মেহেরপুর আমঝুপির সূর্যমুখী ফুল এখন সেলফিতে

Posted on January 22, 2024

সেলিম রেজা, মেহেরপুর প্রতিনিধি : সবুজ গাছে হলুদ সূর্যমুখী, দুধারে নারকেল গাছের সারি। মেঠো পথ আর সবুজ ঘাসে ছাওয়া কিনারা। হলুদ আর সবুজ মিলে প্রকৃতির দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছে হাজারো মানুষ। কেউ করছেন পিকনিক, কেউ তুলছেন ছবি, কে করছেন নাটক আবার কেউ দু-চোখ মেলে উপভোগ করছেন অপার সৌন্দর্য ও সেলফিতে। 

বলছিলাম, মেহেরপুর শহর থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বদিকে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা প্রধান সড়কের ধারে আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারের কথা। এই খামারে বিভিন্ন সবজির বীজ উৎপাদনের জন্য ফসল চাষ করা হলেও সূর্যমুখীর বেলায় সেটির ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়। জানুয়ারির শুরুতেই সূর্যমুখী ফুল ফুটলেই সেখানে ছুটে আসে হাজারো দর্শনার্থী।

বিএডিসির আওতাধীন আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারে চলতি মৌসুমে দুটি প্লটে ৭ একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছে কর্তৃপক্ষ। বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে চাষ করা হলেও ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতি প্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে খামারটি। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসছে খামারে।

আজ রবিবার আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সি মানুষেরা ভিড় জমিয়েছেন সেখানে। কেউ সেলফিতে ছবি তোলায় ব্যস্ত, কেউ করছেন ভিডিও, পরিবার নিয়ে কেউ ঘুরে দেখছেন পুরো এলাকা। মুজিবনগর সরকারি ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক জাহির হোসেন চঞ্চল  এসেছেন তার পরিবার নিয়ে, কথা হলো তার সঙ্গে। তিনি বলেন, এতো বড় সূর্যমুখীর বাগান মেহেরপুর বা আশেপাশের কোন জেলায় নেই। ফুল ফুটেছে গাছে, এটা দেখতে বেশ ভালো লাগছে। পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি, সঙ্গে রান্না করার সরঞ্জামও এনেছি। দিনব্যাপী থাকবো।

আমঝুপি ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি ‌ মকবুল হোসেন তিনি বলেন প্রকৃতির সাথে হলুদ মিলে এখানে একাকার। হলুদ রং মানুষকে সব সময়ই আকর্ষণ করে। এ যেন এক নজরকাড়া দৃশ্য দেখতে পারলাম।রায়হান সিকদার,রাফি ইসলাম, এস এস উজ্জ্বল, সাবিদ হোসেন, জাহিদ হাচানসহ আরো কয়েকজন এসেছিলাম দেখতে।

চুয়াডাঙ্গা থেকে এসেছেন  জাহাঙ্গীর হোসেন,  শাকিল,  সাদ্দাম হোসেন, সেন্টু, জাহাঙ্গীর আলম মানিক, মোছাম্মদ উম্মে সালমা সিদ্দিকের সাথি, মোছাঃ লিজা খাতুন, মোছাঃ ইসমতারাহ সহ ১৫ জন বন্ধু এসেছেন বেড়াতে। তারা জানান, ফেসবুকে দেখে এখানে আসার প্ল্যান করেছিলাম। আমরা বন্ধুরা মিলে এসেছি। ফেসবুকে যা দেখেছি বাস্তবে তার চাইতেও অনেক সুন্দর।

দর্শনার্থীদের সমাগমের কারণে সেখানে অস্থায়ী ভাবে গড়ে উঠেছে রেস্টুরেন্ট, আছে ফুসকা, চটপটি ও চায়ের দোকান। সেই সঙ্গে আছে পেশাদার ফটোগ্রাফারও। আপনি চাইলে আপনার সুন্দর ছবি তুলে দিবে তারা।

খামারের পাহারাদার আমিরুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন কয়েক হাজার লোকের সমাগম হয় এই ফুল বাগান দেখতে। ৫ জন পাহারায় থেকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ফুল ফোটার শুরু থেকেই বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষের সমাগম হয়। বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষ এখানে আসেন এক চিলতে বিনোদনের জন্য। অনেক সময় ক্ষেতের ভিতরে ঢুকে সেলফি ও ছবি তোলার কারণে ক্ষেতের ক্ষতি হচ্ছে। তারপরও বিনোদনের জন্য এখানে আসায় কিছুটা সহ্য করতে হচ্ছে।

মেহেরপুর আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারের উপ-সহকারী পরিচালক আবু তাহের সর্দার জানান, সূর্যমুখী এই বীজ শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয় বরং বিদেশেও এই বীজ রপ্তানি হয়। সূর্যমুখীর তেল ও বীজের চাহিদা পূরণের জন্য এই চাষের উদ্দ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিনোদনের জায়গা কম থাকায় এই বাগানটিতে উপচে পড়া ভিড় হচ্ছে দর্শনার্থীদের। এখানে এসে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন সূর্যমুখী চাষে।