ফের যমুনা লাইফের সিইও হতে বিতর্কিত কামরুলের আইডিআরএ আবেদন

Posted on December 21, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক : অযোগ্য ও বিতর্কিত কামরুল হাসান খোন্দকারকে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে নিয়োগ দিতে আবারও অনুমোদনের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বরাবর আবেদন করেছে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

গত ২ ডিসেম্বর কোম্পানিটির ৩৫তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে এ আবেদন করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা ২০১২ এর ৩(ক)’র বিধান অনুসারে, কোন ব্যক্তির কোন বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ লাভের জন্য কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে অন্যূন ৩ বছর মেয়াদী স্নাতক ও এক বছর মেয়াদী স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক ও সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে।

ফলে মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগের অনুমোদন লাভের জন্য কামরুল হাসান খোন্দকারের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কর্ম অভিজ্ঞতা কোনটিই নেই। বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা ২০১২ অনুসারে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কর্ম অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ না করলে ওই ব্যক্তি মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ লাভের অযোগ্য।

কিন্তু কামরুল হাসান খোন্দকারের শিক্ষা সনদে দেখা যায়, তিনি ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে তৃতীয় বিভাগে স্নাতক পাস করেন। পরে ২০০২ সালে ভারতের ডিমড ইউনিভার্সিটি অব লক্ষ্মৌ থেকে ১ বছর মেয়াদে এক্সিকিউটিভ এমবিএ করেন তিনি। তবে বিদেশি এই ডিগ্রির মান ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে নিশ্চিত নয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।

শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতাই নয় আইন অনুসারে কর্ম অভিজ্ঞতাতেও অযোগ্য কামরুল। বীমা মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা, ২০১২ এর ৩(খ)’র বিধান অনুসারে, ইতোপূর্বে কোন বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বা উহার অব্যবহিত নিম্নপদে অন্যূন ৩ বছর কর্ম অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অথচ কর্ম অভিজ্ঞতার সনদগুলোর তথ্য অনুসারে কামরুলে মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পরের পদে ৩ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা নেই।

এ বিষয়ে কামরুল হাসান জানান, আইডিআরএ চাহিদা মোতাবেক আমার অর্জিত এমবিএ ডিগ্রীর সমমান ও সমতাকরণ প্রত্যয়নের জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাথে যোগাযোগ করি। ইউজিসি শুধুমাত্র বিদেশে সশরীরে অবস্থান করে ডিগ্রী অর্জন করলে অর্জিত ডিগ্রীর সমমান প্রত্যয়ন করে। কিন্তু দূরশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত ডিগ্রীর সমমান ইউজিসি প্রত্যয়ন করে না বলে আমাকে মৌখিকভাবে অবহিত করে মর্মে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে তিনি তার স্বাক্ষরিত (স্মারক ন.-জেএলআইসিএল/প্রকা/বোএ/২০২২-১১৭) একটি চিঠি আইডিআরএ বরাবর প্রেরণ করে।

জানা যায়, বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ সংক্রান্ত বিধিমালায় শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর বাধ্যবাধকতা আছে। সংশোধিত বিধিমালায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে তৃতীয় শ্রেণি নিষিদ্ধ। অথচ তৃতীয় শ্রেণিতে স্নাতক পাশ এবং ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনলাইনে সম্পন্ন এমবিএর মান নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের স্বীকৃতি না থাকলেও কামরুল হাসান খোন্দকার যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে দীর্ঘদিন ধরে সিইও পদে চাকরি করে আসছেন।

২০২২ সালের ২১ শে মার্চ যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বর্তমান মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামরুল হাসানের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কর্ম অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ না করেই তাকে সিইও পদে নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছে আইডিআরএ। এ অনুমোদন দেন আইডিআরএর তৎকালীন চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। কামরুলের নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে মোশারফ হোসেন পদত্যাগে বাধ্য হন। গত ৩০ নভেম্বর ২০২৩ কামরুল হাসানের নিয়োগের মেয়াদ অতিক্রান্ত হয়। যদিও বীমা সংশ্লিষ্টরা ধরেই নিয়েছিলো মোশারফের পদত্যাগের পর নতুন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী এই অনৈতিক নিয়োগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় হতাশ বীমা সংশ্লিষ্টরা।

গত ৭ নভেম্বর যমুনা লাইফের চেয়ারম্যান কামরুল হাসানকে আবার সিইও নিয়োগ অনুমোদন নবায়নের জন্য আইডিআরএ বরাবর আবেদন করে।

এ বিষয়ে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বীমা কোম্পানির শীর্ষ পদ। এই পদে নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতার বিষয়ে সুষ্পষ্ট বিধিমালা রয়েছে। সে অনুসারে যোগ্যতা যাচাই বাছাই করে মূখ্য নির্বাহী নিয়োগের পূর্ব অনুমোদন দেয়ার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার। তবে শীর্ষ এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক যাচাইয়ের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানির।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের শুরুতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর উদ্যোগে বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা-২০১২ সংশোধন করা হয়েছে। ২০১২ সালে প্রণয়ন করা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ (২০১৩ সালে গেজেট আকারে প্রকাশিত) প্রবিধান অনুযায়ী, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের জন্য নিয়োগ প্রার্থীকে ইতিপূর্বে কোনো বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বা এর অব্যবহিত নিম্নপদ অর্থাৎ অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ন্যূনমত ৩ বছরের অভিজ্ঞতাসহ বীমা পেশায় কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞ হতে হবে। কিন্তু ২০২৩ সালে সংশোধিত প্রবিধানমালায় এসব অভিজ্ঞতার শর্ত শিথিল করা হয়। সংশোধিত বিধিমালায় মুখ্য নির্বাহী বা অব্যবহিত নিম্নপদের জন্য অভিজ্ঞতা দুই বছর এবং সংশ্লিষ্ট বীমা ব্যবসার অভিজ্ঞতা ১২ বছর করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিদ্যমান প্রবিধানে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়সসীমা ৪০ বছরের যে শর্ত রয়েছে সেটিও বাতিল করা হয়েছে। সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৭ বছরের শর্ত বহাল রয়েছে।

সংশোধিত প্রবিধানমালায় মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্তে বলা হয়েছে, কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হইতে কমপক্ষে ২য় শ্রেণির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অথবা চার বৎসর মেয়াদী স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রী থাকতে হবে। গ্রেডিং পদ্ধতির ফলাফলের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা প্রযোজ্য হইবে। তবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীধারীদের বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন হইতে সমতাকরণ সার্টিফিকেট দাখিল করিতে হইবে।