স্পোর্টস ডেস্ক : বিশ্বকাপের আরও একটা সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা, প্রতিপক্ষ সেই অস্ট্রেলিয়া- যাদের বিপক্ষে ২৪ বছর আগে ম্যাচ টাই করে ফাইনালে উঠতে পারেনি ‘চোকার’ দক্ষিণ আফ্রিকা।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যুগের পর যুগ আক্ষেপকে সঙ্গী করে বেড়াচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা, সময়ের শীর্ষে থাকা ব্যাটার, ইতিহাসের সেরা সব ফাস্ট বোলার ও দুর্দান্ত সব অলরাউন্ডারদের নিয়েও দক্ষিণ আফ্রিকার পুরুষ ক্রিকেট দলটি এখনও পর্যন্ত কোনও বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে পারেনি। হোক সেটা ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি।
সালটা হোক ১৯৯৯ কিংবা ২০১৫- দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা সেমিফাইনালে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন, প্রতিপক্ষরা সান্ত্বনা দিচ্ছেন, এটা যেন বিশ্বকাপের সবচেয়ে পরিচিত একটা দৃশ্য। তবে এবারের সমীকরণ খানিকটা ভিন্ন।
‘প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বয়ে যাওয়া মানসিক আঘাত’
দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা তেমন আলোচিত ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব নন, যাকে বলে ‘আন্ডাররেটেড’। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মতো ক্রিকেট দলের শক্তিমত্তার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে খুব বেশি মানুষ শিরোপার দাবিদার মনে করেনি।
তার ওপর এবারের বিশ্বকাপের আগে আনরিখ নরকিয়ার চোট দক্ষিণ আফ্রিকাকে একটা ধাক্কা দিয়েছিল।এই নরকিয়া ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
দক্ষিণ আফ্রিকার এই দলটাই আবার গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হেরে। দক্ষিণ আফ্রিকার কেবল নেদারল্যান্ডসের সাথে জিতলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত ছিল।
গার্ডিয়ানের ক্রিকেট বিশ্লেষক স্যাম প্যারির মতে, এটা একটা ‘প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বয়ে যাওয়া মানসিক আঘাত’। তবে এবারের প্রজন্মটা আলাদা বলে মনে করছেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কলকাতায় সেমিফাইনালের আগে তিনি বলেন, “এটা দল হিসেবে প্রথম সেমিফাইনাল আমাদের। আমি আত্মবিশ্বাসী। অবশ্যই নার্ভাসনেস থাকবে, এটা খেলারই অংশ। কিন্তু আমি মনে করি বিশ্বকাপের অন্য যেকোনও ম্যাচের সাথে এই ম্যাচের ক্রিকেটীয় কোনও পার্থক্য নেই”।
দক্ষিণ আফ্রিকার অশ্রুসিক্ত সেমিফাইনালসমূহ
২০১৯ বিশ্বকাপে ১০ দলের মধ্যে সাত নম্বরে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১৫ বিশ্বকাপে বৃষ্টিবিঘ্নিত এক ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের গ্রান্ট ইলিয়ট ডেল স্টেইনের বলে ছক্কা মেরে নিজের দলকে ফাইনালে তোলেন, ওই ম্যাচের শেষের দৃশ্যগুলো ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসেরই করুণ দৃশ্যগুলোর একটি, ডেল স্টেইন মাটিতে বসে কাদঁছিলেন, ডি ভিলিয়ার্স জানেন না তার কী করা উচিৎ, ফ্যাফ ডু প্লেসিরও চোখে অশ্রু টেলিভিশন স্ক্রিনেই স্পষ্ট।
সেবার দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ছিলেন হাশিম আমলা, ফ্যাফ ডু প্লেসি, এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো ক্রিকেটাররা।ডি ভিলিয়ার্স একটা রান আউট ও একটা ক্যাচ মিস করেন, তিনি ছিলেন সেই বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এবং একই সাথে সেরা পারফর্মার।
ইএসপিএন ক্রিকইনফোর ধারাবিবরণীতে তখন লেখা হয়েছিল, ১৯৯২ সালের ভুত এখনও পিছু ছাড়েনি দক্ষিণ আফ্রিকার।
কী হয়েছিল ১৯৯২ সালে?
