রোজ গ্যাসের ওষুধ খেলে হতে পারে যেসব সমস্যা

Posted on January 8, 2024

অনলাইন ডেস্ক : বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার মধ্যে অন্যতম গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও অন্যান্য নানান কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে অনেকেই আছেন যারা প্রায়ই গ্যাসের ওষুধ খান। অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই প্রতিদিন সকালে এই গ্যাসের ওষুধ গ্রহণ করেন।

কিন্তু এই অভ্যাসের ফলে শরীরে কি প্রভাব পড়ছে জানেন কি-

১. যদি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সকাল-বিকেল নিয়মিত এই গ্যাসের ট্যাবলেট খাওয়া হয় তাহলে, পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ পুরোপুরি শূন্য হয়ে যেতে পারে। খাদ্যনালীতে ছোট ছোট ঘা, গ্যাস্ট্রিক আলসার, এমনকি ক্যানসারও হতে পারে।

২. সকালে ঘুম থেকে উঠেই গ্যাসের ট্যাবলেট খাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যে সকল খাবার খেলে গ্যাসের সমস্যা বেশি হয়, সেই সকল খাবার খাওয়া বেছে বেছে বন্ধ রাখতে হবে।

৩. যদি খুদা না পায়, তাহলে খাবার খাওয়ার কোনও দরকার নেই। দরকার পড়লে এক গ্লাস পানি খাওয়া যেতে পারে। যখন খাবারের প্রতি অনুভূতি আসবে তখনই খাবার খেতে হবে।

৪. এসব করার পরেও যদি গ্যাসের সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার। কনফার্ম হতে হবে গ্যাস্ট্রো ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স পজিটিভ কিনা। যদি পজিটিভ থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি যে ওষুধ দেবেন, সেগুলো খাওয়া যেতে পারে।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়
প্রতিদিনকার জীবনধারায় সামান্য পরিবর্তন এবং খাদ্যতালিকায় কিছু খাবার সংযোজন করলেই নিত্যদিনের এই সমস্যা থেকে স্বস্তি পেতে পারেন। শুধু তাই নয়, সামান্য কিছু নিয়মবিধি মেনে চললে কয়েকদিনের মধ্যেই গ্যাস বা হজমের সমস্যা চিরবিদায়। জেনে নিন হজমের সমস্যা থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক উপায়:

কলা
কলায় প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। যা প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের বিরুদ্ধে এটি প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। প্রতিদিন একটি করে কলা খেলেই আপনার গ্যাস-অম্বলের সম্ভাবনা কমবে।

তুলসি পাতা
তুলসি পাতা পাকস্থলিতে শ্লেষ্মার মতো পদার্থ উৎপাদন বাড়াতে উদ্দীপনা যোগায়। তুলসি পাতায় শীতলীকরণ এবং বায়ুনাশক উপাদান রয়েছে যা গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির কার্যকারিতা কমাতে সহায়ক। গ্যাসের সমস্যা হলেই ৫-৬টি তুলসি পাতা চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন। অথবা ৩-৪টি তুলসি পাতা সিদ্ধ করে সেই পানিতে একটু মধু মিশিয়ে খেলে চটজলদি আরাম পাবেন।

দারুচিনি
দারুচিনিতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। আধ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো এক কাপ পানিতে মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। এরপর ঠান্ডা করে পান করুন। প্রতিদিন এভাবে তিনবার দারুচিনি মিশ্রিত পানি পান করলেই আরাম পাবেন।

পুদিনা পাতা
পুদিনা পাতা অ্যাসিড নিঃসরণের গতি কমায় এবং হজম ক্ষমতা বাড়ায়। এই পাতার একটি শীতলীকরণ প্রভাবও আছে যা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সঙ্গে গলা, বুক জ্বালা কমায়। কয়েকটি পুদিনা পাতা একটি পাত্রের জলে নিয়ে ফুটিয়ে সেই জল ছেঁকে ঠান্ডা করে পান করলে উপকার।

মৌরি
তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাসিড কমিয়ে স্বস্তি দিতে পারে মৌরি। খাওয়ার পর মৌরি চিবিয়ে খেলে এই উপকার পাওয়া যায়। বদহজম এবং পেট ফাঁপার চিকিৎসায়ও এটি বেশ কার্যকর। এক গ্লাস জলে কয়েকটি মৌরি সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে তা পান করলে শরীর ঠান্ডা থাকবে এবং গ্যাস অম্বলের সম্ভাবনাও কমবে।

টক দই
টক দইয়ে থাকা ক্যালসিয়াম পাকস্থলীতে অ্যাসিড জমা হওয়া প্রতিরোধ করে। এর সঙ্গে গোলমরিচ যোগ করলে আরো ভালো ফল পাওয়া যাবে। টক দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিড হজম প্রক্রিয়াকেও শক্তিশালী করে।

