সেলিম রেজা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: যমুনা বিধৌত সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নদী ও খালের জোয়ার ভাটার পানিতে খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি। কম পুঁজিতে বেশি লাভজনক হওয়ায় ভাসমান এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। ফলে দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে খাঁচায় মাছচাষের চাষিদের সংখ্যা। এতে করে উপজেলায় বেকারত্ব দূরীকরণের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে অনেকের। মাছ চাষের নতুন এই পদ্ধতি দেখে স্থানীয় বেকার যুবক ও মৎস্যজীবীরা যমুনা নদীতে মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
চৌহালীর হতদরিদ্র মানুষের দারিদ্রতা দূর করে খাঁচায় মাছ চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তুলতে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ, খাঁচা ও মাছ চাষে সহযোগিতা করছে স্থানীয় মৎস্য দপ্তর । মৎস্য দপ্তর বলছে, চৌহালীতে খাঁচায় মাছ চাষে চাষিরা আগ্রহী হওয়ায় খাঁচায় মাছ চাষিদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এতে উপজেলায় বেকারত্ব দূরীকরণের পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে মাছের উৎপাদন।
চৌহালী সদরের চর খাষকাউলিয়া, স্থলচর , যমুনা নদী ও ৭ উপজেলার বিভিন্ন খালের মুক্ত জলাশয়ে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাত্র ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় তৈরি করা খাঁচায় তারা চাষ করছেন তেলাপিয়া, পাঙাশ, সরপুঁটি ও কার্প জাতীয় মাছ। প্রতিটি খাঁচায় হাজার থেকে ১২শ’ মাছ চাষ করার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। খাঁচায় চাষ করা মাছের স্বাদ নদীর মাছের মতো। স্রোতে ভেসে মুক্ত পানির খাবার খেয়ে বেড়ে ওঠা খাঁচার মাছ চাষির জন্য বেশ লাভজনক। এই মাছ খেতেও খুব সুস্বাদু। এ কারণে চৌহালীর পুকুরের পরিবর্তে যমুনা নদী ও খালে খাঁচা ফেলে মাছ চাষ শুরু করেছে উপজেলা সদরের ১ শতাধিক চাষি।
ড্রামের উপর লোহার পাইপ, ও জাল দিয়ে তৈরি প্রতিটি খাঁচায় ছাড়া হয় মাছের পোনা। বিক্রির আগ পর্যন্ত প্রতিটি খাঁচায় মাছের খাবারসহ খরচ দাঁড়ায় ৩০ হাজার টাকা। পোনা ছাড়ার ৩ মাস পর মাছের ওজনের উপর ভিত্তি করে প্রতিটি খাঁচা থেকে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ পাচ্ছেন তারা। এতে খাঁচা প্রতি তাদের বছরে লাভ হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। তবে সম্প্রতি কয়েক দফায় মাছের খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মৎস্য চাষিদের। খাদ্যের দাম বৃদ্ধির তুলনায় মাছের দাম কম থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
প্রথমবারের খাঁচায় মাছ চাষ করে লাভের মুখ দেখা খাষকাউলিয়া ইউনিয়নের ছমের জালাল বলেন, একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ভাসমান মাছ চাষ করার জন্য একটি খাঁচা পাই। বর্তমানে ৫টি মাছ চাষের জন্য খাঁচা রয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে ৩ মাস পর পর মাছ বিক্রি করে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ থাকে। মাছ সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এই মাছের বেশ চাহিদা থাকায় এখন অনেকে ভাসমান মাছ চাষ করে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এই মাছ চাষের পাশাপাশি অন্য কাজ করা যায়। সেক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিশ্রম নেই। এখন আর বেকারত্ব জীবন কাটানো লাগছে না এলাকার বেকার যুবকের।
একই এলাকার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, বেকারত্ব জীবন থেকে কর্মসংস্থান হয়েছে খাঁচায় মাছ চাষের মাধ্যমে। কম পুঁজিতে অধিক লাভ হওয়ায় খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করি। এখানে নদীর প্রবহমান পানিকে কাজে লাগিয়ে ভাসমান পদ্ধতি খাঁচায় মাছ চাষ করা হয়। ফলে মাছ দ্রুত বাড়ে ও সুস্বাদু হয়। প্রথমে একটি দিয়ে শুরু করেছি এখন খাঁচার সংখ্যা বাড়িয়েছি।
তবে খাবারে দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষিরা কিছুটা দুশ্চিন্তার আছে বলে জানান রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, দাম বাড়তে থাকলে আমাদের মাছ চাষ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
যুব উন্নয়ন অফিসার মো: ফজলুল রহমান বলেন, বেকার যুবকদের বিনামূল্যে খাঁচা, মাছের পোনা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করছে। এর মাধ্যমে অনেক বেকার যুবক এখন কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সিরাজগঞ্জের চৌহালীর যমুনার ভাঙনে প্রতি বছর অনেক পরিবার গৃহহীন হয়। এই গৃহহীন পরিবারের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের জন্য সরকারিভাবে সহায়তায় তাদের আমরা সহযোগিতা করছি। আমরা যারা খাঁচায় মাছ চাষ করতে আগ্রহী তাদের প্রত্যেককে খাঁচা, ড্রাম,পাইপসহ মাছের পোনার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এই খাঁচায় মাছ চাষ করার ফলে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি বেকার যুবকরাও এখন খাঁচায় মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে উপজেলায় প্রায় ১ শতাধিক চাষি খাঁচায় মাছ চাষ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই মাছ অনেক সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা রয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: ফরিদ হোসেন ও জৈষ্ঠ ক্ষেত্র সহকারী শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, ভাসমান পদ্ধতিতে মাছ চাষে মাছের কোনো রোগ-বালাই না হওয়ায় এবং অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় নতুন করে অনেকে বেকার যুবক মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছে। খাঁচায় মাছ চাষের এই সম্ভাবনাকে টিকিয়ে রাখতে মৎস্য বিভাগ থেকে তাদের বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি সরকারিভাবে নানা ধরনের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
যমুনা নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে স্বাবলম্বী, বাড়ছে আগ্রহ https://corporatesangbad.com/5689/ |