৭ ও ৮ এ যদি হয় ২৬-এ কেন নয়! দায়ী কে?

Posted on September 22, 2025

মো: মিজানুর রহমান, এফসিএস : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত সকল কোম্পানির জন্য ক্রেডিট রেটিং রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করেছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে ৩৮৫টি কোম্পানি রয়েছে যাদের প্রত্যেকটিকে প্রতি বছর অর্থ বছর শেষ হবার ৬ মাসের মধ্যে ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি দ্বারা রেটিং করাতে হবে এবং ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশনকে পিএসআই হিসেবে প্রকাশ করার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৮টি ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। যে ৮টি প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট রেটিং নিয়ে কাজ করছে সেগুলো হল- 1. Credit Rating Information and Services Limited (CRISL), 2. Credit Rating Agency Bangladesh (CRAB), 3. National Credit Rating Agency (NCR), 4. Emerging Credit Rating Limited (ECRL), 5. Alpha Rating Agency, 6. Waso Credit Rating, 7. Argus Rating Agency, 8. Bangladesh Rating Agency.

উল্লেখিত, এই ৮টি ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি প্রতি বছর শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত ৩৮৫টি কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন করে। এখানে উল্লেখ্য যে, এই ৮টি ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত কোম্পানি ছাড়াও আরো দুই শতাধিক প্রাইভেট, পাবলিক কোম্পানিকে রেটিং করে থাকে। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশে ৮টি ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি লিস্টেড ননলিস্টেড মিলে প্রায় পাঁচ শতাধিক কোম্পানিকে প্রতি বছর রেটিং করছে। আপাতঃ দৃষ্টিতে মাত্র ৮টি ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি দ্বারা পাঁচ শতাধিক কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন করা অসম্ভব মনে হলেও এটাই বাস্তবতা এবং এরাই প্রতি বছর ক্রেডিট রেটিংয়ের কাজ সম্পন্ন করছে।

এর আগে ১০ মার্চ ২০২১ প্রতিটি তালিকাভূক্ত কোম্পানিতে এজিএম ও ইজিএমে এজেন্ডা ভিত্তিক ভোটাভুটি নিরীক্ষণের বিষয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার নিয়োগের নিদের্শনা দেয়া হয়েছে যারা এজিএম বা ইজিএম এজেন্ডা ভিত্তিক ভোটাভুটি ও পুরো এজিএম সম্পর্কে স্বাধীনভাবে রিপোর্ট করে থাকে। প্রতিটি কোম্পানি যেন এজিএম ও ইজিএম শেষ হওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বিএসইসিকে রিপোর্ট করতে পারে যে, হাইব্রিড বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত এজিএম বা ইজিএমে ভোটাভুটি আইনানুগভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যেখানে সিএ/সিএমএ/সিএস তিনটি কর্পোরেট প্রফেশনে যারা প্র্যাকটিসিং ফার্ম পরিচালনা করছেন তাদের সবাইকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার নিয়োগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে প্রায় দুই শতাধিক সিএ ফার্ম, শতাধিক সিএমএ ফার্ম এবং ২৬টি সিএস ফার্ম ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার হিসেবে কাজ করছে।

১০ই মার্চ ২০২১ এর নোটিফিকেশনে প্রতিটি তালিকাভূক্ত কোম্পানিতে এজিএম ও ইজিএমে এজেন্ডাভিত্তিক ভোটাভুটি করার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটর্ফমের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে বিগত ২০২১ সাল থেকে ৩৮৫টি লিস্টেট কোম্পানির এজিএম ও ইজিএমে ৭টি আইটি কোম্পানি তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সবগুলো কোম্পানিকে আইটি সার্পোট দিয়ে যাচ্ছে।

যে ৭টি আইটি ফার্ম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এজিএম ও ইজিএম করার সার্ভিস দিচ্ছে সেগুলো হল-১. স্যাটকম আইটি, ২. ইউক্যাস, ৩. কমজগৎ আইটি, ৪. এবিসি আইটি সার্ভিসেস, ৫. লাক্সারি আইটি, ৬. জ্যানোস আইটি ও ৭. হাইসফ্ট আইটি।

বিগত ৪/৫ বছর যাবৎ এই ৭টি আইটি ফার্ম পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানিতে এজিএম ও ইজিএমে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সার্ভিস দিচ্ছে এবং এতে কারো কোন অসুবিধা হচ্ছে না। কিন্তু ২৬টি সিএস প্র্যাকটিসিং ফার্ম থাকা সত্ত্বেও বিএসইসি লিস্টেট কোম্পানির এজিএম ও ইজিএমে শুধুমাত্র চার্টার্ড সেক্রেটারিদেরকে না রেখে সিএ ও সিএমএ ফার্মকে দিয়েও স্ক্রুটিনাইজারের কাজ করাচ্ছেন। ফলে সিএস প্রফেশনের কাজের ক্ষেত্র সীমিতই থেকে যাচ্ছে, আর এক্ষেত্রে আইসিএসবির কাউন্সিলেরও এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেই।

অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ৩ জুন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কতৃর্ক ইস্যুকৃত কর্পোরেট গর্ভনেন্স কোড ২০১৮ তে কর্পোরেট গর্ভনেন্স সার্টিফিকেট ইস্যু করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে নিদের্শনা দিয়েছে। যেখানে সিএ/সিএমএ/সিএস তিনটি কর্পোরেট প্রফেশনে যারা প্র্যাকটিসিং ফার্ম পরিচালনা করছেন তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ বর্তমানে প্রায় দুই শতাধিক সিএ ফার্ম, শতাধিক সিএমএ ফার্ম এবং ২৬টি সিএস ফার্ম কর্পোরেট গর্ভনেন্স সার্টিফিকেট ইস্যু করার কাজ করছে।

