছাই করবেন। পরে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দ এলে উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ টাকা বন্টন করা হয় ।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ছয় মাসেও জেলা কমিটির কোনো সভা হয়নি । এ কারণে আবেদনকারীদের সহযোগিতা পাওয়ায় বিষয়টি ও ঝুলে আছে।

কমিটির সদস্য সচিব জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, অনেক সময় বরাদ্দ আসতে দেরি হয় । তখন কমিটির সভা করতেও দেরি হয়। তারপরও মুমূর্ষু রোগীদের কথা ভেবে দ্রূত কাজ করার চেষ্টা করি।