লবঙ্গ
লবঙ্গ পাকস্থলীর গ্যাস উৎপাদন প্রতিরোধ করে। প্রতিদিন দুটি লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে উপকার।

ডাবের পানি
ডাবের পানি পাকস্থলীতে শ্লেষ্মা উৎপাদনে সহায়ক। যা পাকস্থলীতে অতিরিক্ত গ্যাস জমতে দেয় না। ফলে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা দূর হয়।

ঠাণ্ডা দুধ
ঠাণ্ডা দুধ খেলে পাকস্থলির গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড স্থিতিশীল হয়ে আসে। দুধে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা পাকস্থলীতে অ্যাসিড তৈরি প্রতিরোধ করে। তাই অ্যাসিডিটির সমস্যা হলেই এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ পান করুন।

শাক-সবজি
শাক-সবজি খেলে হজমের সমস্যা আপনাআপনিই অনেকটা কমে আসে। কারণ, শাক-সবজি দ্রুত হজম হয় এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। সবচেয়ে ভাল হয় যেসব সবজি কাঁচা খাওয়া যায়, সেগুলি যদি খাওয়া যায়। এতে হজমশক্তি আরও উন্নত হয়।

এলাচ
এলাচ হজম ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। এটি অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসরণের সম্ভাবনা দূর করে। গ্যাস অম্বলের সমস্যায় দুটি এলাচ গুঁড়ো করে জলে ফুটিয়ে খেলে উপকার পাবেন।

আদা কুচি
আদা কুচি করে বিট নুন দিয়ে খেলে গ্যাস,অম্বল রোধে অত্যন্ত ভাল ফল পাওয়া যায়।

গ্রিন টি
হজমশক্তি বাড়ানো এবং হজমসংক্রান্ত সমস্যা এড়াতে গ্রিন টি অতুলনীয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ গ্রিন টি হজমশক্তি বাড়ায় এবং আমাদের পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

নারিকেল
পেটের সমস্যায় যদি অহরহ ভুগে থাকেন, তা হলে সুস্থ থাকার একমাত্র ওষুধ কিন্তু নারিকেল। অনেকেরই ধারণা, নারকেল খেলে গ্যাস হয়। তাই এই ফলটি সচেতন ভাবেই এড়িয়ে চলেন কেউ কেউ। কিন্তু নারিকেল যাদের সহজেই হজম হয়, তারা এই ফলটি খেতে পারেন। উপকার পাবেন।

পেয়ারা
ভরপুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে পেয়ারায়। ফলে হজমজনিত যে কোনও সমস্যায় পেয়ারা কার্যকর। তবে পেয়ারা খেলে যদি পেট ফাঁপে, তা হলে না খাওয়াই ভাল। কিন্তু এমনিতে পেয়ারার মতো উপকারী ফল খুব কমই রয়েছে। গ্যাস-অম্বলের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পেয়ারা খেতেই পারেন।

লেবুর রস
একটি মাঝারি আকৃতির লেবু চিপে রস বের করে নিন। এরবার লেবুর রসের সাথে আধা টেবিল চামচ বেকিং সোডা ও এক কাপ পানি মিশিয়ে নিন।বেকিং সোডা ভালো করে মিশে যাওয়া পর্যন্ত নাড়ুন। এবার মিশ্রণটি খেয়ে নিন। নিয়মিত খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় আরাম পাওয়া যায়। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথায় সাথে সাথে আরাম পেতে চাইলে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খান। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যথা কমে যাবে।

জীবনধারায় পরিবর্তন
রাতে খাওয়ার অন্তত এক থেকে দু’ ঘণ্টা পর ঘুমোতে যান। পারলে খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটার অভ্যাস করুন। প্রতিদিন অন্তত আধ ঘন্টা এক্সারসাইজ, যোগা করুন।

একেবারে অনেকটা না খেয়ে অল্প পরিমাণে বার বার খাওয়ার চেষ্টা করুন। অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকবেন না। এতে গ্যাস ও অ্যাসিডিটি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। প্রতি দু’ঘন্টা অন্তর কিছু খাওয়ার চেষ্টা করুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, কারণ- স্থূলতা হজমের সমস্যা হওয়ার একটি বড় কারণ।

সারাদিনে ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করতে হবে। পারলে মাঝে মাঝে ইষৎ উষ্ণ পানি পান করতে পারেন। বাইরের অতিরিক্ত মশলাযুক্ত কিংবা তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন। দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে সবসময় মানসিকভাবে হালকা থাকার চেষ্টা করুন।