এ ২৬টি সিএস প্র্যাকটিসিং ফার্ম এর মধ্যে কর্পোরেট গর্ভনেন্স সার্টিফিকেট দিচ্ছে তারা হল- 1. Al-Muqtadir Associates, 2. Itrat Husain & Associates, 3. M. Mohashin & Co., 4. Suraiya Parveen & Associates, 5. SARashid & Associates, 6. Jasmin & Associates, 7. Mohammmadullah & Associates, 8. Mohammad Sanaullah & Associates, 9. Haruner Rashid & Associates, 10. Hadisul Alam & Associates, 11. Salahuddin & Associates, 12. Uttam & Associates, 13. MNA Associates, 14. GK & Co., 15. ASM & Associates, 16. Raja Haque & Associates, 17. A.H. Bari & Associates, 18. Reza & Associates, 19. Mohammed Zafar & Co., 20. Azizur Rahman & Associates, 21. M.A. Habib & Co., 22. M Nuruzzaman & Associates, and 23. Quazi Sabnam & Associates.। এছাড়া অন্য ফার্মগুলো লাইসেন্স রিনিউ না করায় তারা প্র্যাকটিস করতে পারছে না।

এখানে লক্ষণীয় যে, মাত্র ৭টি থার্ড পার্টি আইটি ফার্ম বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠান এজিএম ও ইজিএমে ৩৮৫টি কোম্পানিতে ডিজিটালি এজিএম করার সার্ভিস দিচ্ছে ও ৮টি ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি তিন শতাধিক লিস্টেট কোম্পানি ও দুই শতাধিক ননলিস্টেড কোম্পানিকে প্রতি বছর রেটিং করছে। অথচ ২৬টি চার্টার্ড সেক্রেটারিজ প্র্যাকটিসিং ফার্ম থাকা সত্ত্বেও বিএসইসি কমপ্লায়েন্স অডিট ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার হিসেবে কাজ করার জন্য শুধুমাত্র চার্টার্ড সেক্রেটারিজ বা সিএস প্র্যাকটিসিং ফার্মকে না রেখে তিনটি কর্পোরেট প্রফেশন এর সকল প্র্যাকটিসিং ফার্মকেই কাজ করার সুযোগ রেখেছে। ফলে যেনতেন ভাবে হচ্ছে মানহীন কমপ্লায়েন্স অডিট বা কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেশনের কাজ, যা কমপ্লায়েন্স অডিটের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করতে পারে।

আইসিএসবি কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চার্টার্ড সেক্রেটারিজ এক্ট ২০১০ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি স্বাধীন কর্পোরেট পেশা, অথ্যাৎ কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে গর্ভনেন্স প্রফেশনাল হিসেবে কাজ করার জন্য যোগ্য কর্পোরেট পেশাদার তৈরি করাই সিএস ইনস্টিটিউটের মূল লক্ষ্য। মূলত সিএ, সিএমএ যেমন একাউন্টিং প্রফেশন তেমনি সিএস হল গর্ভনেন্স প্রফেশন যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি প্রতিষ্ঠিত পেশা। বিএসইসি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কমপ্লায়েন্স অডিট ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আইসিএসবি সদস্যভূক্ত সিএস প্র্যাকটিসিং ফার্মকে দিয়ে মানসম্মত কর্পোরেট গুডগভর্নেন্স প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগকে সফল করতে পারত, কিন্তু তারা তা করেনি।

সুতরাং বিএসইসির কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড, ২০১৮ এর সেকশন ৯-এর সাব সেকশন ১-এ সিজিসি সার্টিফিকেশন দেয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সিএস প্রফেশনকে রেখে সংশোধন হওয়া দরকার। এবং একইভাবে ১০/৩/২১ তারিখে দেয়া বিএসইসি কর্তৃক দেওয়া ডাইরেক্টিভ এর সেকশন ৯ সংশোধন হওয়া দরকার যেন শুধুমাত্র সিএস প্রফেশনই এজিএম ও ইজিএমে ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার হিসেবে কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে বিএসইসির সাথে বসে সমস্যা সমাধানের জন্য আইসিএসবির কাউন্সিলকেই দৃশ্যমান সুদূর পদক্ষেপ নিতে হবে, যেন খুব শীঘ্রই ফাইন্যান্সিয়াল অডিট যেমন আইসিএবি রেগুলেট করছে তেমনি কমপ্লায়েন্স অডিট রেগুলেট করবে আইসিএসবি এমনটাই প্রত্যাশা।

শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর এজিএমে থার্ড পার্টি আইটি সার্পোট দেওয়া, ক্রেডিট রেটিং রির্পোট কমপ্লায়েন্স অডিটের তুলনায় অনেক বেশি বড় একটি ক্ষেত্র এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। বিএসইসি তালিকাভুক্ত ৮টি ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি এবং ৭টি আইটি ফার্ম দ্বারা যদি ৩৮৫ টি লিস্টেড কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং ও এজিএমে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আইটি সার্পোট দেওয়া সম্ভব হয় তাহলে এই ৩৮৫টি কোম্পানির কমপ্লায়েন্স অডিট ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজারের সার্টিফিকেশন এর কাজও ২৬টি সিএস প্রাকটিসিং ফার্ম দিয়ে কেন সম্ভব নয়, ভেবে দেখবেন স্যার ?