ডিসিসিআই সেমিনারে কোম্পানিতে সিএস নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব

Posted on November 18, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক : শনিবার (১৮ নভেম্বর ২০২৩) ঢাকায় ডিসিসিআই এর উদ্যোগে তাদের হল রুমে নতুন কোম্পানি আইনের উপর "Reform of the Companies Act-1994" একটি উম্মুক্ত সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার মোঃ সামীর সাত্তার এবং কোম্পানি আইন রিফর্ম এর উপর মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবি ও কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। তিনি তার উপস্থাপনায় ২০২০ সালের সংশোধনী, নতুন কোম্পানি আইনের প্রয়োজনীয়তা এবং তার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা সেমিনারে তুলে ধরেন।

ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম তার প্রস্তাবনায় বলেন, কোম্পানি আইনকে যুগোপযোগী করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ইন্ডিয়ান কোম্পানি আইন ২০১৩ এর আলোকে বাংলাদেশেও নতুন কোম্পানি আইন করে সেখানে মার্জার-একুইজিশন ও এডিআর অর্ন্তভুক্তি, জরিমানা সংক্রান্ত নতুন সিডিউল সংযোজন, অডিটরদের দায়বদ্ধতা ও অবসরে যাওয়ার বিধান যুক্ত করা, কোম্পানির বিলোপসাধন প্রক্রিয়া সহযোগিকরন, কোম্পানি কোর্টের সংখ্যা বাড়ানো, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের শেয়ার মালিকানায় অংশগ্রহণ সহজ ও স্পষ্ঠিকরণ সহ সকল কোম্পানিতে কোম্পানি সেক্রেটারি নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেন।

তিনি বলেন, ইন্ডিয়ান কোম্পানি আইন ২০১৩ এর আদলে বাংলাদেশের কোম্পানি আইনেও সকল কোম্পানিতে কোম্পানি সেক্রেটারি নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা, কোম্পানি সেক্রেটারি নিয়োগের ক্ষেত্রে তার নির্ধারিত যোগ্যতা নির্ধারণ এবং আইসিএসবিকে কোম্পানি আইনে অর্ন্তভুক্তি ও চার্টার্ড সেক্রেটারিদের পেশাগত কাজের স্বীকৃতি আরোপ, কোম্পানি সেক্রেটারির ভূমিকা ও দায়-দায়িত্ব সহ অবসরে যাওয়ার বিধান কোম্পানি আইনে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ থাকার প্রস্তাব করেন।

তিনি আরো বলেন, লিস্টেড কোম্পানির মতো প্রত্যেক নন লিস্টেড পাবলিক কোম্পানিতেও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিধান বাধ্যতামূলক করা এবং কোম্পানিতে পরিচালকদের ভূমিকা ও দায়িত্ব-কর্তব্য পরিস্কারভাবে কোম্পানি আইনে উল্লেখ থাকা দরকার। রিলেটেড পার্টি ট্রানজেকশনের ক্ষেত্রে কোম্পানি আইনে বিস্তারিতভাবে নির্দেশনা আসতে হবে।

সেমিনারের বিশেষ অতিথি ও আলোচক হিসেবে ইউনিলিভারের চেয়ারম্যান মোঃ জাবেদ আকতার মূল উপস্থাপনার উপর আলোচনায় বলেন, কোম্পানি আইনে ফিন্যান্সিয়াল অডিটের মতো প্রত্যেকে কোম্পানিতে সেক্রেটারিয়াল কমপ্লায়েন্স অডিট বাধ্যতামূলক হওয়া দরকার।

ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল্টম্যান সেমিনারে বলেন, বিনিয়োগকারিদের স্বার্থ সংরক্ষনের জন্যই বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান কোম্পানি আইন ২০১৩ এর আদলে নতুন কোম্পানি আইন হওয়া প্রয়োজন। কারণ বর্তমানে বিশ্বে ইন্ডিয়ান কোম্পানি আইন ২০১৩ অনেক বেশি আধুনিক ও যুগোপযোগী বলে প্রতিয়মান হয়েছে।

সেমিনারে আইসিএবির প্রেসিডেন্ট মোঃ শাহাদাত হোসেন এফসিএ কোম্পানি আইনে সংশোধনী এনে এখনিই এফআরসিকে কোম্পানি আইনে অন্তভূক্তি করার প্রস্তাব রাখেন।

