ঝিনাইদহ হানাদার মুক্ত দিবস ৬ ডিসেম্বর

Posted on December 5, 2023

আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: আজ বুধবার ঝিনাইদহ হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ হানাদারমুক্ত হয়। বাংলার আকাশে ওড়ে লাল সবুজের স্বাধীন পতাকা। চালু হয় ঝিনাইদহে অসামরিক প্রশাসন। স্বাধীনতা যুদ্ধে জেলায় প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ সংঘটিত হয় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালীতে। এছাড়া শৈলকুৃপা থানা আক্রমন, কামান্না, আলফাপুর ও আবাইপুরের যুদ্ধ আজও স্মৃুতিতে অম্লান।

ঝিনাইদহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মকবুল হোসেন জানান, ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল যশোর ক্যান্টোনমেন্ট থেকে ভারী অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী ঝিনাইদহ দখলের উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসতে থাকলে বিষয়খালী ব্রীজের এপার থেকে মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে প্রবাল বাধা দেয়। প্রায় তিন ঘন্টা যুদ্ধের পর তারা পিছু হঠে যায়। ১৬ এপ্রিল হানাদার বাহিনী আবারো বিষয়খালী বেগবতী নদীর তীরে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল বাধার সম্মুখিন হয়। এখানে প্রায় ৬ ঘন্টা তুমুল যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ব্রীজের পাশেই তাদের গণ কবর দেওয়া হয়। এ থেকেই জেলায় ছড়িয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধ। বিভিন্ন স্থানে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে। সে সময় উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের মধ্যে ছিল বিষয়খালী যুদ্ধ, গাড়াগঞ্জ যুদ্ধ, শৈলকুৃপা থানা আক্রমন, কামান্না, আলফাপুর ও আবাইপুরের যুদ্ধ। ঝিনাইদহে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুত্রে জানা গেছে, পহেলা থেকে ষোল এপ্রিল বিষয়খালী যুদ্ধে ৩৫ জন, ১৪ অক্টোবর আবাইপুর যুদ্ধে ৪১ জন, ২৬ নভেম্বর কামান্না যুদ্ধে ২৭ জনসহ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝিনাইদহ জেলায় ২৭৬ জন মুক্তিযুদ্ধা শহীদ হন। এর মধ্যে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে এই জেলায় দুই জন। তাঁরা হলেন খোর্দখালিশপুরের বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ও সাগান্না গ্রামের বীর প্রতিক সিরাজুল ইসলাম। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আনেককে বিভিন্ন স্থানে গণকবর দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে আনেকের নাম ঠিকানা আজও মেলেনি।

৬ ডিসেম্বরের আগে ৩ ডিসেম্বর মহেশপুর, ৪ ডিসেম্বর কোটচাঁদপুর, ৫ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ এবং সর্বশেষ ১১ ডিসেম্বর শৈলকুপা উপজেলা শত্রæমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন ঝিনাইদহ আওয়ামী সেচ্ছাসেবক বাহিনীর জেলা কমান্ডার প্রয়াত আমির হোসেন মালিতা তার লেখা গ্রস্থে উল্লেখ করেন, “৫ ডিসেম্বর মধ্যরাতে মিত্র বাহিনী ঝিনাইদহের হলিধানী বাজারে এসে খবরা খবর নিতে আসেন। তারপর তারা ৬ ডিসম্বর ভোরে ঝিনাইদহ শহরে প্রবেশ করেন।

মিত্র বাহীনির নেতৃত্বে ছিলেন, কর্ণেল বাহেলে ও লেঃ কর্ণেল পিকে দাস গুপ্ত। ৬ ডিসেম্বর সকাল ৭টায় ঝিনাইদহের ইউনিট কমান্ডার হিসেবে তিনিসহ ইউনিয়ন কমান্ডার রজব আলী, বাকুয়া গ্রামের মরহুম মনিরুল ইসলাম, নারিকেল বাড়িয়ার বুলু মিয়া, গাবলা গ্রামের মকছেদ আলীসহ অনেকে মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানিয়ে দ্রæত ঝিনাইদহে বেসামরিক প্রশাসন চালু করার প্রস্তাব দেন। তখনও সারা দেশে শামরিক শাসন চলছে। বাংলাদেশের প্রথম ঝিনাইদহ জেলায় বেসামরিক প্রশাসন চালুর ফলে পাকিমুক্ত হয় ঝিনাইদহ”। এদিকে আজ হানাদারমুক্ত দিবস পালন উপলক্ষ্যে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিস্তারিত কর্মসুচি গ্রহন করেছে।