শাহজাদপুরে নৈশপ্রহরীকে হত্যার লোমহর্ষক জবানবন্দি আসামীর

Posted on January 11, 2024

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের তালগাছি ব্রীজের পাশের আর,কে টেক্সটাইল মিলের নৈশপ্রহরী ফেরদৌস শেখ (১৮) হত্যার লোমহর্ষক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আসামী মামুন (৩২)।

পুলিশ বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) গ্রেপ্তার দেখিয়ে শাহজাদপুর চৌকি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম রব্বানির কাছে হাজির করলে সে ১৬৪ ধারায় খুনের লোমহর্ষক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এরপর বিচারক তাকে সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

কোর্ট পুলিশ এদিন দুপুরেই তাকে সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রেরণ করেন। এর আগে শাহজাদপুর থানা পুলিশ ডিএমপি পুলিশের সহযোগিতায় তাকে ঢাকার আদাবর থানার সুনিবিড় হাউজিং এলাকা থেকে আটক করে। নিহত ফেরদৌস শেখ শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের মশিপুর গুচ্ছ গ্রামের আক্কাস আলীর ছেলে।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানায় বৃহস্পতিবার সকালে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে শাহজাদপুর থানা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: কামরুজ্জামান তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ঘাতক আর,কে টেক্সটাইল মিলের প্রিন্টিং ডিজাইনার মামুন শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের ঘোড়শাল গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে। প্রিন্টিং ডিজাইনের কাজের পাশাপাশি সে ওই মিলে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজও করতো। একই মিলে চাকরির সুবাদে নিহত নৈশপ্রহরী ফেরদৌসের সাথে তার ঘনিষ্ঠ্য বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

তিনি বলেন, আসামী মামুন মাঝে মধ্যেই এ মিল থেকে রড চুরি করে বিক্রি করতো। ফেরদৌস তাকে একাধিকবার চুরি করতে বারণ করে। কিন্তু মামুন তার বারণ না শুনে ৪/৫ মাস আগে আবারও রড চুরি করে। ফেরদৌস বিষয়টি মিল মালিককে জানালে মামুনের চাকরি চলে যায়। এতে ফেরদৌসের উপর মামুন চরম ক্ষিপ্ত হয় এবং তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এরপর মামুন ঢাকায় গিয়ে একটি কন্সট্রাকশন কোম্পানিতে কাজ শুরু করে। গত ৪ জানুয়ারী সকালে মামুন ঢাকা থেকে শাহজাদপুরে এসে ফেরদৌসের সাথে দেখা করে আগের ঘটনার জন্য অনুতপ্ত হয়ে ফেরদৌসের কাছে মাফ চায়। এরপর সে রাতে ফেরদৌসের সাথে মিলের ভিতরে থাকতে চায়। সরল বিশ্বাসে ফেরদৌস ৪ ও ৫ জানুয়ারী রাতে তাকে নিয়ে একসাথে ঘুমায়। ৬ জানুয়ারী রাত সাড়ে ৩টার দিকে মামুন মিল থেকে আবারও রড চুরির চেষ্টা করলে ফেরদৌস ঘুম থেকে জেগে উঠে মামুনকে বকাঝকা করে ও ড্রয়ার থেকে লোহার সেলাই রেঞ্চ বের করে মামুনকে মারতে যায়। মামুন তার হাত থেকে সেলাই রেঞ্চ কেড়ে নিয়ে ফেরদৌসের মাথার বাম পাশে সজোরে আঘাত করে। এতে ফেরদৌস মাটিতে পড়ে যায় এবং তার মাথা থেকে রক্ত ঝড়তে থাকে। মামুন তখন কম্বল দিয়ে ফেরদৌসের রক্ত পড়া বন্ধের চেষ্টা করে। ফেরদৌস মারা গেলে পাশে থাকা কোদাল দিয়ে মিলের মেঝের বালু খুড়ে গর্ত তৈরী করে ফেরদৌসের লাশ ওই গর্তের মধ্যে পুতে রেখে মিলের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে মামুন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এরপর ফেরদৌস বাড়ি না ফেরায় তার বাবা মা তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুজি শুরু করে। না পেয়ে ৮ জানুয়ারী ফেরদৌসের বাবা আক্কাস আলী শেখ শাহজাদপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এরপর শাহজাদপুর থানা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্লু উদঘাটন করে এবং এ হত্যার সাথে জড়িত মামুনকে ডিএমপি পুলিশের সহযোগিতায় ঢাকার আদাবর থানার সুনিবিড় হাউজিং এলাকা থেকে আটক করে। এরপর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল থেকে ফেরদৌসের লাশ উদ্ধার করা হয়। সেই সাথে নিহত ফেরদৌসের লুন্ঠিত এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ঘাতক মামুনের কাছে থেকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ওই মিল থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত লোহার সেলাই রেঞ্চ, গর্ত করার কাজে ব্যবহৃত কোদাল ও রক্তমাখা কম্বল উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। পরে এ হত্যার ঘটনায় নিহত ফেরদৌসের বাবা আক্কাস আলী শেখ বাদী হয়ে শাহজাদপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তিনি আরও বলেন, নিহত ফেরদৌস তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। সে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর অভাবের কারণে ২০২১ সালে আর.কে টেক্সটাইল মিলে নৈশপ্রহরীর চাকরি নেয়। অপরদিকে আসামী মামুন ২০২০ সালে এ মিলে চাকরিতে যোগদান করে। চাকরির সুবাদে মামুন ও ফেরদৌস ঘনিষ্ঠ্য বন্ধু ছিল।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘাতক মামুনকে শাহজাদপুর চৌকি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম রব্বানির কাছে হাজির করা হলে সে ১৬৪ ধারায় খুনের লোমহর্ষক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রাদন করে। এরপর বিচারক তাকে সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। কোর্ট পুলিশ এদিন দুপুরেই তাকে সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রেরণ করেন।

এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, শাহজাদপুর থানার ওসি খায়রুল বাসার, ইন্সপেক্টর(তদন্ত) সাখাওয়াত হোসেন, ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আবু সাঈদ সহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।

এদিকে নৈশপ্রহরী ফেরদৌস হত্যার সাথে জড়িতদের ফাঁসির দাবী জানিয়েছেন, নিহতের মা বুলবুলি বেগম, বোন আরজিনা খাতুন ও এলাকাবাসি। তারা এ হত্যার প্রতিবাদে ও ঘাতকের ফাঁসির দাবীতে বুধবার দুপুরে মশিপুর গুচ্ছগ্রাম এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এছাড়া এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।'