পেঁপের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন

Posted on January 15, 2023

স্বাস্থ্য ডেস্ক : বাংলাদেশের সর্বত্রই পেঁপের চাষ হয়। স্বাদে, বর্ণে, পুষ্টিতে ভরপুর অতুলনীয়। আয়ুবের্দী শাস্ত্র মতে- একটি করে পেঁপে খাও বাড়ি থেকে বদ্যি তাড়াও।

ফল, সবজি, তরকারি, সালাদ, হালুয়া, শরবত, সাবান ও প্রসাধনীসামগ্রীতে পেঁপে ব্যবহৃত হয়। জৈব পদার্থসমৃদ্ধ মাটিতে পেঁপে সহজেই চাষ করা যায়। তেমন জায়গার প্রয়োজন হয় না। দেশী উন্নত জাতের পেঁপে সবচেয়ে ভাল। লাগানোর এক বছরের মধ্যে পেঁপে ফল দিতে আরম্ভ করে, সারা বছর ফল ধরে, পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে প্রত্যেক বাড়িতে দু-তিনটি পেঁপে গাছ থাকা খুবই প্রয়োজনীয়।

পেঁপেতে পেপসিন-সদৃশ পেপাইন নামক এনজাইম থাকে, যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। গোশত ও ডালকে তাড়াতাড়ি সিদ্ধ করার জন্য পেঁপে ব্যবহৃত হয়। যকৃতের কার্যক্ষমতা বাড়াতে পেঁপের জুড়ি নেই। যারা বদহজমে ভোগেন তাদের জন্য পেঁপে মহৌষধ, পেঁপেতে আরো রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’। পেঁপে দৈনন্দিন চাহিদার ২৪ শতাংশ পূরণ করে। এ ছাড়া ফাইবার, চিনি, ভিটামিন, পটাশিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে।

শিশুর ব্রেনের গঠন : পেঁপে ফলিয়েটের একটি ভাল উৎস, এই ফলিয়েটই মানুষের ভ্রণের ব্রেন গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। গর্ভবতী প্রসূতি মা নিয়মিত পেঁপে খেলে শিশুর ব্রেনের গঠন উন্নত হবে।

ভিটামিনের অন্যতম উৎস : পেঁপের মধ্যে ম্যাগনেশিয়াম, কপার, প্যান্থাটনিক এসিড, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, আলফা এবং বিটা ক্যারেটিন, জিঅ্যান্থান, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও লাইকোপেন আছে।

তারুণ্য ধরে রাখতে : পেঁপের অ্যা›টি অক্সিডেন্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমায়, স্থূলতা হ্রাস করে এবং মৃত্যুর হার কমায় দীর্ঘ জীবনের জন্য নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

হাঁপানি দূর করে : গবেষণায় দেখা গেছে, শ্বাসকষ্টের জটিলতার জন্য অপুষ্টির সম্পর্ক রয়েছে। নিয়মিত পেঁপে খেলে হাঁপানি রোগের উপশম হয়, পেঁপের বিটা-ক্যারোটিন একটি, শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা শরীরকে শক্তিশালী করে রোগ প্রতিরোধ ও বৃদ্ধি করে।ব্রোকলি, ফুটি, কুমড়া ও গাজরে পেঁপের মতো গুণাবলি রয়েছে।

কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : পেঁপে রয়েছে পর্যাপ্ত ফাইবার যা উচ্চমাত্রায় কোষ্ঠকাঠিন্যকে তাড়ায়। পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখে এবং কোলন ক্যান্সরের ক্যালসিয়াম নিঃসরণ কমিয়ে দেয়।

হাড়ের স্বাস্থ্য : পেঁপের ভিটামিন ‘কে’ হাড়ের ম্যাটিক্সের প্রোটিনের পরিবর্তন হিসেবে কাজ করে। হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম শোষণ করে এবং প্র¯্রাবে ক্যালসিয়াম নিঃসরণ কমিয়ে দেয়।

ডায়াবেটিস : পেঁপেতে খুব কম চিনি থাকে, যে কারণে এটি ডায়াবেটিসের জন্য ভালো। আধা পাকা পেঁপে ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়াতে এটি ডায়াবেটিসের জন্য খুবই ভালো। পেঁপে ভিটামিন ‘এ’ একটি চমৎকার উৎস। ১০৯৪ আইইউ/১০০ গ্রাম এবং ফেভিনয়েডস যেমন- ক্যারোটিন লুটেইন, জিঅ্যাস্থনিন এবং ক্রিপটো জান্থনিন, ভিটামিন ‘এ’ স্বাস্থ্যবান মিউকাস মেমব্রেন, চামড়া ও দৃষ্টিশক্তি ঠিক করে। ফুসফুস ও মুখের গহ্বরের ক্যান্সার রোধ করে। পেঁপেতে বি-কমপ্লেক্স আছে,যেমন-ফলিক, পাইরিডক্সিন ভিটামিন-বি-৬, রিফেফোভিন ও থায়ামিন যা মেটাবলিজমে সাহয্য করে।

পেঁপের ফেস ২৫ গ্রাম/১০০ গ্রাম ও ক্যালসিয়াম থাকে। ভিটামিন ‘কে’ শরীরের হার্টরেট ও প্রেসার নিয়ন্ত্রন করে। এই বীজে ক্ষতের বিরুদ্ধে কাজ করা উপাদান রয়েছে। রিউম্যাটিক এবং আর্থ্রাইটিস রোগের জন্য পেঁপে খুব উপযোগী। পেঁপের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রিউম্যাটিক ও আর্থ্রাইটিস রোগ প্রতিহত করে।

বয়স কমায় : ভিটামিন-সি,ভিটামিন-ই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। পাকা পেঁপের চামড়া সুরক্ষা ও বয়সকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পেঁপে খেলে টাক মাথায় চুল গজায়, ভিটামিন ‘এ’ চুল গজাতে সাহয্য করে।

রক্তের শর্করা কমাতে : পেঁপের ফুল পরিষ্কার করে ধুয়ে হালকা ভেজে খেলে শরীরে রক্তের গ্লুকোজ কমাতে কাজ করে। নিয়মিত খেলে বাড়তি ইনসুলিনের প্রয়োজন হয় না।

ড. সালমা লাইজু, অতিরিক্ত উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নেত্রকোনা।

আরও পড়ুন:

জেনে নিন, শীতকালে নারিকেল তেল জমে কেন?

যেভাবে বুঝবেন কিডনিতে পাথর জমেছে? জেনে নিন এর লক্ষণগুলো

ঘরোয়া পদ্ধতিতে কমান কোলেস্টেরল!