বোস্টনে হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের উপর প্রভাব শীর্ষক সেমিনার

Posted on December 5, 2023

ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক: যুদ্ধের সময় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনে 'হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের উপর প্রভাব' শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

স্থানীয় সময় রবিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ক্যামব্রিজের দারুল কাবাব রেস্তোঁরায় অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারের আয়োজন করেন নিউ ইংল্যান্ড বাংলাদেশি আমেরিকান ফাউন্ডেশন (নিবাফ)। এতে অংশ নেন ইসরায়েলি এবং আরবের তরুণ সমাজকর্মীদের দ্বারা পরিচালিত 'শারাকা' নামক একটি বেসরকারি সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।

শারাকার সমাজকর্মীরা গত ২৫ নভেম্বরের থেকে ৫ ডিসেম্বরের প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গজ্রাজ্যের আটলান্টা, ইলিনয়স অঙ্গরাজ্যের শিকাগো এবং ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনে যুদ্ধের সময় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে 'হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের উপর প্রভাব' বিষয়ক সেমিনার করেছে।

বোস্টনের সেমিনারে অংশ নিয়ে শারাকা'র সমাজকর্মিরা বলেন, আমাদের সমাজের মধ্যে শান্তি, আস্থা এবং সহযোগিতার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা একটি জরুরি বিষয়। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা একটি প্রত্যাশা করি
এই অঞ্চলের সমস্ত জাতির জন্য আরও প্রতিশ্রুতিশীল ভবিষ্যত গড়তে সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করবো। মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার আশেপাশের প্রতিনিধিদের সাথে একটি শারাকা ভাষী প্রতিনিধি দল করবে
এই অঞ্চলের বর্তমান উত্তেজনা ও হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলেন শারাকা'র প্রতিনিধি দল। শারাকা'র সেমিনারগুলোর লক্ষ্য হল হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ বিষয়ে অবহিত করা, সামাজিক মেরুকরণ কমানো এবং এই কঠিন ইস্যুতে বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সংলাপকে উৎসাহিত করা। তাছাড়া কথোপকথনকে উদ্দীপিত করে এমন ক্ষতিকারক এবং উসকানিমূলক পৌরাণিক কাহিনীগুলি দূর করতে চায় প্রতিনিধিদল।

নিউ ইংল্যান্ড বাংলাদেশি আমেরিকান ফাউন্ডেশন (নিবাফ)এর শিক্ষা বিষয়ক পরিচালক সাবরিনা ফারাহ'র সঞ্চালনায় সেমিনারে শারাকা'র প্রতিনিধিদলের নেতারা হামাস-ইসরাইল যুদ্ধে তাদের জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করে বক্তব্য দেন, শারাকা'র পরিচালক ড. আহমেদ খুজাই (বাহরাইন), শারাকা'র নির্বাহী পরিচালক ড্যান ফেফারম্যান (ইসরায়েল), সোস্যাল মিডিয়াকর্মি লয় শরীফ (সংযুক্ত আরব আমিরাত), শারাকা'র উপসাগরীয় বিষয়ক পরিচালক ফাতেমা আল হারবি (বাহরাইন), লেখক ও গবেষক ডালিয়া জিয়াদা (মিশর), মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ ইউসেফ ইলাজহারী (মরোক্কো), শারাকা'র শান্তি বিষয়ক উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য রাওয়ান ওসমান, বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা ও সমাজসেবক সৈয়দ নুরুজ্জামান, নিবাফ-এর অন্যতম সদস্য খন্দকার মাসুদ, উপদেষ্টা ডা নিলীমা সিংহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ চৌধুরী, মেডফোর্ড ইসলামিক সেন্টারের কর্মকর্তা হুমায়ুন মোর্শেদ ও রাইজেল মাসুদ। নিবাফ-এর উপদেষ্টা ড. ভ্যান হা, কমিউনিটি নেতা জানে আলম, বিজনি'র সভাপতি ইমন আহমে্‌ রাজনীতিবিদ টিপু চৌধুরীসহ বোস্টনের বাংলাদেশি কমুনিটির বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ উক্ত সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