আইসিএসবির প্রেসিডেন্ট মোঃ আসাদউল্লাহ এফসিএস বলেন, বাংলাদেশের কোম্পানি আইন ১৯৯৪ বৃটিশ আমলের কোম্পানি আইন ১৯১৩ হুবহু প্রবর্তন করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের কোম্পানি আইন আদতে একশ বছরের বেশি পুরনো যা বর্তমানে অচল। সে কারণে তিনি ২০১১ সালে বর্তমান সরকারের সময় ইন্ডিয়ান কোম্পানি আইন ২০১৩ এর আদলে নতুন কোম্পানি আইন করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তার বাস্তবায়ন চান। তিনি কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অ্যাক্ট ২০১০ কোম্পানি আইনে অর্ন্তভুক্তির জন্য জোর তাগিদ দেন। তিনি বলেন, কোম্পানি আইনের সংশোধনী এনে বর্তমান সময়ে প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয়। ফলে ২০১১ সালে নতুন কোম্পানি আইন করার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তার বাস্তবায়ন হওয়ার দরকার এবং বাংলাদেশে নতুন কোম্পানি আইন হতে হবে। যে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালকে নতুন কোম্পানি আইন প্রবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

আইসিএমএবির প্রেসিডন্টে মোঃ আব্দুর রহমান খান এফসিএমএ, আইসিএবি, আইসিএমএবি ও আইসিএসবি থেকে লিখিত প্রস্তাবনা নিয়ে সে মোতাবেক কোম্পানি আইনের সংশোধনী আনার প্রস্তাব দেন। তিনি আরো বলেন, তাড়াহুড়ো করে এমন কোন সংশোধনী যেন না হয় যাতে করে কোম্পানি আইন নিয়ে কাজ করতে কোন প্রফেশনের অসুবিধা হয় এবং পেশাগত বিরোধ সৃষ্টি হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রণালয়কে খেয়াল রাখতে হবে।

উক্ত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন আরজেএসসির নিবন্ধক মোঃ আব্দুস সামাদ আল আজাদ। তিনি আরজেএসসিতে কোম্পানি আইন প্রয়োগে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং বলেন, আরজেএসসি এখনো পুরোপুরি ডিজিটাল অবস্থায় যেতে পারেনি। আরজেএসসির পরিসেবা যুগোপযোগী করতে কোম্পানি আইনে আরো অনেক সংশোধনী আনা প্রয়োজন।

সেমিনারে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে আইসিএসবির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরুল আলম এফসিএস, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মোঃ জাকির হোসেন এবং সদস্য এস আব্দুর রশিদ এফসিএস যথাক্রমে বলেন, কোম্পানি আইনে চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অ্যাক্ট ২০১০ অর্ন্তভূক্তি সময়ের দাবি, চার্টার্ড সেক্রেটারিদের জন্য কোম্পানি আইনে সিএস এবং সেক্রেটারিয়াল অডিট অর্ন্তভূক্তি বিশেষ প্রয়োজন এবং উচ্চ আদালতকর্তৃক নতুন কোম্পানি আইন প্রণয়নে যে ১৪ দফা সুপারিশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষকে অনুরোধ করা হয়েছে।

সেমিনারে উপস্থিত বিভিন্ন অংশিজনের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধান অতিথি বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি সরাসরি কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার বিগত ১৫ বছর ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন আইন ও সংশ্লিষ্ট দফতরকে যুগোপযোগী করে উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ইতি মধ্যেই আমরা ২০২০ সালে কোম্পানি আইনের কিছু সংশোধনী এনেছি। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন কারণে এই মূহুর্তে নতুন কোন কোম্পানি আইন করা সম্ভব নয়। ফলে আমরা কোম্পানি আইন সংশোধন নিয়ে আরেক দফা কাজ করে যাচ্ছি যা বর্তমানে কেবিনেট হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। খুব শীঘ্রই আপনারা নতুন কিছু জানতে পারবেন। নির্বাচনের পরে সরকার নতুন কোম্পানি আইন নিয়ে কাজ করলে তখন দেখা যাবে কি করা যায়।

কোম্পানির আইনের উপর অনুষ্ঠিত সেমিনারে সংশ্লিষ্ঠ অংশীজনদের দুই শতাধিক সদস্যের উপস্থিতিতে ডিসিসিআই এর উদ্যোগে আয়োজিত মধ্যাহৃভোজের মধ্য দিয়ে সেমিনারের সমাপ্তি ঘটে। এখন দেখার বিষয় বাণিজ্য মন্ত্রনালয় সেমিনারে প্রস্তাবিত বিষয়গুলোর উপর কোম্পানি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কতটুকু গুরুত্ত্ব দেয়।