নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ১০-১৫ জনের একটি সশস্ত্র ডাকাতদল বিয়ে বাড়িতে ঢুকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন লুট করেছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে ডাকাতদের ফেলে যাওয়া একটি দেশীয় তৈরি এলজি বন্দুক ও তিন রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
তবে এই ঘটনায় কর্ণফুলী ওসি মুহাম্মদ শরীফ ও তাঁর পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার ঝড় উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে—ডাকাতদের সঙ্গে মাত্র ১০ ফুট দূরত্বে অবস্থান করলেও পুলিশ ইচ্ছে করে ধাওয়া দেয়নি।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (১১ অক্টোবর) রাত দেড়টার দিকে কর্ণফুলীর বড়উঠান ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শাহমীরপুর এলাকার মোহাম্মদ মিয়ার নতুন বাড়িতে।
বাড়ির নববর মো. আরিফুল ইসলাম এবং বড় ভাই মো. আলমগীর জানান, আনোয়ারার জয়কালী বাজারের তাহিন কনভেনশন সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে রাত দেড়টার দিকে তাঁরা বাড়িতে ফেরেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘ডিবি পুলিশ’ পরিচয়ে ৮ জন সাদা-আকাশি পোশাক পরা লোক অস্ত্র হাতে তল্লাশি চালানোর কথা বলে ঘরে প্রবেশ করে। তারা পরিবারের নারী-পুরুষদের অস্ত্রের মুখে কক্ষে আলাদা করে আটকে রেখে আলমারি ও লকার ভেঙে প্রায় ১১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, দুই লাখ টাকা ও দুটি স্মার্টফোন লুট করে নেয়।
আলমগীর আরো বলেন, “ঘটনার সময় পুলিশ আমাদের বাড়ির কাছেই ছিল। ডাকাতদের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থায়ও তারা কিছু করেনি। ডাকাতরা অস্ত্র তাক করলে পুলিশ পিছিয়ে যায়। আমরা নিজেরাই প্রাইভেট কারে তাদের পিছু নিই, কিন্তু তারা শান্তিরহাট হয়ে পালিয়ে যায়।”
স্থানীয়দের ধারণা, বিয়ের অনুষ্ঠানে নজরদারির জন্য আগেই কয়েকজন ডাকাত বিয়ের কমিউনিটি সেন্টারে উপস্থিত ছিল। যারা সাদা গেঞ্জি আর জিন্স প্যান্ট পরিহিত ছিলো। অনুষ্ঠানের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করলে তাদের পরিচয় পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন বাড়ির লোকজনও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
জানা গেছে, বর আরিফুল ইসলাম ইসলামী ব্যাংক পিএলসিতে কর্মরত, আর বাড়ির বড় ছেলে আলমগীর কাতার প্রবাসী।
ঘটনার রাতে পুলিশ সক্রিয় না থাকলেও রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে কর্ণফুলী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী ও কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে ওসি সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সুকৌশলে স্থান ত্যাগ করেন।
এসি মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আইনি দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডাকাতদের ফেলে যাওয়া একটি দেশীয় তৈরি এলজি বন্দুক ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, বিস্তারিত পরে জানানো হবে।”
ঘটনার সময় পুলিশ মাত্র কয়েক গজ দূরত্বে থেকেও ডাকাতদলকে ধরতে উদ্যোগ না নেওয়ায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। এ ধরনের উদাসীনতা শুধু আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা নয়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়েও গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে। পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ, এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও নিয়মিত টহল বাড়ানো এখন জরুরি—না হলে ‘ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি’র মতো ভয়াবহ অপরাধ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে।