শারাকা'র পরিচালক ড. আহমেদ খুজাই বলেন, ইসরাইল-সৌদি আরব শান্তির নামে বিভিন্ন সময়ে কূটনীতিকরা নানা ধরনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করে থাকেন, তবে তা বাস্তবায়ন করা জনগণের উপর নির্ভর করে।
তিনি বলেন, এটি উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলির এগিয়ে যাওয়ার কৌশল। ছোট দেশগুলো শুরু করবে, তারপর বড় দেশগুলো এগিয়ে যাবে সৌদি আরবের নেতৃত্বে।”

যেখানে সৌদি আরব হল পবিত্র শহর মক্কা, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি, ইসরায়েল বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তিনটি ধর্মের পবিত্র স্থানগুলির আবাসস্থল যেখানে প্রায় দুই মিলিয়ন আরব ইজরায়েলকে বাড়িতে ডাকে। যদিও দুই দেশের মধ্যে শান্তি চুক্তি আগে কখনো হয়নি, তবে এখানকার কর্মীরা আশাবাদী।

নির্বাহী পরিচালক ড্যান ফেফারম্যান বলেন আমাদের অতীতের দ্বন্দ্ব বা অতীতের সংঘাতের একতরফা উপলব্ধির দ্বারা পরিচালিত হতে পারে না, যা এই অঞ্চলটিকে পিছিয়ে রাখে। তাই আমরা শান্তির পক্ষে ওকালতি করে ইসরায়েলি, বাহরাইনি, ইহুদি এবং মুসলমানদের মধ্যে সেতু তৈরি করতে চাই। এজন্য শারাকা বিশ্বব্যাপী শান্তির সমাবেশ করছে।

ফাতেমা আল হারবি বলেন, আমি ওয়েস্টার্ন ওয়াল এবং আল আকসার মতো সম্প্রদায় এবং ধর্মীয় স্থান দেখতে গিয়েছিলাম। আমার একমাত্র লক্ষ্য ছিল কৌতূহল। এই কৌতূহলটি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সম্ভব হয়েছিল। যখন ইসরাইল, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন আব্রাহাম অ্যাকর্ডস নামে একটি দ্বিপাক্ষিক স্বাভাবিককরণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে মরক্কোতে যোগ দেই। আমাদের একে অপরের সাথে সহযোগিতা করা দরকার বলে মনে করেন ফাতেমা আল হারবি।

আল হারবি যখন প্রথম ইসরায়েল থেকে ফিরে আসেন, তখন তিনি ব্যক্তিগত এবং অনলাইন উভয় ক্ষেত্রেই প্রচুর সমালোচিত হন। কিন্তু যখন তিনি ২০২১ সালে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে দেশে ফিরে আসেন, তখন দেশে ফিরে অনুভূতি আরও উষ্ণ ছিল।

তিনি বলেন, এক বছর আগে আমি নিজের দ্বারা যে ঘৃণা পেয়েছি তা আমরা কেউই পাইনি। এটি অঞ্চলে আমাদের মতো প্রকল্পগুলির কারণে। পূর্বকল্পিত ধারণা ভঙ্গ করা শারাকার মূল নীতিগুলির মধ্যে একটি। ফেফারম্যান তার ভ্রমণ জুড়ে যে অজ্ঞতা দেখেছেন তার কথা বলেছেন। আমি ইস্রায়েলে এমন লোকদের চিনি যারা, সমস্ত আরব আমাদের ঘৃণা করে বলে উল্লেখ করে ফেফারম্যান বলেন অন্যান্য লোকেরা তাদের নিজস্ব সংবাদ দেখে ইস্রায়েল সম্পর্কে খারাপ ধারণা পেতে পারেন।