রঙিন পোশাকে প্রথম বিশ্বকাপ ছিল ১৯৯২ সালে, সেবারই প্রথম সাদা বল ব্যবহার করা হয় ওয়ানডে বিশ্বকাপে, ওই বিশ্বকাপেই ২২ বছর নির্বাসনের পর ক্রিকেটে ফেরে দক্ষিণ আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড ২৫২ রান তুলেছিল আগে ব্যাট করে।
বোলিং করার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা অনেক সময়ক্ষেপণ করেন, যে কারণে তাদের ওপর জরিমানাও করা হয়েছিল, কিন্তু এই জমিানার চেয়েও বড় শাস্তি দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা সেই ম্যাচে পেয়েছিলেন।
সিডনিতে বৃষ্টির কারণে ৪৫ ওভারে নেমে এসেছিল ম্যাচটা, এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার একটা পর্যায়ে ১৩ বলে ২২ রান প্রয়োজন ছিল, তখনই নামে বৃষ্টি। ১২ মিনিটের মতো বৃষ্টি হয় তখন, বৃষ্টি থামার পর নতুন টার্গেট ঘোষণা দেয়া হয় ৭ বলে ২২ রান, এরপর আবার বলা হয় ১ বলে ২২ রান নিতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার।
তখন এই বৃষ্টি আইন নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছিল, অনেকেই এই আইনকে উপহাস বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
ডোনাল্ডের পা থমকে গিয়েছিল
১৯৯৯ সালে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে দলকে সেমিফাইনালে তোলেন দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার ল্যান্স ক্লুজনার, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে ২১৪ রান তাড়া করার সময়ও ক্লুজনার ১৬ বলে ৩১ রান তোলেন।
যুক্তরাজ্যের এজবাস্টনে ম্যাচ অবস্থায় তিন বলে এক রান নিতে গিয়ে অপর প্রান্তে থাকা অ্যালান ডোনাল্ড আর শেষ পর্যন্ত দৌড় শেষ করতে পারেননি।
সেই ম্যাচের স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় ডোনাল্ডকে, বাংলাদেশের বর্তমান বোলিং কোচ ডোনাল্ড এই ম্যাচ নিয়ে বলেন, “আমি যখন ড্রেসিংরুমে ফিরি মনে হয়েছে কেউ মারা গেছেন। আমি সরাসরি ফিজিওর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম, স্টিভ ওয়া ও ম্যাকগ্রা তখন রুমে ঢোকেন এবং স্টিভ ওয়া আমাকে বলেন এটা নিয়ে ভেবো না”। “আমি সেটা বারবার দেখেছি, অনেকবার দেখেছি, এরচেয়ে বাজে ভুল আর হয় না”।
এরপরের বিশ্বকাপ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরের মাটিতে সেবার বিশ্বকাপের সুপার সিক্সেই উঠতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা, এবারও বৃষ্টির কারণে হিসেব গড়মিল করে ফেলেছিল দলটি। শ্রীলঙ্কার করা ২৬৮ রানের টার্গেট বৃষ্টির পরে দাঁড়ায় ৪৫ ওভারে ২৩০ রান।
২২৯ রানে থাকা অবস্থায় এই ডারবানে আবারও বৃষ্টি নামে এবং ম্যাচ অফিসিয়ালরা বলেন এখন খেলা শেষ হলে ম্যাচ টাই হবে। মুত্তিয়া মুরালিধরনের করা শেষ বলটিতে মার্ক বাউচার তেমন রান নেয়ার চেষ্টা করেননি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার তখনও জয়ের জন্য এক রান দরকার ছিল।
অস্ট্রেলিয়ার দলে বিশ্বকাপ জয়ী ছয়জন
দক্ষিণ আফ্রিকার ২০২৩ বিশ্বকাপ দলে কুইন্টন ডি কক ও ডেভিড মিলার আছেন যারা ২০১৫ সালের হৃদয় বিদারক মুহূর্তে মাঠে ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার দলে অন্তত পাঁচজনের আজ মাঠে নামার কথা, যারা ২০১৫ বিশ্বকাপের ট্রফিজয়ী একাদশে ছিলেন- ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজলউড।
প্যাট কামিন্সও ছিলেন কিন্তু তিনি ২০১৫ সালে তেমন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। সেই কামিন্স এখন অস্ট্রেলিয়ার দলনেতা।
কামিন্স বলেছেন, “আমাদের অনেকেই সেই দলে ছিলেন আমরা একটু ভাগ্যবান যে এই ধরনের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা অবগত। কিন্তু আপনি জানেন ইতিহাস অনেক সময় চাপে ফেলে। আমাদের কাজটা ঠিকঠাক করতে হবে”। সূত্র-বিবিসি।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
যেভাবে বারবার সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা https://corporatesangbad.com/52471/ |