হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফিলিপ স্নালকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্ঘুম অভিযান চলছে

Posted on December 17, 2025

ময়মনসিংহ ব্যুরো: ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ভুটিয়াপাড়া সীমান্তবর্তী এলাকার ফিলিপ স্নাল নামের অন্যতম মানবপাচারকারীকে ধরতে হন্যে হয়ে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারী ফয়সাল-আলমগীর সীমান্ত পাড়ি দিয়েছে না কি দেশেই আছে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে ফিলিপকে ধরলেই। তবে ইতোমধ্যে ফিলিপের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে দুই সহযোগীকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ শরীফুল ইসলাম জানান, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার গাজীরভিটা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ভুটিয়াপাড়া এলাকা থেকে ওই দুই সহযোগীকে আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলেন- হালুয়াঘাট উপজেলার ভুটিয়াপাড়া এলাকার ক্লেমেন রিছিলের ছেলে সঞ্জয় চিসিম (২৫) ও একই উপজেলার বিড়ইডাকুনী এলাকার চার্লস রিছিলের ছেলে সিবিরণ দিও (৩৫)।

জানা গেছে, সঞ্জয় চিসিম ও সিবিরণ দিও সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধ পথে লোক পারাপার চক্রের সদস্য। তারা হাদির ওপর হামলাকারী ব্যক্তিকে হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে পার করতে পারে, এমন সন্দেহে তাদের আটক করা হয়েছে।

এদিকে পাঁচদিন পার হতে চললেও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর হামলাকারী ফয়সাল-আলমগীরের হদিস পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে গুঞ্জন ঘটনার দিন শুক্রবার রাতেই ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত ব্যবহার ভারতে পালিয়ে গেছে তারা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মিরপুর থেকে প্রাইভেট কারযোগে গাজীপুর হয়ে ময়মনসিংহে আসেন। এরপর সেই প্রাইভেটকার থেকে নেমে তারা অন্য আরেকটি প্রাইভেট কারে হালুয়াঘাট উপজেলার ধারাবাজার সংলগ্ন মুন ফিলিং স্টেশন পাম্পের পাশে নিয়ে যায়। পরে গত শুক্রবার রাতে প্রাইভেটকার থামিয়ে ফিলিপ স্নাল নামে এক ব্যক্তির মোটরসাইকেলে করে ভুটিপড়া সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যায় দুই ব্যক্তিকে। তবে ফিলিং স্টেশন পাশে নির্জন এলাকা হওয়ায় সিসিটিভি ফুটেজ তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ধারণা করা হচ্ছে, সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে স্টেশনের পাশে নামিয়ে মোটরসাইকেল তুলে নিয়ে যায়। পরদিন শনিবার থেকেই ফিলিপকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছে বিজিবি ও পুলিশ। তবে নিরুদ্দেশ ফিলিপ। কিন্তু মোটরসাইকেল চালক কে ছিলেন, তা এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে আলমগীর ও ফয়সাল ভারতে গিয়েছে নাকি দেশেই রয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি।

জানা গেছে, ভারত সীমান্ত লাগুয়া গাজীর ভিটা ইউনিয়নের বুটিয়াপাড়া দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় ফিলিপের বাড়িতে। বাড়ি থেকেই দেখা যায় ভারতের সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া। এলাকায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের যে কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে, এই কাঁটাতারের বেড়ার নিচে কালভার্ট রয়েছে এবং এখানে বড়ো বড়ো সুড়ঙ্গ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সুড়ঙ্গ পথেই পাচার করা হয়েছে ঢাকায় হাদির ওপর হামলাকারী আলমগীর এবং ফয়সালকে।

স্থানীয়রা জানায়, ফিলিপের মাধ্যমে দুইজনকে ভারতে পাচারের কথা এখন সবার মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। গত বুধবার ফিলিপ এলাকায় দেখা গেলেও পর আর তাকে এলাকায় দেখা যায়নি। তার বাড়ি থেকে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ২০০ গজের মধ্যে। ফিলিপ ভারতে আসা যাওয়া করতেন। তিনি নালিতাবাড়ী উপজেলার বারমারি শ্বশুর বাড়ি ও হালুয়াঘাটের ভুটিপাড়া বাবার বাড়ি দুই জায়গাতেই থাকতেন তিনি। তবে এই এলাকা দিয়ে ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের অনেক লোকজন ভারতে পালিয়েছে এমন আলোচনা এলাকায় রয়েছে।

ফিলিপ স্নালের ছোট বোন সালচি সনাল বলেন, ‘অসুস্থ মাকে দেখতে শুক্রবার সকালে বাড়িতে আসলেও বিকেলেই চলে যায় ফিলিপ স্নাল। এলাকায় বিল্লাল মেম্বারের সঙ্গে জমি নিয়ে শত্রুতার কারণে আমার ভাইকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে পুলিশকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই সঞ্জয় চিসিমক ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। তাকে ঘর থেকে তুলে পুলিশ জিজ্ঞাসা করার পর তাকে কেন ধরে নিয়ে গেছে জানি না। সে কোনো অপরাধ করলে কী বাড়িতে থাকত। সে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়।’

সার্বিক বিষয়ে ময়মনসিংহ বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হালুয়াঘাটের ধারা বাজার থেকে যে মোটরসাইকেলে করে অপরাধীদের সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা সন্দেহ করা হচ্ছে। সেই মোটরসাইকেলটি বুটিয়াপাড়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপরাধীরা কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে পালিয়ে গেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যাবে ফিলিপকে ধরলেই। কীভাবে যোগাযোগ করা হয়েছে, কত টাকা লেনদেন হয়েছে, ওপারে কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, আদৌ পাচার হয়েছে কি না, তা জানা যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুটিং মিশনে অংশ নেওয়া দুজনসহ মানবপাচারে অংশ নেওয়া ফিলিপকে গ্রেফতারে অভিযানের পাশাপাশি সীমান্তে তৎপরতা আরও জোরদার করেছে বিজিবি।’

এর আগে, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই ব্যক্তির একজন চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) হাদিকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ‍উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের নেওয়া হয়েছে।

এদিকে হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন ৬ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, বর্ডার দিয়ে মানুষ পাচারকারী চক্রের দু'জন এবং অভিযুক্ত ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও অন্য এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।