প্রায় ১ যুগ ধরে আবুল কালামের কাঁধে শিশুদের আনন্দের ‘হাওয়াই মিঠাই’

Posted on January 25, 2024

সাব্বির মির্জা, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: দুপুর বেলা; বাড়ির উঠানে পড়েছে শীতের মিঠা রোদ। গায়ে লাগলে বেশ আরাম বোধ হয়। ওই সময় কানে আসে ঠং ঠং আওয়াজ, সঙ্গে ‘হাওয়াই মিঠাই লাগবে, হাওয়াই মিঠাই’ হাঁক। বাড়ির বাইরে বের হতেই চোখে পড়ল বাঁশের লাঠির দুই পাশে ঝুলানো বাক্স ও ব্যাগ নিয়ে গ্রামে পথে পথে ছুটছেন হাওয়াই মিঠাইওয়ালা।

কাধেঁর একপাশে রয়েছে হাওয়াই মিঠাই। তার পিছে রয়েছে গ্রামের দূরন্ত শিশু-কিশোররা। হাওয়াই মিঠাইওয়ালার মো আবুল কালাম । তার হাতে রাখা ঘণ্টা বাজিয়েই নজর কাড়ছেন শিশু-কিশোরদের।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারী) সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বোলিয়া গ্রামে দেখা মিলল পঞ্চাশোর্ধ্ব আবুল কালাম।

গ্রাম- ঘুরে ফেরি করে কটকটি, হাওয়াই মিঠাই, নারকেল আইসক্রিমসহ এসব জিনিস বিক্রির দৃশ্য এখন আর খুব একটা দেখা যায় না। কালের পরিক্রমায় নানা ধরনের লোভনীয় জিনিস শিশুদের হাতের নাগালে আসায় কদর কমেছে এসব জিনিসের। এরপরও কিছু কিছু এলাকায় ধানের মৌসুম ও বৈশাখ, চৈত্র সংক্রান্তি, বিজু, সাংগ্রাই, বৈসাবিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মেলাতে হাওয়াই মিঠাই পাওয়া যায়। চিরায়ত গ্রাম বাংলার প্রিয় খাবার এই হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে এখনও সংসার চলান আবুল কালামের মতো দিন এনে দিন খাওয়া কিছু মানুষ।

ঐতিহ্যবাহী হাওয়াই মিঠাই দেখতে গোল গোল। মিষ্টি স্বাদ এবং মুখে দিলেই নিমিষে মিলিয়ে যায়। তুলার মতো তুলতুলে গোলাপী রঙের হাওয়াই মিঠাই এখন কালেরগর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে। হাওয়াই মিঠাইয়ের আকার আকৃতিতেও এসেছে পরিবর্তন।

হাওয়াই মিঠাই বানাতে খুব বেশি কিছু লাগে না। একটি মেশিন, আর উপকরণ হিসেবে স্পিরিট, চিনি, তেল আর হালকা ভোজনযোগ্য রঙ। চলন্ত মেশিনের উপরিভাগের থালার মতো জায়গার মধ্যে ছিদ্রতে দেওয়া হয় এই উপকরণ। মেশিনের ঘূর্ণিতে যে তাপ উৎপাদন হয় তা থেকে রূপ নেয় হাওয়াই মিঠাই। এক কেজি চিনি দিয়ে প্রায় ৫৫০ থেকে ৭০০ হাওয়াই মিঠাই বানানো যায়।

অতিদরিদ্র পরিবারের মৃত আলহাজ্ব উদ্দিনের ছেলে আবুল কালাম। প্রায় ১ যুগ ধরে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। অন্য পেশায় আরও লাভজনক হলেও তবুও ছাড়ছেন না মিঠাই বিক্রির কাজ। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে আকড়ে ধরে এ কাজটি করে চলছেন তিনি।

আবুল কালাম জানান, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ৪ সদস্যের সংসার তার। একমাত্র পেশা হাওয়াই মিঠাই বিক্রি। বাড়িতে ছোট একটি মেশিনে চিনি দিয়ে এই মিঠাই তৈরি করে থাকেন। এরপর সকাল হলে গ্রামাঞ্চলে হেঁটে চলেন মিঠাই বিক্রি করতে।

তিনি আরও বলেন, হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে খরচ বাদে দৈনিন্দন ৩০০ টাকা লাভ থাকে। এ ‍দিয়ে কোনমতে সংসার চালানো হচ্ছে।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আবুল কালাম হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে চলেছেন। আবহমান গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্য শৈশবের মতোই জ্বলজ্বল করে বেঁচে থাক।